পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের সাধারণ মানুষ তথা কৃষকের চেয়ে গরুর সম্মান বেশি। হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মূলত গরুর গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ এবং বাংলাদেশে গরু রফতানি নিষিদ্ধ করার পর গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। তারা না পারছে গরু বিক্রি করতে, না পারছে ঘরে রাখতে। অর্থকরী প্রাণী গরু নিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকরা হয়ে পড়েছেন দিশেহারা, যার কারণে বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোতে ভারতের মানুষের জীবনযাপন নিয়ে যত খবর জায়গা পাচ্ছে তার বেশির ভাগই গরুকেন্দ্রিক। ওইসব গণমাধ্যমের খবর পড়ে জানা যায়, দেশটির কৃষকরা প্রশ্ন তুলেছেন, নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকার কার ভোটে নির্বাচিত গরুর ভোটে না সাধারণ মানুষের ভোটে? মোদি সরকার কাকে বাঁচাতে চায়Ñগরু না কৃষক?
আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে গত কয়েকদিন থেকে ভারতের কৃষকদের গরু নিয়ে দুর্দশার চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, গুজরাট, উত্তরপ্রদেশসহ বিভিন্ন রাজ্যের গরু খামারি ও চাষিদের গরু নিয়ে বিড়ম্বনার খবর প্রকাশ করা হয়। এসব খবরে গরু নিয়ে কৃষকদের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র ফুটে ওঠে। গরু নিয়ে কৃষকরা শুধু বিপাকেই পড়েনি; খাদ্য সংকটেও পড়ে যাচ্ছে। রয়টার্সের এক সরেজমিন খবরে বলা হয় , মহারাষ্ট্রের একটি গরুর হাটে কয়েক সপ্তাহ ধরে দুটি ষাঁড় নিয়ে বিক্রি করার জন্য বসে আছেন রেভাজি চৌধুরী। কিন্তু কোনো ক্রেতা নেই। গরু বিক্রি করতে না পারায় কৃষকের কান্না দেখারও কেউ নেই।
মোদি সরকারের জবাইয়ের উদ্দেশে গরু বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকার কারণে ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্যের লাখ লাখ কৃষক তীব্র দারিদ্র্যের হুমকির মুখে পড়েছে। গ্রামের এসব কৃষকের দুর্ভোগ যত বাড়ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা দলের (বিজেপি) প্রতি এদের অসন্তোষও তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। হিন্দু ধর্মে গরুকে পবিত্র প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই ঐতিহ্যগতভাবেই ভারতের অনেক রাজ্যে গরু জবাই করায় নিষেধাজ্ঞা আছে। আর মোদি সরকার প্রায় সব রাজ্যে গরু জবাই নিষিদ্ধ করেছে। গরুর মাংস খাওয়ার কারণে একাধিক মানুষকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। অথচ কয়েক বছর আগেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় গরুর মাংস রপ্তানিকারী দেশ ভারতে গরু নিয়ে এত জবরদস্তি ছিল না। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বিজেপিশাসিত মহারাষ্ট্রের মতো কয়েকটি রাজ্যে গরু জবাইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা বিস্তৃত করে ষাঁড় ও বাছুরকেও এর আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা মানতে বাধ্য করতে হিন্দু স্বেচ্ছাসেবীরা গরু বিক্রেতাদের ওপর হামলাও বাড়িয়ে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি ও হিন্দুত্ববাদী বিজেপি ভারতে সনাতন ধর্মের বিশ্বাস জোরদার করতে শুরু করার পরই কঠোর আইন প্রণয়ন শুরু হয়। ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হিন্দু হওয়ায় বিষয়টি সহজই হয়। কিন্তু দেশটির সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী, যাদের মধ্যে ১৮ কোটি মুসলমান রয়েছে, তারা এসব আইন প্রয়োগ জোরদার করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। গরুর মাংস নিষিদ্ধ করার ফলাফলও উল্লেখযোগ্য হয়ে দেখা দিচ্ছে। সারা দেশে গরুর দাম কমে গেছে। ভারতের মাংস রপ্তানি ১৩ শতাংশ কমে গেছে। এ সময় ভারতের লোকসানে লাভ হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী মাংস রপ্তানিকারী দেশ ব্রাজিলের। একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ভারতে পরপর দু’বছর ধরে চলা খরা ও অকাল বৃষ্টিপাতের কারণে ফসলে মার খেয়ে কোটি কোটি কৃষক দিশেহারা। চলমান তীব্র খরায় পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়ে উঠেছে। গোয়ালে থাকা গরুকে খাওয়ানোর মতো খাবার বা পানি কিছুই নেই। গরু বিক্রি না হওয়ায় তা বিক্রি করে খাবার সংগ্রহ করতেও পারছে না কৃষকরা। কৃষকদের অভিমত হলো আগে দুর্যোগময় অবস্থায় গরু বিক্রি করে নগদ কিছু পেয়ে দিন গুজরান করতো কৃষকরা। কিন্তু এখন তাও সম্ভব নয়। গরু বিক্রি করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে গ্রামের গরিব কৃষকদের। মহারাষ্ট্রের একটি গরুর হাটে কয়েক সপ্তাহ ধরে দুটি ষাঁড় নিয়ে বিক্রি করতে না পেরে রেভাজি চৌধুরী প্রশ্ন করেন, আমি আশ্চর্য হয়ে ভাবি, সরকার কাকে বাঁচাতে চায়Ñআমাদের না গরুদের; না আমাদের মতো গরিব কৃষকদের?
জানা যায়, ঐতিহ্যগতভাবে খরা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সাধারণত কৃষকরা গরু বিক্রি করে দিতো। মুসলিম কসাইরাই সাধারণত এসব গরুর ক্রেতা ছিল। বর্ষাকালে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর আয় বাড়লে কৃষকরা আবার গরু কিনে নিত। এভাবেই চলে আসছিল যুগের পর যুগ ধরে। কিন্তু এ চক্র ভেঙে গেছে। সামনে বীজ বপনের নতুন মৌসুম শুরু হবে, কিন্তু বীজ ও সার কেনার মতো পর্যাপ্ত অর্থ কৃষকের হাতে নেই। খরা কবলিত মহারাষ্ট্রের মারাঠা এলাকায় কৃষকের আত্মহত্যার হার চলতি বছরে এরই মধ্যে দ্বিগুণ হয়ে গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।