Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

খুলনাঞ্চলে আগামী নির্বাচনে ব্যবহৃত হতে পারে নিষিদ্ধ চরমপন্থী পরাশক্তি

| প্রকাশের সময় : ৫ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে : আগামী জাতীয় সংসদ ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের নিরব প্রচার-প্রচারনা চলছে। এরমধ্যে শুরু হয়েছে রাজনীতিক হত্যাকান্ড। গত ২৫ মে দিবাগত রাতে খুলনা জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফুলতলা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সরদার আলাউদ্দিন মিঠুকে দেহরক্ষীসহ হত্যা করে চরমপন্থীরা। ওই ডবল মার্ডারের মধ্যদিয়ে খুলনা অঞ্চলে স্বদর্পে সক্রিয়তার অস্তিত্ব জানান দিল নিষিদ্ধ চরমপন্থী পরাশক্তি। সর্বশেষ, গত শুক্রবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নগরীর ৫নং ওয়ার্ড সভাপতি ইকবাল সরোয়ার সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। একের পর এক হত্যাকান্ড ভাবিয়ে তুলেছে রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিদের। আগামী নির্বাচনে চরমপন্থী পরাশক্তি ব্যবহারের আশঙ্কা করছেন তারা।
সূত্রমতে, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার বেড়েছে খুলনা অঞ্চলে। চলতি বছরের শুরু থেকে মহানগরী ও জেলাতে কয়েকটি খুনের ঘটনার পর রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক। নির্মূলের কথা বলা হলেও কাজের মধ্যে চরমপন্থী ও সন্ত্রাসীরা রয়েছে সক্রিয়। টাকার বিনিময়ে বরাবরের মতোই মানুষ হত্যা করছে তারা।
গত ২৫ মে রাত ১০টার দিকে ফুলতলা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলাউদ্দিন মিঠু ও তার দেহরক্ষী নওশের আলী গাজীকে গুলি করে হত্যা করেছে। এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় গত শনিবার বিকেলে নিহত মিঠু’র ভাই সরদার রাজ বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের নামে মামলা করেছেন (নং-২৯)। আদালতে দেয়া আসামীদের জবানবন্দী ও রেঞ্জ ডিআইজি’র বক্তব্য অনুযায়ী এটা পরিষ্কার যে, এ ডাবল মার্ডারের কিলিং মিশনের নেতৃত্ব দিয়েছে চরমপন্থী ক্যাডার শিমুল ভূইঁয়া। এছাড়া স্থানীয় কোন জনপ্রতিনিধি হত্যাকান্ডে জড়িত আছে কি না তা তদন্ত চলছে।
খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য প্রাণী সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ খুলনায় চরমপন্থিদের উপস্থিতি রয়েছে বলে স্বীকার করে বলেন, তারা যতোই শক্তিশালী হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এরআগে, ১৯৯৮ সালের ১৮ আগস্ট দুপুর ২টা দামোদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সরদার আবুল কাশেমকে (মিঠুর বাবা) ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে ঢুকে মাথায় ও বুকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেয় চরমপন্থীরা। আলোচিত এই মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী খুলনা বিভাগের চরমপন্থি প্রধান শিমূল ভূঁইয়া, তার ভাই শরীফ আহমেদ শিপলু ভূঁইয়া (বর্তমান দামোদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান) ও মমিনুল ভূঁইয়ারা মামলা থেকে অব্যহতি পেয়েছে। এরপর ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট খুলনার বেলা পৌনে ১১টার দিকে উপজেলা পরিষদের অদূরে দামোদর ইউপি চেয়ারম্যান সরদার আবু সাঈদ বাদল (মিঠুর বড় ভাই) কে গুলি করে হত্যা করে চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা। হত্যাকান্ডের ঘটনায় সরদার আলাউদ্দিন মিঠু বাদী হয়ে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ নড়াইল জেলা সদরের গোবরা বাজার থেকে জনযুদ্ধ ক্যাডার আল মামুন ওরফে বোমারু মামুনকে গ্রেফতার করে। পরদিন মামুন আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানায়, এ হত্যাকান্ডে সে এবং জনযুদ্ধের পিটপিটে সুমন, বিপুল বৈরাগী, রাজুসহ ৫জন অংশ নেয়। তাদের কারও সঙ্গেই চেয়ারম্যান বাদলের ব্যক্তিগত কোনো শত্রæতা ছিল না। টাকার বিনিময়ে ভাড়ায় তারা এ হত্যাকান্ড ঘটায়। এ বিষয়ে খুলনা মহানগর আ’লীগের সভাপতি আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক এমপি বলেন, যারা মানুষ হত্যা করে তারা খুনি। এদের সহায়তাকারীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
নগর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মিজানুর রহমান মিজান এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সন্ত্রাসীদের কোন ছাড় দেয়া হবে না। আমিও একইভাবে বলতে চাই অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীদের সনাক্ত ও অবিলম্বে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হোক। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, “ফুলতলায় সরদার পরিবারের জনপ্রিয়তার কারণে একেরপর এক এই পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে। মিঠুর পিতা সরদার আবুল কাশেম, ভাই ইউপি চেয়ারম্যান বাদল ও সর্বশেষ মিঠুকে হত্যা করা হয়েছে আওয়ামী লীগ শাসনামলে। একজন চরমপন্থী নেতা ফুলের তোড়া দিয়ে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগে যোগদানের পর মিঠু তার জীবনের নিরাপত্তাহীনতার কথা বলেছিলেন। সরকার আগামী নির্বাচনকে টার্গেট করে বিএনপি নিধনে মেতে উঠেছে। পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে এ কাজে ব্যবহার করছে।”
জেলা আ’লীগের সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ কামরুজ্জামান জামাল বলেন, চরমপন্থী ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারকারীরা এ সমাজের জন্য হুমকী। তাদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা জরুরি। না আগামী নির্বাচনে ওসব অবৈধ অস্ত্রের প্রভাব কাজে লাগাতে পারে সন্ত্রাসীরা।
খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ হাবিবুর রহমান বলেন, ইতিপূর্বে যে অপরাধ কর্মকান্ডগুলো ঘটেছে, তার সাথে জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে। অধিকাংশদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তবে স¤প্রতি ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ডের বিষয়ে পুলিশের তদন্ত চলছে। এসকল ঘটনার সাথে জড়িতদের সনাক্তকরণের জন্য কাজ চলছে। উল্লেখ্য, আগামী বছরের শেষের দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং তার আগে কেসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ