বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : হঠাৎকরেই খুলনায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। প্রতিদিনে লাশের মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন জ্ঞাত-অজ্ঞাত মুখ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পুত্রের হাতে পিতা খুন ও নদীতে মস্তকবিহীন লাশ উদ্ধারের ঘটনার পর দূর্ভাবনায় খুলনাবাসী। এরআগে, গত বুধবার গুলিবিদ্ধ অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আর গত ২৫ মে রাতে চরমপন্থীরা খুন করে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলাউদ্দিন মিঠু ও তার দেহরক্ষী নওশের আলীকে। গেল এপ্রিলে খুলনায় পাঁচটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল। আর গত মাসে তার সংখ্যা আরও বেশি।তবে পুলিশ বলছে, বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বরং রমজানে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, খুলনা মহানগরীর ১নং বয়রা ক্রস রোড এলাকায় ধারালো বটির কোপে শেখ মোস্তাক আলী ওরফে হোন্ডার ফকির (৬৪) নামে এক গ্যারেজ ব্যবসায়ী খুন হয়েছেন। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী সোনাডাঙ্গা থানার এস আই উজ্জ্বল কুমার সরকার জানান, পারিবারিক বিরোধের জেরধরে নিহতের ছেলে রাস্তি শেখ (২২) ধারালো বটি দিয়ে তার গলায় আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। ছেলেকে আটকের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্ত্রী রোজিনা বেগমকে (৩৬) আটক করা হয়। নিহত মোস্তাক আলী স্থানীয় মৃত অখিল ফকিরের ছেলে। তিনি ইজিবাইকের গ্যারেজের ব্যবসা করতেন। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। সোনাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: মোমতাজুল হক বলেন, ঘটনার কিছু সময় আগে নিহতের স্ত্রী বটি দিয়ে মাছ কাটছিলেন। এসময় স্বামীর সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। ঘটনাস্থলে ছেলেও উপস্থিত ছিল। স্ত্রী বা ছেলে বটি দিয়ে তার গলায় আঘাত করেছে না-কি বা বটি কেড়ে মোস্তাক নিজের গলায় আঘাত করেছেন, তা স্পষ্ট নয়। তদন্তের পর প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহতের স্ত্রী রোজিনা বেগমকে থানায় আনা হয়েছে। ছেলেকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। নিহত মোস্তাক আলী কেসিসি’র প্যানেল মেয়র-২ ও ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজের ফুফাতো ভাই বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
অপরদিকে, খুলনায় রূপসা উপজেলার শ্রীফলতলা এলাকায় আঠারোবেকি নদীর ঘাট থেকে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বস্তাবন্দি মস্তকবিহীন অজ্ঞাত একটি মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
শ্রীফলতলা পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ কমলকৃষ্ণ দাস জানান, স্থানীয়দের থেকে খবর পেয়ে আঠারোবেকি নদীর হিরো ব্রিকস ফিল্ড এলাকায় একটি ইটভাটার ঘাটে বস্তাবন্দি মস্তকবিহীন লাশটি উদ্ধার করা হয়। শুধু ধড় পাওয়া গেছে, মাথা পাওয়া যায়নি। তার বাম হাত ভাঙা এবং দুই পা রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। শরীরে পচন ধরেছে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। অন্য কোথাও গলা কেটে হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দি করে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হতে পারে বলে ধারণা পুলিশের এই কর্মকর্তার।
এরআগে, গত বুধবার সকালে খুলনা মহানগরীর আড়ংঘাটা বাইপাস সড়কের আকমানের মোড়ের পাশে খাল থেকে অজ্ঞাত (৫৫) ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আড়ংঘাটা থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই শেখ হিলাল উদ্দীন জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে- বুধবার ভোর রাতের দিকে গুলি করে হত্যার পর লাশটি খালে ফেলে দিয়েছে দুর্বৃত্ত¡রা। তার মাথায় একটি গুলির চিহ্ন রয়েছে। এখনও পর্যন্ত তার কোন পরিচয় পাওয়া যায়নি। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে লাশটি আনঞ্জুমানে মফিদুলে দাফন করা হয়েছে।
তারআগে,গত ২৫ মে রাত ১০টার দিকে বাড়ীর সামনে ব্যক্তিগত অফিসে অস্ত্রধারী দেহরক্ষী নওশের আলীসহ চরমপন্থীরাই গুলিতে নিহত হন ফুলতলা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলাউদ্দিন মিঠু। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার নিবাস চন্দ্র মাঝি বলেন, “খুলনা মহানগরীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে এখন অনেক ভাল। দু/একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতেই পারে। এছাড়া, পবিত্র রমজানে খুলনা মহানগরীতে আইন-শৃংখলা রক্ষায় পুলিশ সদস্যরা তিন ধাপে দায়িত্ব পালন করছেন। যে কোনধরনের অপরাধ এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অপরাধী কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। এছাড়াও নগরবাসীকে সজাগ দৃষ্টিতে সচেতন থাকতে হবে। বদলী হয়ে গেছেন, তাই খুলনাবাসীর কাছে আর্শীবাদ চাইলেন তিনি।”
খুলনা জেলা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত সুপার মো: সফিউল্লাহ বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ফুলতলা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সরদার আলাউদ্দিনসহ ডাবল হত্যাকান্ডের মোটিভ এখন পরিষ্কার। বাকী হত্যাকারীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।