Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন করতে সরকার দ্রুত বিচারের সাজা বাড়াচ্ছে -মির্জা ফখরুল

| প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : দ্রুত বিচার আইনে সাজা বাড়ানোর পদক্ষেপকে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার সরকারী উদ্যোগ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এখন নির্বাচন-টির্বাচন কথা উঠেছে, এই সময় যদি দ্রুত বিচার আইনে আমাদের বিরোধীদলের সব নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করে সাজা দিয়ে দেয়া যায়, তাহলে তারা আবার সেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একা একা নির্বাচন করতে যাবে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ডক্টর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেন। মন্ত্রীসভায় গত সোমবার সংশোধিত আইনের খসড়া পাস হওয়ার পরদিন বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে ড্যাব আয়োজিত আলোচনার বক্তব্যে এ প্রতিক্রিয়া  ও শঙ্কার কথা জানান তিনি।
দ্রæত বিচার আইনে ন্যুনতম সাজার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার কী করেছে দেখেন, গতকাল মন্ত্রীসভায় পাস করিয়েছে দ্রæত বিচার আইন। তারা ওই আইনে সাজার মেয়াদ ২ থেকে বাড়িয়ে ৭ বছর করেছে। কেন করেছে?
তিনি বলেন, এখন নির্বাচন-টির্বাচন কথা উঠেছে, এই সময় যদি দ্রুত বিচার আইনে আমাদের বিরোধীদলের সব নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করে সাজা দিয়ে দেয়া যায়, তাহলে তারা আবার সেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো একা একা নির্বাচন করতে যাবে।
ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, এবার সেটা হবে না। এদেশের মানুষ আপনাদের ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করতে দেবে না। এ দেশের মানুষ তার অধিকার আদায় করবে,  ভোটের অধিকার আদায় করবে। সত্যিকার অর্থেই তারা জনগণের একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।
আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কতটুকু রাজনৈতিকভাবে  দেউলিয়া হয়ে গেলে, কতটুকু জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে ভয় পায়। তারা বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন করতে চায় না, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করতে চায় না।
তিনি বলেন, নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কেন তুলল? কারণ তারা জানে যে, ওই রকম সরকার থাকলে কোনো দিন তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না। সেজন্য এই সরকার সেই পদ্ধতি বাতিল করেছে।
আলোচনায় মির্জা ফখরল অভিযোগ করেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছে। তিনি বলেন, এই সরকার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যে সম্ভাবনা, সেই সম্ভাবনাকে সুচিন্তিতভাবে পরিকল্পিতভাবে একটা পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করবার জন্য তারা কাজ করছে।
তিনি বলেন, আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন, ধারাবাহিকভাবে যতগুলো বাজেট এসেছে, প্রত্যেকটা বাজেটে দেখবেন, কতগুলো খাতকে তারা একেবারে গুরুত্বই দেয় নাই। শিক্ষাখাতের খারাপ অবস্থা, স্বাস্থ্যখাতের খারাপ অবস্থা, দুরবস্থা সমস্ত জায়গায়।
অর্থনীতির সাবেক শিক্ষক মির্জা ফখরুল বলেন, গত কয়েক বছরে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়েনি,  কোনো গ্রোথ নেই, বেসরকারি বিনিয়োগ নিচের দিকে। পাবলিক সেক্টরে যে এলটমেন্ট দেবে, সেই টাকার ৮০ শতাংশই তারা চুরি করে নেয়। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে একেবারে ফোকলা করে  ফেলেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়েছে। স্টক মার্কেট শেষ করে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নিজেরা তাদের শরীরকে অনেক মোটা করে ফেলেছে। গর্দান মোটা করে  ফেলেছে। টাকা-পয়সা যে কামাচ্ছে, তা দেশেও রাখছে না। পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন, কিছুদিন আগে যেসব অর্থ বিদেশে পাচার করছে। কারা করছে এগুলো? সব আওয়ামী লীগের লোকেরা।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গি দমন অভিযানে হতাহত নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাবা-মায়েরা তাদের যুবক ছেলেদের বাইরে যেতে দেয় না। কখন তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বলবে সে জঙ্গি; ক্রসফায়ারে দিয়ে দেবে। প্রত্যেকদিন পত্রিকায় দেখবেন ক্রসফায়ারে একটা-দুইটা-তিনটা করে মরছে।
তিনি বলেন, আবার নাটকও করে ভালো ভালো। চারিদিক দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে দেয় এক-দেড় মাইল এলাকা। বলে যে এখানে এনকাউন্টার হচ্ছে। এনকাউন্টারে কয়েকটা পুলিশ আহতও হয়। আজকেও হয়েছে কয়েকজন পুলিশ। এই ধরণের ঘটনা ঘটছে।
ফখরুল বলেন, এসব বললে আবার পুলিশ বাহিনী মনক্ষুন্ন হয় যে আমরা তাদেরকে প্রশ্ন করছি।  কেন প্রশ্ন করব না? আপনারা তো একটা জঙ্গিকে এখন পর্যন্ত বিচারের সামনে নিয়ে আসতে পারলেন না। দেখেন আর গুলি করে মেরে ফেলেন আপনাদের ভাষায়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাহলে তদন্তটা হচ্ছে কোথায়, বিচারটা হচ্ছে কোথায়? এসমস্ত নাটক  বোঝে মানুষ। মানুষকে এত বোকা মনে করার কোনো কারণ নেই।
ড্যাবের সহসভাপতি অধ্যাপক এমএ কুদ্দুসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আবদুল মান্নান মিয়া, ড্যাবের মহাসচিব অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক মোস্তাক রহিম স্বপন, অধ্যাপক এসএম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, ডা. আতিকুর রহমান ছাড়াও বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দলটির নেতা কাদের গনি চৌধুরী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ