Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

২৫ বছর পর ঘর পেয়ে বৃদ্ধা অঞ্জলির স্বপ্ন পূরণ

| প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুÐ থেকে : ষাটোর্ধ হতদরিদ্র বৃদ্ধা অঞ্জলি এখন আনন্দে আতœহারা। তার এ খুশির যেন কোন সীমা নেই। যাকে সামনে দেখছেন খুশিতে তাকেই জড়িয়ে ধরছেন তিনি। কারো বহু কাংখিত স্বপ্ন পূরণের তৃপ্তি যে কত মধুর হতে পারে তা উচ্ছ¡সিত এ বৃদ্ধাকে না দেখলে কল্পনাও করা যাবে না। আর তিনি আনন্দে আতœহারা হবেন নাই-বা কেন ? দীর্ঘ ২৫ বছর পর তার নিজস্ব ঘর হলো। গতকাল (শুক্রবার) তাকে এ ঘরটি দিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান। হোক সেটি টিনের তৈরী। তবুও আজ থেকে আর অন্যের করুনায় বাঁচতে হবে না। নিজের ঘরেই পরম শান্তিতে ঘুমাবেন তিনি। এ কারণেই তার এত খুশি। দরিদ্র এ বৃদ্ধার পুরো নাম অঞ্জলি মালাকার। তিনি সীতাকুÐের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিন বাঁশবাড়িয়া নামপাড়ার বাসিন্দা মৃত কৃষ্ণ মালাকারের স্ত্রী।
স্থানীয়রা জানান, অঞ্জলির আদি বাড়ি ফেনীর মাষ্টার পাড়া এলাকায়। ২৫ বছর আগে সেখানে ভিটে মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে স্বামীর সাথে সীতাকুÐের দক্ষিণ বাঁশবাড়িয়া গ্রামে চলে আসেন তিনি। অবশ্য শেষ পর্যন্ত সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এ স্বপ্নটি পূরণ করে দিয়েছেন বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শওকত আলী জাহাঙ্গীর। ঘরটি পেয়ে তার অনুভূতি কি জানতে চাইলে খুশিতে চোখের কোনে পানি চলে আসে বৃদ্ধা অঞ্জলির। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, ২৫টি বছর অন্যের জায়গায় ছিলাম। নিজের একটা কুড়ে ঘরও ছিলো না। ঘর ছিলো না বলে মনে অনেক দুঃখ ছিলো। এ দুঃখ নিয়েই আমার স্বামী অন্যের বাড়িতে মারা গেল। আমার ২ ছেলে এবং ২ মেয়ে আছে। সবাইকে নিয়ে অন্যের আশ্রয়ে ছিলাম। অনেক স্বপ্ন ছিলো একদিন নিজের ঘর হবে। দুই ছেলেই দিনমুজুর। বহু কষ্টে সামান্য সামান্য টাকা জমিয়ে ৭/৮বছর আগে গ্রামের ভেতর এই ছোট্ট এক টুকরো জায়গা কিনেছিলো। কিন্তু সেখানে ঘর করার মত আর্থিক সামর্থ ছিলো না বলে জায়গাটি খালি পড়েছিলো। তিনি বলেন, শেষে আমাদের চেয়ারম্যান শওকত আলী জাহাঙ্গীর এ জায়গায় ঘর করে দেবার কথা বলে। তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না যে আসলেই ঘরটি পাব। চেয়ারম্যান অনেক টাকা খরচ করে আমাদের ঘরটি বানিয়ে দিলেন। অঞ্জলি বলেন, স্বামী তো অন্যের ঘরেই মারা গেছে। আমার এই ভেবে সবচেয়ে ভালো লাগছে যে অন্তত নিজের বাড়িতে মরতে পারব। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শওকত আলী জাহাঙ্গীর প্রতিবেদককে বলেন, আমার এলাকায় এরকমই কিছু দরিদ্র অসহায় মানুষ আছে। তাদের দুরাবস্থার কথা জেনে আমি চিন্তা করেছি যেকোন উপায়ে তাদের সবাইকে ঘর দিয়ে মাথার গোঁজার ব্যবস্থা করে দেব। কাউকে ইউনিয়ন পরিষদের অনুদান থেকে, কাউকে জাকাত ফান্ড থেকে কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আমি ঘর বানিয়ে দিতে চাই। এ উদ্দ্যোগের বাস্তবায়ন শুরু করেছি বৃদ্ধা অঞ্জলিকে দিয়ে। তিনি পরিবার নিয়ে গত ২৫ বছর এখানে বাস করছেন। এসময় তার সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ ইসহাক, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া, উত্তর জেলা আ’লীগ নেতা মহিউদ্দিন বাবলু, সীতাকুÐ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৌমিত্র চক্রবর্তী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক শেখ সালাউদ্দিন, ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি আরিফুল আলম রাজু, সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহাজাহান সহ দলীয় নেতৃবৃন্দ ও এলাকার মান্যগন্য ব্যক্তি বর্গ। ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী আরো বলেন, আরো কয়েকজনকে ঘর দেওয়ার কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে। আমার ইউনিয়নে যেন একজন মানুষও গৃহহীন না থাকে সেটাই আমার চাওয়া। তিনি বলেন, সত্যিই ভালো কাজ করার আনন্দই আলাদা। তাকে ঘরটি দিতে পেরে আমার শান্তি লাগছে। এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব দিদারুল আলম প্রতিবেদককে বলেন, গৃহহীনকে গৃহ প্রদানের মত উদ্দ্যোগ যিনিই নিয়ে থাকুক না কেন তিনি সাধুবাদ পাবার যোগ্য। স্থানীয় চেয়ারম্যান শওকত আলী সবসময় জনগনের কল্যাণে নিবেদিত থাকেন। এবার আরো একটি মহৎ উদ্দ্যোগ নিয়েছেন। ভবিষ্যতে তিনি এ ধরণের উদ্দ্যোগ নিলে তাকে তিনিও সার্বিক সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ