Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জনগণ আতঙ্কিত, ব্যাংকে সঞ্চয়ের ওপর আরোপিত আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি

সংসদে সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা

| প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম


স্টাফ রিপোর্টার : চলতি অর্থবছরের সম্পুরক বাজেটের ওপর আলোচনা অংশ নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের ওপর আরোপিত আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে জনগনের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষ কষ্ট করে ব্যাংকে টাকা জমা রাখার পর সেই টাকা কেটে নেওয়া হবে ভেবে সঞ্চয়কারীরা উদ্বিগ্ন। নতুন করে আরোপিত শুল্ক প্রত্যাহার করতে হবে।
গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ২০১৬-১৭ সালের সম্পূরক বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই আলোচনায় অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার, সাবেক মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন ও নুরুল ইসলাম মিলন। আজ মঙ্গলবার সংসদে সম্পুরক বাজেট পাস হওয়ার কথা রয়েছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বরাদ্দকৃত অর্থের চাইতে বেশী খরচ করেছে ২৭টি মন্ত্রণালয়।
প্রয়োজনের নিরিখেই খরচ হয়েছে। আমরা যথেচ্ছভাবে খরচ করিনি। যেখানে যেটা প্রয়োজন সেখানে সেটা খরচ করা হয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিয়াউর রহমানের মত বলেননি- ‘মানি ইজ নো প্রোবলেম’। তিনি প্রতিটি পাই পয়সা চিন্তা করে খরচ করেন। আমরা ইচ্ছা করলে সবগুলো মন্ত্রণালয় সব টাকা খরচ করতে পারতাম। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রীর চিন্তাভাবনা সেটা না। আর আমাদের অর্থমন্ত্রী তো অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের কিভাবে হ্রাস টানতে হয় সেটা ভালভাবেই জানেন। তবে যেটা প্রয়োজন ছিল সেটা খরচ করার ক্ষেত্রে তিনি কার্পণ্য করেননি।
কৃষিমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বরাদ্দের চাইতে বেশি খরচ করেছে। এসব মন্ত্রণালয়ের মধ্যে খরচের উচ্চ বৃদ্ধি হারে রয়েছে। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, সুরক্ষা বিভাগ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, বিদ্যুত বিভাগ। এর কোনটিকে আমরা অপ্রয়োজনীয় মনে করবো? প্রয়োজনের নিরীখেই ব্যয় করা হয়েছে।
বেশি খরচের কারণ উল্লেখ করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মান্ধাতা আমলের শিক্ষা হিসেবে রাখা হয়েছিল। আমাদের প্রধানমন্ত্রী মাদ্রাসা শিক্ষাকে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামনের দিকে নিয়ে আসতে চান। সেজন্যই ব্যয় বেড়েছে। আমরা মামলা করে বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। এই সমুদ্রসীমা কী আমরা সাম্পান নৌকা বা ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে রক্ষা করবো? সমুদ্রের সম্পদ রক্ষা করতে আকাশ-স্থল-পানিতে আধুনিক যা যা প্রয়োজন তাই আনবো। এজন্য ব্যয় তো বাড়বেই।
আবগারি শুল্ক আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার আহŸান জানিয়ে হুইপ শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, ব্যাংকে ১ লাখ টাকা জমা রাখলে ৮০০ টাকা কর দিতে হবে অর্থমন্ত্রীর এই ঘোষণা প্রত্যাহার করে আগের অবস্থায় নিয়ে আসার অনুরোধ করছি। একইসঙ্গে সোলার প্যানেলের ওপর শুল্ক প্রত্যাহারেরও দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আবগারি শুল্ক নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ কষ্ট করে ব্যাংকে টাকা জমা রাখার পর সেই টাকা কেটে নিয়ে যাবে এনিয়ে মানুষ আতঙ্কিত। আবগারি শুল্ক প্রত্যাহারের কথা বলছি না। আবগারি শুল্ক যেন আগের অবস্থায় থাকে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম উদ্দিন আলোচনায় অংশ নিয়ে সম্পুরক বাজেটের সমালোচনা করে বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের কাজের অগ্রগতি ৫১ শতাংশ। আর শেষ দুই মাসে কীভাবে ৪১ শতাংশ কাজ হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আর ৩৫টি মন্ত্রণালয় বরাদ্দকৃত টাকা কেন খরচ করতে পারলো না- তার জবাব অবশ্যই দিতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুপাট হয়ে গেল। অর্থমন্ত্রী নিজেই বলেছেন- সাগরচুরি হয়েছে। এখনই শক্তহাতে তা বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে মহাসাগর চুরি হবে।  
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশকে এগিয়ে নিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, অন্যদিকে কতিপয় ব্যক্তি অনিয়ম, দুর্নীতি ও গাফিলতির মাধ্যমে তাঁর প্রচেষ্টাকে ব্যহত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। অনেক মন্ত্রণালয় কেন বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করতে পারলো না- অবশ্যই তার জবাব দিতে হবে জনগণের কাছে। আর সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সুশাসন, দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সন্ত্রাসী, লুটপাটকারী, দুর্নীতিবাজ, টেন্ডারবাজদের ধরে কড়া শাস্তি দিতে হবে, সে যে-ই হোক না কেন।
জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম মিলন বলেন, অর্থমন্ত্রী বিশাল বাজেট দিয়ে ভীষণ খুশি। কিন্ত বাস্তবতা ঠিক উল্টো। অগ্রগতি খুবই নগণ্য। আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার অভাব রয়েছে প্রচুর। গৃহায়নসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় মনে হয় ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জনগণ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ