Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাহাড়ি ঢলে মীরসরাই প্লাবিত ব্যাপক ক্ষতি

| প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আমিনুল হক, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) থেকে : গত কয়েকদিনের টানা বর্ষন আর সীমাহীন বর্জ্রপাতে আতংকগ্রস্থ হয়ে আছে উপজেলাবাসী। সহস্র প্রায় পরিবার এখন জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। গতকাল শনিবার ( ৩ মে) পর্যন্ত ও থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের দরুন জলাবদ্ধ পানি খাল ছরা দিয়ে সরে গিয়ে ও আবার জমে যাচ্ছে। এতে লাঘব হচ্ছে না মানুষের দূর্ভোগ।
উপজেলার করেরহাট ও ওচমানপুর গ্রামে গত কয়েকদিনে বর্জ্রপাতে ৪ জনের মৃত্যু ও উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অন্তঃত ১০ জন আহত হয়েছে। বৃষ্টির শুরুতেই মুহুর্মুহু বিকট বর্জ্রপাতে প্রাণহানির আশংকায় আতংকগ্রস্থ মীরসরাইবাসী এখন।
উপজেলার ২ থানা, ২ পৌরসভা ও অন্তঃত ১২টি হাটবাজার এলাকায় মানুষের ভোগান্তির অন্তঃ নেই। মীরসরাই পৌর বাজার, করেরহাট বাজার, ছত্তর ভূঞারহাট, কমরআলী বাজারে পানি উঠে যায় লোকজনের দোকানপাটে ও । মীরসরাই সদর ও করেরহাট বাজারে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয় সবচেয়ে বেশী। দোকানপানের কম্পিউটারে, মুদি দোকানের পন্য, ঔষধ, কসমেটিকসের দোকান সর্বত্র পানি উঠে যায় দোকানে। মীরসরাই পৌর বাজারের রহমানিয়া হোমিও হলের চিকিৎসক ডাঃ নজরুল ইসলাম বলেন আমার বয়সে এই বাজারে এমন পানি আর দেখি নাই। তিনি বলেন সকল মহাসড়কের পূর্ব পার্শ্বের ফার্মেসী সহ সকল দোকানপাট এবার সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ হয় । অনেকের অনেক মালামালে পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ফেলে দিতে হয় ।
উপজেলার সর্ব্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্থ ২টি গ্রামের মধ্যে ১টি জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের খিলমুরারী গ্রাম ও অপরটি খৈয়াছরা ইউনিয়নের ফেনাফুনি গ্রাম। খিলমুরারী গ্রামে অনেক মাটির ঘর ধ্বসে গিয়ে গৃহহীন অনেকে মানবেতর জীবন যাপন করছে। আবার ফেনাফুনি গ্রাম ও জলাবদ্ধতায় দরিদ্র অনেকে অনাহারে থাকার খবর পাওয়া গেছে। এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়া আহমেদ সুমন জানান খিলমুরারী গ্রামে নিজে শুক্রবার বিকেলে পরিদর্শন করেছি। সেখানে সরকারি সহযোগিতার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন ও পাঠিয়েছি। তবে ফেনাফুনি গ্রামের বিষয়ে তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যান থেকে কোন তথ্য অবগত হননি বলে জানান। তিনি আরো জানান যেসব এলাকায় দূর্যোগ রয়েছে সেখানে স্থানীয় চেয়ারম্যান তাঁকে অবহিত করলে তিনি উদ্যোগ গ্রহন করবেন। তিনি আরো বলেন বৃষ্টির পানি অনেক স্থানে কমে গিয়েছিল। কিন্তু রাতের এবং আজকের বৃষ্টিতে হয়তো আবার সমস্যা হতে পারে। তবে বৃষ্টি বন্ধ হলেই জলাবদ্ধতা থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বর্জ্রপাত থেকে নিজ নিজ দায়িত্বে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ প্রদান করেন।
আবার উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন, দু’টি পৌরসভার নিমাঞ্চল এলাকাগুলো প্লাবিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে প্রায় হাজার হাজার পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ জলাবদ্ধ হয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। পাহাড়ি ঢলে সৃষ্টি পানিতে ভেসে গেছে মহাসড়কের পূর্বাঞ্চলের এলাকার সকল পুকুর দীঘির মাছ। মীরসরাই কলেজ দীঘির মৎস চাষী এবায়দুর রহমান বলেন আমার ২টি দীঘি সহ এলাকার কোন পুকুর জলাশয়ে মাছ নেই । মাছ চাষীরা ইতিমধ্যে লোকসানের ভারে হতবিহŸল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার খাল-ছরাগুলো সংস্কার না থাকা ও অপরিকল্পিতভাবে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করায় পানি নিস্কাসন সুবিধা না থাকার কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থাপন করা স্লুইচ গেইটগুলো অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ। করেরহাট ইউনিয়নের সরকারতালুক গ্রামে প্রভাবশালী এক ব্যক্তি পানি চলাচলের জায়গায় পুকুর খনন করায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ওই ইউনিয়নের নন্দিপুর, সরকারতালুক, ছত্তরুয়া, দক্ষিন অলিনগর প্লাবিত হয়েছে। ৩নং জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মকছুদ আহমদ চৌধুরী জানান ইউনিয়নের খিলমুরারী গ্রামের পুরোটাই প্লাবিত হয়ে গেছে জলের তোড়ে। অনেকের বসত ঘর তলিয়ে বসতির অযোগ্য হয়ে পড়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি। প্রায় অর্ধশত পরিবার ইতিমধ্যে কোনভাবে ঝুপড়ি বেঁধে আশ্রয় নিয়েছে উঁচু স্থানে। তিনি ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা ও চেয়েছেন বলে জানান।
করেরহাট বাজার এইর উপর সড়ক দিয়ে থৈ থৈ পানিতে যান চলাচল করতে বাঁধার সম্মুক্ষিণ হচ্ছে পারাপারকারীরা। পারছে না নৌকা ও আনতে আবার পারছে না গাড়ীতে চলাচল করতে। ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের মধ্যম ওয়াহেদপুরে বাওয়াছড়ায় একটি ব্রিজ নির্মানে বাঁধ দিয়ে পানি আটকানোর কারণে টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ওই এলাকায় স্থায়ী জলবাদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের উত্তর সোনাপাহাড় এবং বারইয়াহাট পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় শুধুমাত্র অপরিকল্পিতভাবে বহুতল বাড়ি এবং মার্কেট নির্মাণের ফলে মানুষ পানি বন্দি রয়েছে। উপজেলার মীরসরাই সদর ইউনিয়ন ইউনিয়ন ও মীরসরাই পৌরসভার দক্ষিণ তালবাড়িয়া গ্রাম, খইয়াছড়া ইউনিয়নের ফেনাপুনি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, টানা বৃষ্টিতে মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। ঘরে কাঁচা চুলা পানিতে ডুবে যাওয়ায় রান্না-বান্না করতে পারছেনা।
জলাবদ্ধতার কারণে গ্রামগুলোর কোন ছেলে-মেয়ে বৃহস্পতিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে পারেনি। এছাড়া উপজেলার কাটাছরা, খইয়াছরা, মঘাদিয়া, ওচমানপুর, ইছাখালী, দুর্গাপুর, মায়ানী, ওয়াহেদপুর, মিঠানালা (কিছু অংশ) ও করেরহাট ইউনিয়নের কিছু অংশে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার শত শত পুকুর পানিতে ডুবে গেছে। পাহাড়ি ঢল সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় উপজেলার কার্পেটিং সড়ক ও ব্রিক সোলিং সড়কেরও ক্ষতি হয়েছে। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানি সমতলের জায়গায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে। এতে করে আউশ ধানের বীজতলা, গ্রীস্মকালীন সবজী ক্ষেত জিঙ্গা, সিসিঙ্গা, কাঁকরোল, বেগুন, লালশাক, বরবটি, ঢেঁডশ, পুঁইশাক, পাট শাকের ক্ষেত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মেদ জানান, পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ১’শ হেক্টর জমির গ্রীস্মকালীন সবজির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জলাবদ্ধতা থাকলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে। এছাড়া পাহাড়ী ঢলের পানিতে পলি মাটি থাকায় তা কৃষি জমির জন্য সহয়াক হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ