বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মো: হায়দার আলী, গোদাগাড়ী, রাজশাহী: একসময় খাল-বিল, পুকুর, গর্ত-ডোবাগুলো নদীর পানিতে ভরে থাকত। আর এসব পানিতে জন্মাতো কচুরিপানা নামক জলজ উদ্ভিদ। বৃষ্টিপাতের অভাব ও নদীনালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় খাল-বিল, নদী-নালায় পানি না থাকায় গর্ত ডোবা বা খাল-বিলে কচুরিপানার আর দেখা নেই বললেই চলে। শীতকালে কচুরিপানার সবুজ পাতার মাঝে বেগুনি-সাদা রঙের ফুটে ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্যের সৃষ্টি হতো। যা এখন আর তেমন একটা চোখে পড়ে না। রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে এ কচুরিপানা ব্যাপকভাবে দেখা যেত। অনেক আগে এ কচুরিপানা আমাদের দেশে ছিল না। জনশ্রæুতি আছে, এর ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে জনৈক নাবিক শখের বশে সুদূর জার্মান থেকে এ কচুরিপানা আমাদের দেশে এনেছিল বলে এর নাম জার্মানি হয়েছে। তবে এ এলাকায় এ কচুরিপানা বা জার্মানি নামেই পরিচিত। এ জার্মানির রয়েছে ছিল নানা গুণ। এর ডাঁটা-পাতা গবাদিপশুর ভাল খাদ্য। জৈবসার হিসাবে শুকনা পচা কচুপিানারও বেশ চাহিদা ছিল। বিশেষ করে এর বাহারি ফুলের কারণে ছোট-বড় সব বয়সের মানুষের কারণে বেশি পরিচিত। রাস্তার ধারের ডোবার জলে কচুরিপানার সবুজ পাতার মাঝে বেগুনি-সাদা রঙের মিশ্রণে ফুটে থাকা ফুলের সেই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে যেকোনো বয়সের মানুষই মুগ্ধ না হয়ে পারে না। আগেকার দিনে গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এই ফুল তুলে খেলায় মেতে উঠত। গ্রামের স্কুলপড়–য়া ছেলেমেয়েরা স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরার পথে রাস্তার ধারের ডোবার পানিতে ফুটে থাকা ফুল তুলে নিজেরা খেলা করত আর বাড়িতে থাকা ছোট ছোট ভাই-বোনদের হাতে দিয়ে তাদের মন জয় করত। সে দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। কচুরিপানা মূলত, ¯্রােতহীন পানিতে জন্মে। তাই খাল-বিল, পুকুর-ডোবায় দেখতে পাওয়া যায়। কচুরিপানা জলজ উদ্ভিদ। এর পাতার ডাঁটাগুলো অনেকটা পটল আকৃতির এবং ভেতরে স্পঞ্জের মত ফাঁপা হওয়ায় অনায়াসে পানির উপর ভেসে থাকে। এর কোনো বীজ হয় না। গাছের গোড়া থেকে চারা বের হয়ে বংশবৃদ্ধি ঘটে। অনুকূল পরিবেশ পেলে খুব দ্রুত বংশবিস্তার ঘটে। এই কচুরিপানা স্বল্পমাত্রায় জলাশয়ে থাকলে যেমন ভালো তেমনি অধিক মাত্রায় থাকলে আগাছা হিসাবে জলাময় ভরাট ও ফসল যেমন আমন ধানের ক্ষতি করে থাকে। বর্ষাকালে বিলের পানি বৃদ্ধি পেলে বাতাসের চাপে কচুরিপানা ভেসে গিয়ে ধানক্ষেত ঢেকে ফেলে। এতে ধানের পাছ চাপা পড়ে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এই কচুরিপানার কারণে যেমন ফসল বিনষ্ট হয় তেমনি এর রয়েছে অনেক গুণও। কচুরিপানার ডাঁট-পাতা গবাদিপশুর প্রিয় খাদ্য। বর্ষাকালে অনেকেই কচুরিপানার ডাঁটা-পাতা কেটে গরুÑমহিষকে খাওয়ায়। কচুরিপানার শিকড় মাছের প্রিয় খাদ্য। পানির মধ্যে কচুরিপানার ঝুলে থাকা শিকড় অনেক মাছের প্রিয় খাবার। বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে জরাশয়ের পানি কমে গেলে এই কচুরিপানার ছায়ায় জলাশয়ের পানি ঠান্ডা থাকে। ফলে এসব কচুরিপানার নিচে আশ্রয় নিয়ে অতিরিক্ত তাপমাত্রা থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারে বলে মাছেরও কোনো ক্ষতি হয় না। শুষ্ক মৌসুমে বিল-বাঁওড় ও পুকুরে জন্মানো কচুরিপানার গাছ-পাতা তুলে স্তুপ করে রাখলে তা শুকিয়ে পচে ও শুকিয়ে গিয়ে জৈবসার তৈরি হয়। যা কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক সাশ্রয় হয়। আগেকার দিনে মাটির স্পর্শে যাতে গাছের ফল নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে মাঠের পটল, আলু, লাউ, উচ্ছে ইত্যাদির খেতে শুকনা কচুরিপানা বিছিয়ে দেয়া হতো। এতে একদিকে যেমন এসব সবজি পচনের হাত থেকে রক্ষা পেত অপরদিকে এসব শুকনা কচুরিপানার গাছ পচে জমিতে জৈব সার হিসাবে কাজ করত। আগের মতো এলাকায় আর কচুরিপানা না থাকায় বর্তমানে সুতা ও বাঁশের কাবারি দিয়ে তৈরি মাচায় এসব সবজি চাষ করা হয়। আগেকার দিনে গ্রামাঞ্চলে ঘর-বাড়ির ছাদ ঢালাইয়ের পর ছাদ ভেজা রাখতে অল্প পানি কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে দেয়া হতো। তাতে ছাদের ঢালাইয়ের জমাট ভালো হতো। বর্তমানে পানি না থাকায় বিল-বাঁওড়, পুকুর-ডোবায় আর কচুরিপানা তেমন একটা দেখা যায় না। চোখে পড়েনা শীতকালে কচুরিপানার সবুজ পাতার মাঝে বেগুনি সাদা আর হলুদের মিশ্রণে ফুটে থাকা হাজার হাজার ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য। গোদাগাড়ী উপজেলা প্রানিজ সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, কচুপানা গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়, এবং কম্পোষ্ট করে জৈব সার হিসেবে কৃষিতে ব্যবহার করা যায়। যেহেতু আমাদের দেশে গোচারণ ভূমি দিনে দিনে কমে যাচ্ছে ফলে দানাদার খাদ্যের চাপ পড়ছে। দানাদার খাবার কিনে আর্থিকভাবে খামারী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যদি কচুরিপানাকে পুকুর, ডোবায়, বিলে জন্মানোর সুযোগ দেয়া হয় তবে গোখাদ্যের অভাব পূরণ হবে। এটা পরিবেশ বান্ধব। কৃষিতে জৈব সারের অভাব পূরণ করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।