রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
রেবা রহমান, যশোর থেকে : আন্তর্জাতিক সড়ক বেনাপোল ও মহাসড়ক খুলনা যশোরের শতবর্ষী গাছ নিয়ে দ্বন্দের অবসান হয়নি আজো। নতুন করে দ্বন্দ চরমে পৌছেছে। প্রশ্ন উঠেছে দ্বন্দ রেখেই শেষ পর্যন্ত মূল্যবান গাছ কি কেটে ফেলা হবে। বিষয়টি নিয়ে যশোর জেলা পরিষদ ও সড়ক বিভাগের সাথে দফায় দফায় জেলা প্রশাসক বৈঠক করার পরও কোন সুরাহা না হওয়ায় এখন মন্ত্রণালয়ে গড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্রে জানা গেছে, যশোর-খুলনা এবং যশোর-বেনাপোল সড়ক দুটির দুইধারে ছোট বড় ৪ হাজার ৮শ’৬৭টি শতবর্ষী গাছ। দ্বন্দ বহুদিন ধরে চলে আসছে গাছে মালিকানা নিয়ে। নতুন করে প্রায় ৬শ’৫০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গাছগুলো কেটে ফেলার প্রয়োজন পড়ায় গোল বেধেছে। সরকারের এ দুই বিভাগই জমি ও গাছের মালিকানা দাবি করছে। মন্ত্রণালয় কি সিদ্ধান্ত দেয় তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে জেলা পরিষদ ও সড়ক বিভাগ। এরপর বিষয়টি আদালত পর্যন্তও গড়াতে পারে বলে সুত্র জানিয়েছে।
এদিকে, সড়ক উন্নয়ন ও প্রশ্স্তকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে গাছ কাটার বিকল্প নেই বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ। আর পরিবেশবাদীরা বলছেন, গাছ রেখেই মহাসড়ক সম্প্রসারণ কাজ সম্ভব। সেটি না করা হলে পরিবেশের জন্য খুবই ক্ষতিকর হবে। সুত্র জানায়, যশোর-খুলনা মহাসড়কে বিভিন্ন বয়সের ২হাজার ৫শ’৫৫টি ও যশোর বেনাপোল মহাসড়কের শতবর্ষী গাছসহ ২ হাজার ৩শ’ ১২টি গাছ রয়েছে। যশোর সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২১ মার্চ একনেকের সভায় ৩শ’২৮কোটি ৯০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয়ে যশোর-বেনাপোল সড়কের (দড়াটানা-বেনাপোল পর্যন্ত) ৩৮ কিলোমিটার এবং চলতি বছরের ১৪ মার্চ একনেকের সভায় ৩শ’২১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে যশোর-খুলনা (পালবাড়ি-নওয়াপাড়ার রাজঘাট) পর্যন্ত মোট ৭৬ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। উভয় প্রকল্পের নকশা অনুযায়ী ‘মহাসড়কের প্রস্থ ৭দশমিক ৩মিটার থেকে বৃদ্ধি করে ১০দশমিক ৩ মিটার করা হবে। একই সঙ্গে সড়কের উভয় পাশে ১মিটার করে মাটির জায়গা রাখা হবে। এতে সড়কের প্রস্থ দাঁড়াবে ১২দশমিক ৩মিটার।
এ সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়নে এ দুই মহাসড়কের উভয় পাশের মোট ৪ হাজার ৮৬৭টি গাছ কাটতে হবে বলে জানিয়েছেন সওজ যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, হাইওয়ে এ্যাক্ট অনুযায়ী গাছসহ সমস্ত স্থাপনা সড়ক ও জনপথের। সড়ক বিভাগ খাজনা পরিশোধ করে থাকে। যখনই সড়ক উন্নয়নের কাজ হাতে নেয়া হয়, তখনই জেলা পরিষদ গাছের মালিকানা দাবি করায় গাছ কাটা নিয়ে দীর্ঘসূত্রীতার সৃষ্টি হয় এবং প্রকল্পের কাজ মারাত্মকভাবে বিঘিœত হয়। তিনি আরও বলেন, জেলা পরিষদের মালিকানা দাবি সঠিক নয়। তারা মালিকানা দাবি করায় বিষয়টি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী পদক্ষেপ। তিনি বলেন, ওই গাছগুলো না কেটে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
জেলা পরিষদের সিনিয়র প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম বলেন, ২০১১ সালের ২ মার্চ আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভূমির নিরঙ্কুশ মালিক জেলা পরিষদ। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের ওই সভায় ৬টি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্তগুলো হলো, পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি-একনেক ও সমন্বয় অনুবিভাগের ২০০৩ সালের ১২ মে প্রজ্ঞাপনে রাস্তার মালিকানা জেলা পরিষদের নিকট থেকে প্রত্যাহার করে অন্যকোন সংস্থার নিকট ন্যস্ত করা হয়নি।
সুত্র আরো জানায়, চলতি বছরের ১৮ মার্চ জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় গাছ ও ভূমি মালিকানা বিষয়ে উপস্থাপন করা হয়। সওজ হাইওয়ে অ্যাক্ট অনুযায়ী ওই জমি ও গাছের মালিকানা দাবি করে। অপর পক্ষে জেলা পরিষদের প্রতিনিধি সওজের দাবির বিরোধীতা করেন।
যশোর জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল বলেন, যশোর-খুলনা, যশোর-বেনাপোল ও যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের জমি যশোর জেলা পরিষদের মালিকানাধীন। ব্রিটিশ, পাকিস্তান আমল থেকে সড়কের যাবতীয় উন্নয়ন কাজ, বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষনের দায়িত্ব জেলা পরিষদ পালন করে আসছে। জেলা পরিষদ কখনো ওই মহাসড়কের জমি কিংবা গাছ হস্তান্তর করেনি। ফলে সওজের মালিকানা দাবি করার সুযোগ নেই। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাইবুর রহমান মোল্লার বক্তব্য, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবেলায় গাছ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অক্সিজেন তৈরি ও কার্বনডাই অক্সাইড শোষনের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। এজন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছাড়া বাকী গাছ কাটলে পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।