পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : তীব্র যানজটে স্থবির বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। একদিকে খোঁড়াখুঁড়ি অন্যদিকে বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত সড়ক। এর মধ্যে যানজট রোজাদারদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। গতকাল (রোববার) সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে মহানগরীর প্রায় প্রতিটি সড়কে সারাদিন তীব্র যানজট ছিল। কোন কোন সড়ক পার হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লেগেছে। নগরীর ফকিরহাট থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত সড়কে রাত পর্যন্ত ছিল তীব্র জট।
রোজাদারদের স্বস্তি দিতে পুলিশের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগের কথা বলা হয়েছিল। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল রোজার শুরুতে খোলা হবে বিমানবন্দর সড়কের আলোচিত সেই তিনটি সেতু। মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত দীর্ঘ ৫ কিলোমিটার ফ্লাইওভারটিও রোজার আগে চালু করার ঘোষণা দিয়েছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সিডিএ। এসবের কোনকিছুই এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে নগরবাসীকে বিশেষ করে রোজাদারদের স্বস্তির বদলে দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। মহানগরীর বিভিন্ন সড়কে প্রায় ৬শ’ কিলোমিটার পাইপ লাইন বসানোর কাজ করছে ওয়াসা। বৃষ্টি আর রোজার মধ্যেও থেমে নেই পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ। গুরুত্বপূর্ণ সব কয়টি সড়কের মাঝ বরাবর পুকুর সমান গর্ত খুঁড়ে রেখেছে ওয়াসা। এসব গর্তের কারণে প্রায় প্রতিটি সড়কে যানবাহন আটকে যাচ্ছে। বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির মাটি মিশে সড়কে বইছে কাদার প্লাবন। পাহাড়ি ঢলের সাথে পাহাড় থেকে আসছে বালি আর আবর্জনা। জোয়ারের পানিতে আসছে কাদামাটি। সবমিলে মহানগরীর প্রতিটি সড়কই এখন কাদার প্লাবন। ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতের পর থেকে প্রতিদিন দিনে দুইবার জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে আগ্রাবাদ এক্সেস রোডসহ মহানগরীর বিশাল এলাকা।
নগরীর ভিআইপি সড়ক হিসেবে পরিচিত বিমানবন্দর সড়কে ওয়াসার পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। আগে থেকে চলছে তিনটি সেতু নির্মাণ কাজ। দেড় বছরেও এ তিনটি সেতুর কাজ ৫ ভাগ করা যায়নি। আর প্রধানমন্ত্রীর ধমক খেয়ে তিন মাসে সে কাজ প্রায় শেষ করে আনা হয়। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল রোজার শুরুতে সেতু তিনটি খুলে দেয়া হবে। এখন বলা হচ্ছে বৃষ্টির কারণে কাজ শেষ না হওয়ায় সেতু তিনটি চালু করা যাচ্ছে না। দিনের বেশিরভাগ সময় ওই সড়কটি বন্ধ করে রাখা হচ্ছে। বাকি সময়ে যানবাহন চলছে একমুখী। তাতেও তীব্র জট হচ্ছে ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির কারণে। ইপিজেড মোড়ের যানজট স্থায়ী হয়েছে অনেক আগে। রমজানে যানজটের ভয়াবহতা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। কাটগড় থেকে তিনটায় বাসে উঠেও নিউমার্কেট এসে ইফতার সারতে পারছেন না অনেকে। ১৫ কিলোমিটার রাস্তা পার হতে সময় লাগছে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা। ইপিজেড মোড়ে গভীর রাত পর্যন্ত যানজট হচ্ছে। মুরাদপুর ফ্লাইওভারের কারণে বহদ্দার হাট থেকে লালখান বাজার হয়ে মহানগরীর বিরাট অংশ যানজটে স্থবির থাকছে। ফ্লাইওভারের প্রকল্প পরিচালক সিডিএ’র প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, যানজট কমাতে রোজার শুরুতে ফ্লাইওভারটি খুলে দেয়ার কথা থাকলেও ঘূর্ণিঝড় মোরা পরবর্তী বৃষ্টিপাতের কারণে পিচঢালাইয়ের কাজ শেষ করা যায়নি। কাজ শেষ হলে ফ্লাইওভারটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
ওয়াসার দুই প্রকল্পের পাইপ লাইন বসাতে নগরীর প্রায় প্রতিটি সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করছে ওয়াসা। নগরীর ব্যস্ততম জংশন বহদ্দারহাট থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত প্রায় ১১ কিলেমিটার সড়কের বিভিন্ন অংশ কেটে ফেলায় উত্তর চট্টগ্রামের লাখ লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েছে। কেটে ফেলা সড়কের মদুনাঘাট, নজুমিয়া হাট, ভরাপুকুর পাড়, কুয়াইশ কলেজের সামনে, গোলাইপ্পার দোকান ও রাস্তার মাথা এলাকায় প্রতিদিনই যানজটে পড়তে হচ্ছে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের যাত্রীদের। এর মধ্যে কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার অংশে রাস্তার পুরোটাই কেটে ফেলা হয়েছে। সড়কের এক অংশ পার হতে লাগছে কমপক্ষে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। বহদ্দারহাট থেকে কাপ্তাই রাস্তার মাথা পর্যন্ত অংশে সড়কের নগরমুখী অংশ কেটে চলছে পাইপ বসানোর কাজ।
২০১৫ সালের ডিসেম্বর মদুনাঘাট পানি শোধানাগার প্রকল্পের পাইপ লাইন বসাতে কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে মদুনাঘাট পর্যন্ত সড়কের মাঝ বরাবর রাস্তা খুঁড়তে শুরু করে ওয়াসা। এই প্রকল্পের অধীনে পাইপ লাইন বসানোর কাজ শেষ হতে চলেছে। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে চলতি বছরের অক্টোবরে। এরমধ্যেই ২০১৬ সালে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় পাইপ লাইন বসাতে একই সড়কের মদুনাঘাট থেকে অক্সিজেন-কুয়াইশ সংযোগ সড়কের বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পর্যন্ত রাঙ্গুনিয়ামুখী অংশ কাটা হয়। সবশেষে চলতি বছরের শুরুতে ওই প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের অধীনে মদুনাঘাট থেকে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পর্যন্ত নগরমুখী অংশও কাটা হয়। ফলে সেখানে সড়কে আর কোনো আস্তরণ অবশিষ্ট নেই। মাঝে মাঝে শুধু কিছু ইট আছে। টানা বৃষ্টিতে কাদামাটিতে প্লাবিত পুরো সড়ক। মহানগরীর অন্যান্য সড়কেও চলছে পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ।
২০১৭ সালের মার্চে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প ফেইজ-ওয়ানের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাপানের জাইকা, বাংলাদেশ সরকার ও চট্টগ্রাম ওয়াসার অর্থায়নে মোট এক হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪ কোটি লিটার পানি উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। ২০১৬ সালের দিকে কাজ শুরু হয় কর্ণফুলী সরবরাহ প্রকল্পের ফেইজ-টু’র। এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২২ সাল পর্যন্ত। অন্যদিকে মদুনাঘাট পানি শোধনাগার প্রকল্পের উৎপাদন ক্ষমতা ৯ কোটি লিটার। ২০১৭ সালের অক্টোবরে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। সবমিলে আগামী ২০২২ সাল পর্যন্ত মহানগরীতে সড়কে কাটাকাটি করবে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।