Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

গ্রাহকদের ৫০ কোটি টাকা নিয়ে চাঁদপুরে তিন সমিতি উধাও

| প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চাঁদপুর জেলা সংবাদদাতা : চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও দক্ষিণে ৩টি সমিতি কয়েক হাজার গ্রাহকের প্রায় ৫০ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। গত এক বছরের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে মতলব উত্তর থানায় দুটি মামলা হয়েছে। উপজেলা সমবায় কার্যালয় থেকে সাত সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন ছাড়া আর কিছুই হয়নি। জনকল্যাণ সমবায় সমিতি, আলোর সন্ধানে বহুমুখী সমবায় সমিতি ও ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামে ৩টি সমিতির অধীনে প্রায় ৫ হাজার গ্রাহক তাদের জমাকৃত টাকা পাওয়ার আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। এসব সমিতির কর্মকর্তারা উধাও হয়ে যাওয়ায় এ বিষয়ে কোন কুল কিনারা করা যাচ্ছে না। উপরোন্তু পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে উল্টো গ্রাহককে কোনো কোনো সমিতির কর্মকর্তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের হাতে লাঞ্ছিত হতে হচ্ছে।
আলোর সন্ধানে বহুমুখী সমবায় সমিতির দুর্গাপুর কার্যালয়ে প্রতিদিন শত শত গ্রাহক ভিড় জমাচ্ছে। সমিতির সেক্রেটারী হাসান ইমাম গ্রাহকদের আজ নয় কাল সময় ক্ষেপণ করে ঘুরাচ্ছেন বলে একাধিক গ্রাহক অভিযোগ করেছেন। এ সমিতির গ্রাহক শাহনাজ আক্তার ও মহসিন মিয়া জানান, তাদের প্রায় ১৩ লাখ টাকা ডিপোজিট আছে। টাকা চাইতে গেলে উল্টো সমিতির সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাদেরকে হুমকি দেয়া হয়। জানা যায়, অনেকে যে টাকা পায় তার অর্ধেক মূল্যের পরিমাণ জায়গা দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে। প্রায় ৭শ’ গ্রাহকের ২৬ কোটি টাকা এ সমিতিতে জমা রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
দুর্গাপুর আনন্দ বাজার জনকল্যাণ সমবায় সমিতিতে এককালীন আমানত রাখা গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়ে গেছেন সমিতির কর্মকর্তারা। টাকা উত্তোলন না করতে না পেরে এ সমিতির মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে দুজন গ্রাহক মতলব উত্তর থানায় দুটি মামলা দায়ের করেছেন। এ সমিতির কর্মকর্তারা গত বছরের ১৬ ফেব্রæয়ারি থেকে তাদের অফিস বন্ধ করে রেকর্ডপত্র নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছে। সমিতির দেড় হাজার গ্রাহকের প্রায় পঁচিশ কোটি টাকা নিয়ে কর্তৃপক্ষ উধাও হয়ে গেছে। টাকা আত্মসাৎ করে সমিতির সেক্রেটারী মুরাদ হোসেন সৌদি আরব পালিয়ে গেছেন। বাকিরা স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে দাপটের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
অপরটি হচ্ছে ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। মতলব দক্ষিণ উপজেলার শাখার এ ফাউন্ডেশনের ১২ মাঠ কর্মকর্তা ঋণ গ্রহীতাদের প্রায় ১ কোটি টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছেন। এ উপজেলার ৩২টি গ্রামের এক হাজার পাঁচ জন ক্ষুদ্র কৃষককে জনতা ব্যাংক এ ঋণ বিতরণ করে। যার বিতরণ ও আদায়ের দায়িত্ব নেয় এ ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। তারা ঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে সমুদয় টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। ফাউন্ডেশনের গ্রাহক দক্ষিণ বাইশপুরের বিউটি রাণী ও সবিতা রাণী দাস জানান, তারা আশি হাজার টাকা করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ক’বছর আগে তা ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ব্যাংকে জমা দিয়েছেন। তখন জমা সøীপ ও বই দেয়া হয়। হঠাৎ করে গত ২ মাস আগে ব্যাংকের পাওনার টাকা চিঠি পেয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ব্যাংকে কোনো টাকা জমা দেয়া হয়নি। এসব সøীপ ও বই সবই ভুয়া।
মতলব উত্তরের সমিতির বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মফিজুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন ছাড়াও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তাকে বদলী করা হয়েছে। জেলা সমবায় কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, আমরা এ পর্যন্ত ১১টি সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে মামলা করেছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ