পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিজানুর রহমান তোতা : বটি দিয়ে মাছ কাটতে কাটতে স্বামীর সঙ্গে তুচ্ছ ঘটনায় তর্কবিতর্ক হয়। হঠাৎ খুন চেপে যায় মাথায়। বটি দিয়ে স্বামী শেখ মোস্তাক আলীকে কোপ দেয়। স্বামী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ঘটনাটি ১জুন খুলনার সোনাডাঙ্গা বয়রা ক্রস রোডের। পুলিশ স্ত্রী রোজিনা বেগমকে আটক করে। অতি সম্প্রতিক সময়ে কথাকাটাকাটির জের ধরে যশোর উপশহরে দিবালোকে কাজল নামে যুবক ছুরিকাঘাতে খুন হয়। সাতক্ষীরার কলারোয়ার দেয়াড়া, গ্রামে স্বামীর মুখে মুখে তর্ক করায় শ্বাসরোধ করে গৃহবধুকে হত্যা, সাতক্ষীরায় দাদার হাতে পৌত্র খুন-এমন ঘটনা ঘটেই চলেছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অসহিঞ্চুতার মাত্রা এতটা বেড়েছে যে তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনা ও সামান্য স্বার্থে একের পর এক মানুষকে খুন করছে না মানুষ। তাদের মতে, দিনে দিনে জায়গা জমি জিনিসপত্রসহ সবকিছুরই মূল্য বাড়ছেই। কোনটি কমার কোন নজীর নেই। শুধুমাত্র কমছে জীবনের মূল্য।
সূত্রমতে, কোন এক ব্যক্তির হত্যাকান্ডের ঘটনা শুধু ব্যক্তির নয় ওই পরিবারকে হত্যা করা হচ্ছে। কতটা বেদনার, কষ্টের, বিপদের ও শূন্যতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে হত্যাকান্ডের শিকার পরিবারকে তা ‘ব্যথিত বেদন বুঝিবে সে কিসে-দংশেনি যারে’। যারা লোমহর্ষক হত্যাকান্ড ঘটাচ্ছে তারা দুর্বল ও জোড়াতালির চার্জশীটে পার পেয়ে যাচ্ছে। এমনকি তদন্তের নামে মস্তিস্কপ্রসূত তথ্যের সমাহার ঘটিয়ে চার্জশীট দিয়ে নিরীহ নিরাপরাধ ব্যক্তিকে ফাঁসিয়ে দেয়া হচ্ছে। যার কারণে অনেক হত্যা মামলা তদন্ত সংস্থা মার্ডার করছে।
রাজনৈতিক কারণে, জমিজমা বিরোধে, সংঘাত, সংঘর্ষ, প্রতিপক্ষকে পথের কাঁটা মনে করে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী লেলিয়ে দেয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। ঘটছে অন্যান্য খুন গুমের ঘটনা। গত ২জুন খুলনার পিকচার প্যালেস মোড়ে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের নেতৃত্বে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে মানববন্ধন হয়। সেখানে বলা হয়, ‘রাষ্ট্রীয় মদদে আর গুম নয়’। গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল চিহ্নিত ছিল একসময় ভয়ংকর জনপদ। সাম্প্রতিক সময়ে আবার খুন বেড়ে গেছে উদ্বেগজনকহারে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চারিদিকে বহু ঘটনা বিশেষ করে ভয়ংকর সন্ত্রাস ও লোমহর্ষক নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের বিবরণ তুলে ধরে কয়েকজন রাজনীতিবিদ, সমাজ সচেতন ব্যক্তি, অপরাধ বিশেষজ্ঞ এবং বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার প্রতিনিধি চরম উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, স্বাধীনতার পর বছরে গড়ে দক্ষিণ-পশ্চিমের এই অঞ্চলটিতে ৩ শতাধিক হত্যাকান্ড ঘটে। বর্তমানে তুলনামূলক কিছুটা কম হলেও যেখানে সেখানে লাশ পড়া বন্ধ হয়নি। কমেনি হিংস্রতা ও নিষ্ঠুরতার মাত্রা। বরং বেড়েছে। খুলনার নিউমার্কেট এলাকার রিকসাচালক আক্কাছ আলী বললেন, আমাদের জানমালের নিরাপত্তা নেই। চোখের সামনে যেসব ঘটনা মাঝেমধ্যে দেখি তাতে বলা যায় কেউই নিরাপদ নয়। যশোরের দিনমজুর বেলেরমাঠ গ্রামের ফয়েজ গাজী বললেন, সমাজের উচুস্তরের মানুষের কথা আলাদ, তারা অস্ত্রের লাইসেন্স পান, গাড়ীতে চলাচল করেন, কিন্তু সাধারণ মানুষ যারা বাই সাইকেল ও রিকসা-ভ্যানে দিনে অথবা রাতে জরুরী কাজে রাস্তায় বের হন, তারা নিশ্চিন্ত নিরাপদের বড় অভাববোধ করে থাকেন। একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা বললেন, গ্রাম কিংবা শহর সমানতালে প্রভাবশালীদের দাপট চলছে। সেইসাথে চলছে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। জমিজমা নিয়ে গোলযোগে, সামান্য কথাকাটাকাটিতে, রাজনৈতিক কারণে, মাদক ব্যবসা নিয়ে, ছিনতাই, ডাকাতি, চোরাচালান, সন্ত্রাসী গ্রæপ দ্বন্দসহ নানা কারণে হত্যাকান্ড ঘটছে। একেবারে সামান্য কারণে খুনের শিকার হচ্ছে মানুষ। এই ধারা কবে কিভাবে বন্ধ হবে বলতে পারেননি কেউই। বাড়ি থেকে বাইরে বের হবার পর নিরাপদে ঘরে ফিরবে মানুষ এই নিশ্চয়তা নেই। শুধু হত্যাকান্ড নয়। সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন কারণে মানুষের জীবহানি ঘটছে। আবার ঘরেও যে নিরাপদ। তাও নয়। অসহিঞ্চুতার কারণে ঘরেও মানুষ আপনজনের হাতে আপন মানুষটি খুন হচ্ছে।
অপরাধ বিশেষজ্ঞ, সমাজ বিজ্ঞানী ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, তদন্তবাণিজ্য থেকে আমরা এখনো পুরোপুরি বের হয়ে আসতে পারিনি। হত্যাকান্ড, হিংস্রতা ও নিষ্ঠুরতা নিয়ে কোনক্রমেই রাজনীতি করা উচিত নয়। সেটিই সাধারণত হয়ে থাকে। তাদের কথা, সরকারকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। একটি মূল্যবান জীবনহানির ঘটনা নিয়ে হেলাফেলার কোন সুযোগ নেই। শুধু হত্যাকান্ড নয়, সড়ক দুর্ঘটনা ও আত্মহত্যাসহ যেসব ঘটনায় জীবনহানি ঘটছে তার প্রকৃত কারণ উদঘাটন জরুরি। তা না হলে জীবনহানির মাত্রা বেড়েই যাবে। আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনাকারীর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার আইন থাকলেও তা সিংহভাগ ক্ষেত্রেই হয় না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।