Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯ আশ্বিন ১৪৩১, ২০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

জাতীয় রাজনীতিতে ব্যাপক অবদান নরসিংদীর জনগণ ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত

| প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী : মন্ত্রী সভায় রদবদলের খবরে নরসিংদীর আওয়ামী রাজনীতিতে নতুন করে চাঙ্গা ভাব দেখা দিয়েছে। রদ-বদলের দ্বান্ধিকতায় কে নতুন মন্ত্রী হচ্ছেন আর কে মন্ত্রীসভা থেকে বাদ পড়ছেন তা নিয়ে প্রকাশিত পত্র পত্রিকার খবরে আওয়ামী লীগে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক কৌতুহলের জন্ম নিয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের হুতাশা ব্যক্ত করে বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত দুই পিরিয়ডে অনেক হাইব্রিড নেতা মন্ত্রী হয়েছেন। পক্ষান্তরে অনেক ত্যাগী নেতাই মন্ত্রীত্বের স্বাদ পাননি। ত্যাগী নেতারা শুধু ত্যাগই করে যাচ্ছে। আর এই ফল ভোগ করছেন হাইব্রিড নেতারা। নরসিংদী জেলার ৫টি নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদের দাবী হচ্ছে নরসিংদী থেকে আরো অন্তত:এক জন ত্যাগী নেতাকে মন্ত্রী সভায় অন্তর্ভূক্তকরণ। তাদের যৌক্তিকতা হচ্ছে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পূর্বাপর সময়ে জাতীয় রাজনীতিতে নরসিংদীর জনগনের ব্যাপক অবদান রয়েছে, রয়েছে ত্যাগ, তিতিক্ষা। সে অনুযায়ী জাতীয় রাজনীতিতে নরসিংদীর গুরুত্ব অনেক কম। রাজধানী ঢাকার অতিসন্নিকটবর্তী জেলা হওয়া সত্বেও নরসিংদীর জনগনের কথা জাতীয় রাজনীতি তালিকা থেকে বাদ পড়ে রয়েছে। অথচ বঙ্গবন্ধু তার রাজনীতির উত্তাল দিনগুলোতে নরসিংদীকে অত্যন্ত গুরুত্বের চোখে দেখতেন। নরসিংদীর হাজার হাজার মানুষ ৬৯’র গণঅভ্যূত্থান ও ৭মার্চ’র জনসভাসহ সকল সমাবেশে মিছিলসহ যোগদান করতো। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাজধানী ঢাকায় পাকবাহিনীর ক্র্যাক ডাউনের পর পাকবাহিনী প্রথম নরসিংদীর জনগনের বাধার সম্মুখীন হয়। ১৪ এপ্রিল নরসিংদীতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। মাধবদী ঐতিহ্যহাসিক তারাপুকরের যুদ্ধে নরসিংদীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানী সেনাদের বিরুদ্ধে প্রথম সম্মুখ সমরে লিপ্ত হয়। এই তারা পুকুরের যুদ্ধে বহুসংখ্যক পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়। শহীদ হয় ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু নরসিংদীর জনগনের এই বিশাল ত্যাগ তিতিক্ষার কথা স্বাধীনতা উত্তরকালে কোন সরকারই বিবেচনায় নেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হবার পর বিগত ৮ বছরে নরসিংদীর শিবপুর, মনোহরদী-বেলাব ও পলাশ থেকে কোন ত্যাগী নেতাই মন্ত্রী সভায় ঠাঁই পায়নি। সবচেয়ে বেশী বঞ্চনার শিকার হয়েছে মনোহরদী-বেলাব আসনের জনগন। দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসন থেকে নির্বাচিত এমপি এড. নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে রাজনীতি করছেন। আওয়ামী লীগকে মনোহরদী বেলাবর প্রতিটি গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার ঐকান্তিক পরিশ্রমে মনোহরদী বেলাবতে আওয়ামী লীগ একটি শক্তিশালী সংগঠনে পরিনত হয়েছে। তিনি কয়েকবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু একবারও মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভূক্ত হবার সৌভাগ্য হয়নি এই ত্যাগী নেতার। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বলেছেন, রাজনৈতিক যোগ্যতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, অসাধারণ বাগ্মিতা এবং সর্বোপরি এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকা সত্বেও অজানা কারণে বার বারই তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন। বর্তমানে তার বয়স ৬৬ বছরেরও বেশী। এই সময়ে যদি তিনি মন্ত্রী সভার সদস্য হিসেবে বিবেচিত না হতে পারেন তবে শুধু তার ত্যাগই বৃথা যাবে না, মনোহরদী-বেলাব আসনে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবার আশংকা রয়েছে। নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, এড. নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, মনোহরদী-বেলাবতে আওয়ামী রাজনীতির বুনিয়াদ রচনা করেছেন। এই দুটি উপজেলার গ্রামে গ্রামে মানুষ বংশ পরস্পরায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছে। স্বাধীনতার পুর্বাপর সময় থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত জনগনের ৩টি জেনারেশন জুড়ে রয়েছে আওয়ামী লীগের সংগঠন রয়েছে। আর এই কৃতিত্ব হচ্ছে এড. নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের। আওয়ামী লীগের জন্য তার দীর্ঘ জীবনের ত্যাগ তিতিক্ষা যদি ব্যর্থ হয়ে যায় তবে মনোহরদী-বেলাব উপজেলার ত্যাগী জনগন হুতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়বে। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী নেতাদের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল। যারা আওয়ামী লীগের জন্য জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন তাদেরকে তিনি কোন না কোনভাবে প্রতিষ্ঠাও দিয়েছেন। এড. নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এলাকা থেকে কয়েকবার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি একজন বয়োজৈষ্ঠ নেতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতি অবশ্যই তাকে মূল্যায়ন করবেন। আওয়ামী লীগের দুই পিরিয়ডের মন্ত্রীসভায় যারা ঠাঁই পেয়েছেন তাদেরকে পর্যালোচনা করলে পরবর্তী বিবেচনায় সোজাসুজিভাবেই নাম আসে এড. নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের। এরপরও তিনি তার দীর্ঘ জীবনের ত্যাগের মূল্যায়ন পাবেন কি না, তা নিয়ে সন্ধিগ্ধ এলাকার জনগন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ