Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অবশেষে ৪০ লাখ টাকার বিতর্কিত রোড রোলার গ্রহণ করলো কেসিসি

| প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খুলনা ব্যুরো : অবশেষে বহুল বিতর্কিত ৪০ লাখ টাকা মূল্যের সেই দু’নম্বরী রোড রোলারটি গ্রহণ করেছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি)। কৃষি কাজে ব্যবহৃত ট্রাক্টরের ওপর তাবুর ছাউনি ও আনুসঙ্গিক অঙ্গ জুড়ে তৈরি, ওজন কম এবং দরপত্রে যন্ত্রটির প্রস্তুতকারক শর্ত ভঙ্গসহ নানা বিতর্ক উঠেছিল। যার ফলে কেসিসি কর্তৃপক্ষ কার্যাদেশ বাতিল করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগও নিয়েছিল। সবকিছু অর্থের বিনিময়ে ধামাচাপা দিয়ে সম্প্রতি সেই বহুল বিতর্কিত রোড রোলারটি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
কেসিসি’র একাধিক সূত্র জানান, খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে স্তুপীকৃত সর্বপ্রকার বর্জ্য গার্বেজ ট্রাকে তোলার জন্য ২০১৫ সালের মাঝামাঝি কেসিসি একটি ফ্রন্ট লোডিং গার্বেজ লোডার ক্রয়ের জন্য টেন্ডার আহŸান করে। টেন্ডারে লোডার সরবরাহের কাজ পায় নড়াইল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলামের স্বত্ত¡াধিকারী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সরকার কবির আহমেদ। এটি ওই উপজেলা চেয়ারম্যানের শ্যালক প্রতিষ্ঠানটি দেখাশুনা করেন। ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে গার্বেজ লোডার সরবরাহের জন্য কেসিসি ওয়ার্ক অর্ডার দেয় (যার সূত্র নং- পূঃবিঃযাঃশাঃ/২০১৫-১৬ /৯৩(৬) তাং-১৯-১০-২০১৫)। কার্যাদেশ পেয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালের জুলাই মাসে দরপত্রে দাখিলকৃত স্পেসিফিকেশন (বিবরণী) অনুযায়ী সরবরাহ না করে ট্রাক্টরের ওপর নির্মিত দু’নম্বরী পদ্ধতিতে তৈরী একটি গার্বেজ লোডার কেসিসিকে বুঝিয়ে দেয়। আইন অনুযায়ী যা বুঝে নেয়ার জন্য কোন রিসিভ কমিটিও করা হয়নি। এই জালিয়াতির পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেন কেসিসি’র যান্ত্রিক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আজিজ ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। দৃশ্যমান এই দুর্নীতির বিতর্ক উঠলে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিছুর রহমান বিশ্বাষ বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন।
তদন্ত কমিটির সূত্রমতে, কেসিসি’র ওয়ার্ক অর্ডার এবং ঠিকাদার কর্তৃক দাখিলকৃত ক্যাটালগ (যা মেয়র কর্তৃক সাক্ষরিত) অনুযায়ী ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের লোডারটি ভারত থেকে আমদানীকৃত হতে হবে। (যার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গধহরধৎ, লড়যহ – উববৎব,গড়ফবষ ঘড়. ৫৩১০ গঁষঃরঢ়ঁৎঢ়ড়ংব নঁপশবঃ রিঃয ঝপধৎরভরবফ ঃববঃয,চধু খড়ধফ পধঢ়ধপরঃু ১০০০শম, ঐুফৎড়ংধঃরপ ংঃববৎরহম, উরবংবষ বহমরহব,ঊহমরহব পধঢ়ধপরঃু ৫৫ ঐচ)। কিন্তু যে লোডারটি সরবরাহ করা হয়েছে তাতে উল্লেখিত বর্ণনার কোন মিল নেই। বরং খালি চোখেই দেখা যায় যে কৃষি কাজে ব্যবহৃত একটি ট্রাক্টরের মূল চ্যাসিসের সাথে লোহা লক্কড় জুড়ে দিয়ে স্থানীয়ভাবে হাইড্রোলিক সিস্টেম যুক্ত করে মূল কেবিনের পরিবর্তে পাইপ ও ত্রিপল দ্বারা ছাউনি দিয়ে কেবিন তৈরী করে কেসিসিকে গছিয়ে দেয়া হয়েছিল। পরে তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কেসিসি’র গ্যারেজ থেকে রোড রোলারটি বের করে দেয়া হয়েছিল। সম্প্রতি ওই রোড রোলারটি গ্রহণ করায় হতবাক হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে কেসিসি’র যান্ত্রিক শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আজিজ বলেন, “প্রথমে আমাদের ভুল হয়েছিল। পরে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করলে; মন্ত্রণালয় থেকে কেসিসিকে বিষয়টি বিশেষজ্ঞ দ্বারা তদন্ত করে দেখতে নির্দেশনা দেয়। পরে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি সুপারিশ করেছে, যে চলমান অবস্থায় রোলারটির ওজন ঠিক আছে। তাই যন্ত্রটি গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে কোন ছলচতুরতা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কেসিসি’র যোগাযোগ স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, “ক্যাটালগ অনুযায়ী না হওয়া এবং ওজন কম থাকার কারণে রোলারটি প্রথম বার ফেরত দেয়া হয়েছিল। এরপর একই রোলার পূণরায় দেয়ার চেষ্টা করলে দ্বিতীয় বারও গ্রহণ করা হয়নি। রোলারটিকে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করে ক্যাটালগ অনুযায়ী সরবরাহের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। পরে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে একটা বোর্ড গঠন করা হয়েছিল, এ পর্যন্তই জানি। সেই রোলারটি গ্রহণ করা হয়েছে বলে তো জানা নেই।”
এ ব্যাপারে জানতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সরকার কবির আহমেদ’র কর্ণধর নড়াইল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম (শনিবার বিকাল ৩টা ৪ মিনিটে মুঠোফোনে) বলেন, “সবকিছু নিয়ম মেনেই হয়েছে। প্রথমে ভুল বোঝাবুঝি হওয়া সমস্যা হয়েছিল, পরে ঠিক হয়ে যাওয়ায় রোলারটি গ্রহণ করেছেন।”
তদন্ত কমিটির অভিযোগ, পরিমাপের সময় জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে রোলারের মধ্যে থাকা এক হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন পানির ট্যাংকটি পানি দিয়ে ভরে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃত ওজন ৫ টণেরও নিচে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট কমিটি রোলারটি বুঝে নেয়নি। কমিটির পক্ষ থেকে বিষয়টি কেসিসি’র ভারপ্রাপ্ত মেয়র আনিছুর রহমান বিশ্বাষকে জানানো হলে তিনি রোলারটিকে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করেছিলেন। সূত্রমতে, অযোগ্য ঘোষণার পর রোলারটি দীর্ঘ দিন নগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের সামনে জনৈক অঞ্জনের গ্যারেজে ফেলে রাখা হয়। এরপর বুঝে নেয়া সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এবং রফিক নামক একজন ড্রাইভার সেটি জিরোপয়েন্টের একটি ওয়ার্কশপে নিয়ে লোহার মালামাল লাগিয়ে ওজন বৃদ্ধি করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ