Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুরো বাজেটই উজ্জ্বল

বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী

| প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দ্রব্যমূল্য বাড়বে না; দুই মাসের মধ্যে সঞ্চয়পত্রের সুদহার সমন্বয় করা হবে
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : নতুন অর্থবছরের জন্য ঘোষিত বাজেটের ‘কোথাও কোন দুর্বলতা নেই’ উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘পুরো বাজেটই উজ্জ্বল’। গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ এটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ বাজেট, হলফ করে বলতে পারি। এই বেস্ট বাজেটের জন্য যে পরিশ্রম করা দরকার আমি করেছি। বাজেট তৈরির সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তারাও যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন। বাজেটের কোথাও দুর্বলতা আছে বলে আমার মনে হয় না।”এর আগেরদিন বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী সংসদে আগামি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন।
মুহিত বলেন, “আমার মতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট হার বাস্তবায়ন হলেও বাড়বে না দ্রব্যমূল্য। প্রত্যেক বাজেটই উচ্চাভিলাষী, কোনো বাজেটেরই আকার আগের বাজেটের চেয়ে কম হয় না। এ বাজেটে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়েছে। আর এই বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা নিয়েও আমি আত্মবিশ্বাসী।”
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব কাজী শফিকুল আযম।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার সমন্বয় করা হবে। আগে অনেক দিন পর পর সুদের হার সমন্বয় করা হতো। কিন্তু এখন প্রতিবছরে অন্তত একবার সমন্বয় করা হবে। কারণ বাজারের সুদহার থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদহারে অনেক বৈষম্য হওয়ার যৌক্তিকতা নেই। তবে অল্প ব্যবধান থাকবে। বাজারে ৭ শতাংশ আর সঞ্চয়পত্রে ১১ শতাংশ, এটা ঠিক না।  
ব্যাংক আমানতে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, “যারা একলাখ টাকা ব্যাংকে রাখতে পারেন, তারা আমাদের দেশের তুলনায় সম্পদশালী। তারা বাড়তি ভারটা বহন করতে পারবেন, সমস্যা হবে না।”
প্রস্তাবিত বাজেটে, বছরের যে কোনো সময় ব্যাংক হিসেবে এক লাখ টাকার বেশি লেনদেনের উপর আবগারি শুল্ক বিদ্যমান ৫শ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮শ টাকা করা হয়েছে। নতুন বাজেটে আবগারি শুল্ক আরোপের সীমা ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ আগে বছরের যে কোনো সময় ২০ হাজার টাকা লেনদেনে শুল্ক আরোপ করা হতো, এখন ১ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেনে শুল্ক আরোপ করা হবে না।
নতুন বাজেট প্রস্তাবে ২০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেনে বিদ্যমান ১৫০ টাকা আবগারি শুল্ক মওকুফ করার তথ্য তুলে ধরেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, “১ লাখ টাকার লেনদেনে এখন ১৫০ টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ করা আছে। এখন সেটা আর দিতে হবে না।”
মুহিত বলেন, “যাদের টাকা এক লাখের উপরে থাকবে কেবল তাদের উপরই একটা কর ধার্য্য করেছি। বড়লোকের ক্ষেত্রে আমাদের করটা ছিল, কিন্তু যারা মিড লেভেলে ছিল তারা এর অন্তর্ভুক্ত ছিল না। একলাখ টাকার নিচে যারা আছেন, তাদের ভার থেকে মুক্ত করাই যথেষ্ট।”
নতুন বাজেটে ব্যাংক একাউন্টে লেনদেনে ১ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে হতে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিদ্যমান ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা, ১০ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে হতে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ১ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ২ হাজার ৫০০ টাকা, ১ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে হতে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ৭ হাজার ৫০০ টাকার পরিবর্তে ১২ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে বিদ্যমান ১৫ হাজার টাকার পরিবর্তে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
তবে বৃহস্পতিবার বাজেট বক্তৃতার পর ব্যাংক লেনদেনে আবগারি শুল্ক আরোপের ভিন্ন হার উল্লেখ করে এনবিআর এক প্রজ্ঞাপন জারি করলে সংশয়ের সৃষ্টি হয়। এনবিআর চেয়ারম্যান বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “এক্ষেত্রে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটে আবগারি শুল্ক আরোপের হার চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।”
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মুহিত বলেন, “ব্যাংক খাতে লুটপাট হচ্ছে। আগে সরকারি ব্যাংকগুলোতে হতো, এখন বেসরকারি ব্যাংকেও হচ্ছেÑ এই অ্যাজামশন আমাদের মানতে কষ্ট হচ্ছে। কারণ ব্যাংক খাতে জালিয়াতি হয়, চুরিচামারি হয়। সব সময় হয়, সব দেশেই হয়।”
“জালিয়াতি হয়তো বা কোথাও একটু বেশি হয়। এখন আমরা সেটা একটু কমাতে পেরেছি। ব্যাংক লুটপাট হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না। তবে দুই-একটি ব্যাংকে সমস্যা আছে। সমস্যাগুলো সমাধানেরও পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।’
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের পর ব্যাংক খাত নিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। তিনি বলেন, জনগণের টাকা নিয়ে সরকারি ব্যাংকগুলোকে দেয়া হয় এ কথা সত্য। তবে দেশের উন্নয়নে এসব ব্যাংকের ভূমিকা রয়েছে। কারণ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার এসব ব্যাংক থেকে অর্থ নিয়ে থাকে।
বাজেটে প্রস্তাবিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের ফলে দ্রব্যমূল্য বাড়বে না বলে দাবি করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “নতুন ভ্যাট আইন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের স্পর্শ করবে না।”
অর্থমন্ত্রী বলেন, আগে ৩০-৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভার হলে ৩ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হতো। প্রস্তাবিত বাজেটে এই টার্নওভারের হার করা হয়েছে ৩৬ লাখ টাকা থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত। এর মানে টার্নওভারের পরিসীমা বাড়ানোর ফলে ক্ষুদ্র ও মধ্য শ্রেণির ব্যবসায়ীদের ভ্যাট দিতে হবে না। বড় ব্যবসায়ীরা ৪ শতাংশ হারে ভ্যাট দিবে। এতে দ্রব্যমূল্যে প্রভাব পড়বে না।
ইংলিশ মিডিয়ামে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যাট আছে। প্রস্তাবিত বাজেটে তা ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “সরকার শিক্ষায় সমতা আনার বিষয়ে কাজ করছে। ইংলিশ মিডিয়ামে অতিরিক্ত ভ্যাট আরোপের ফলে বৈষম্য হবে না।”
‘প্রস্তাবিত বাজেটের প্রভাবে চালের দাম বাড়েনি’ দাবি করে অর্থমন্ত্রী বলেন, হাওর অঞ্চলে আগাম বন্যায় বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ায় চালের বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। তবে চালের দাম দ্রæত স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
এই প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধরী বলেন, এবার হাওর অঞ্চলের দুর্যোগের পাশাপাশি ফাল্গুন মাসে তাপমাত্রার পরিমাণ খুব বেশি ছিল। সে কারণে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থেকে কিছু কম হয়েছে। তবে সরকারিভাবে বেশ কিছু চাল আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তাছাড়া আমরা এখন বোরো ধানের পাশাপশি আউশ ধান চাষের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছি। এবার আউশ ধানের উৎপাদন বাড়বে। তাই খুব দ্রæত চালের বাজার স্বাভাবিক হবে।
বাজেটে বৈদেশিক সহায়তা ধরা হয়েছে ২৭ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এর মধ্যে অনুদান ধরা হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা। ‘এটা অনেক বেশি তবে আদায় সম্ভব’Ñ এমন মত অর্থমন্ত্রীর। তবে বাস্তবে কোনো বছরই এ পরিমাণ টাকা ছাড় করেনি দাতারা।
মুহিত বলেন, “গত কয়েক বছর থেকে আমরা বিপুল পরিমাণ সহায়তা আদায় করছি। পাইপ লাইনে ব্যাপক টাকা রয়ে গেছে। কিন্তু ব্যবহার করতে পারছি না। আশা করছি সামনে আমাদের প্রকল্প সহায়তা বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়বে।”
অর্থমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ বাস্তবায়নকারি সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে থাকে। এবার সে আলোচনা একটু বাড়াতে হবে।
কর্মসংস্থানের বিষয়ে মুহিত বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি যদি এক শতাংশ বাড়ে, তাহলে দেড় লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়। এই হিসাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়লে আমাদের কর্মসংস্থানের ঘাটতি থাকবে না।



 

Show all comments
  • তুহিন ৩ জুন, ২০১৭, ২:০০ এএম says : 0
    আপনার কাছে তো উজ্জ্বল মনে হবেই !!!!!!!!!!!!!!!!!!!
    Total Reply(0) Reply
  • S. Anwar ৩ জুন, ২০১৭, ৪:৪৩ এএম says : 1
    পঁচে গেলেও গোয়ালা তার দই এর কীর্তন গেয়েই যাবে। কেবল পার্থক্য হলো, খেতে না চাইলে প্রকৃত গোয়ালা জোর করে তার পঁচা দই জনগনকে খাওয়াতে পারে না কিন্তু সরকার গোয়ালা আরো খারাপ কিছুও খাওয়াতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • Ashraf Hossain ৩ জুন, ২০১৭, ১২:৪০ পিএম says : 0
    মাননীয় প্রধান মন্ত্রী আপনি অবশ্যই বাজেটটি দেখবেন এবং জনবান্ধব বাজেটের দিকে নজর দিবেন। বাজেট নিয়া আমাদের মত সাধারন মানুষ বিপদে আছেন। মানুষ ক্ষুবদ্ ।
    Total Reply(0) Reply
  • Shah Faroque ৩ জুন, ২০১৭, ১২:৪১ পিএম says : 0
    Killing middle class and poor becomes more poor .............. budget
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাজেট

১৩ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ