পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট ষ আকার বেড়েছে ২৬.২% ষ ৭.৪% প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ষ ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকার ঘাটতি ষ ১ জুলাই থেকে ১৫% একক ভ্যাট হার কার্যকর ষ সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেবে ৩০ হাজার কোটি টাকা
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের’ শিরোনামে গতকাল জাতীয় সংসদে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। নতুন অর্থ বছরের জন্য বাজেটের প্রস্তাবিত আকার ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা যা দেশের মোট জিডিপির ১৮ শতাংশ। আর জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। আয়-ব্যয়ের হিসাবে ঘাটতি প্রায় ১ লাখ ৬ হাজার ৭শ ৭২ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রীর আশা, দেশজ উৎপাদন ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হারে বাড়বে। আর জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির হার থাকবে সাড়ে ৫ শতাংশের মধ্যেই। মধ্য আয়ের দেশের স্বপ্ন পূরণের স্পষ্ট পথনকশার সাথে সাথে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশের কাতারে সামিল হওয়ার দিকনির্দেশনাও রয়েছে বাজেটে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে সদা হাসিমুখের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে প্রবেশ করেন দেড়টায়। রমজান মাস, ইফতারের আগে বক্তৃতা শেষ করার তাড়া, সেজন্য কালো ব্রিফকেসে বন্দী
বাজেট উত্থাপনের সময় একটু এগিয়ে নিয়ে আসেন অর্থমন্ত্রী। স্পিকার ডক্টর শিরীন শারমিন চৌধুরীর অনুমতি নিয়ে চলতি অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট এবং আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশ শুরু করেন অর্থমন্ত্রী।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে মুহিত ব্যয় করবেন ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার ব্যয় পরিকল্পনায় সংশোধন এনে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা। এই হিসেবে এবারে বাজেট বাড়ছে ২৬ দশমিক দুই শতাংশ।
৪ লাখ ২’শ ৬৬ কোটি টাকা যে ব্যয় করবেন অর্থমন্ত্রী, কিন্তু টাকাটা আসবে কোত্থেকে? জনগণের কর এবং বিদেশী অনুদানÑ সব মিলে আয় হবে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৪শ ৯৪ কোটি টাকা। সুতরাং ব্যয় ও আয়ের মধ্যে ফারাক অর্থাৎ বাজেট ঘাটতি ১ লাখ ৬ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা যা জিডিপি’র ৫ দশমিক শূণ্য ৪ শতাংশ। রাজস্ব আয়ের ২ লাখ ৪৮ হাজার ১’শ ৯০ কোটি টাকাই আসবে এনবিআর আহরিত কর থেকে। এনবিআর বহির্ভূত কর ৮ হাজার ৬শ ৬২ কোটি টাকা। এখানে যোগ হবে মাদক শুল্ক, যানবাহন কর, ভূমি রাজস্ব এবং নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প বিক্রির অর্থ। আর কর ব্যতীত প্রাপ্তি ৩১ হাজার ১শ ৭৯ কোটি টাকা আসবে সরকারের বিভিন্ন বিনিয়োগের লভ্যাংশ ও মুনাফা, প্রশাসনিক ফি, ভাড়া ও ইজারা, সেতুর টোল, লেভিসহ এরকম বিভিন্ন আয় থেকে। রাজস্ব আয়ের বড় অংশের যোগান আয়কর, শুল্ক ও মূসক থেকে আসবে। তবে সব কিছু ছাপিয়ে রাজস্ব আয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে ১ জুলাই থেকে মূসক আইন কার্যকর করা।
দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা ভ্যাট আইন নতুন অর্থবছর থেকে কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী, যাতে পণ্য ও সেবা বিক্রির ওপর অভিন্ন ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট প্রযোজ্য হবে। এই হারে ভ্যাট আদায়ের মাধ্যমে ৯১ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের আশা করছেন মুহিত, যা এনবিআরের মাধ্যমে তার দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ পরিকল্পনার ৩৬.৮ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে বাজেট বক্তৃতায় মুহিত বলেন, “১৯৯১ সাল থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপিত হয়েছে এবং তাতে ভোক্তারা ও ব্যবসায়ীরা অভ্যস্ত হয়ে গেছেন। আমি ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশেই বহাল রাখার প্রস্তাব করছি। মূল্য সংযোজন কর এক ও অভিন্ন হারে প্রয়োগ করা হবে এবং আগামী তিন বছর তা অপরিবর্তিত থাকবে।”
২০১২ সালের ‘মূসক ও সম্পূরক শুল্ক আইন’ অনুযায়ী ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর করার কথা ছিল গত বছরের ১ জুলাই থেকে। কিন্তু ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে তা পিছিয়ে দেয় সরকার। তখন বিদ্যমান প্যাকেজ ভ্যাটের হার বাড়িয়ে বলা হয়, ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নেওয়া হবে। ব্যবসায়ীরা তা আরও পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে এলেও শেষ পর্যন্ত আগের সিদ্ধান্তেই অটল থাকলেন মুহিত।
তবে প্রতিশ্রæতি অনুযায়ী ভ্যাট অব্যাহতির সীমা বছরে ৩০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৬ লাখ টাকা করার প্রস্তাব রেখেছেন তিনি। অর্থাৎ মাসে গড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত টার্নওভারধারী প্রতিষ্ঠানের কোনো কর দিতে হবে না।
সেই সঙ্গে, টার্নওভার করের সীমা বছরে ৮০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। অর্থাৎ যেসব প্রতিষ্ঠানের মাসিক টার্নওভার গড়ে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচে, তাদের ৪ শতাংশ হারে টার্নওভার কর দিতে হবে। এতদিন ৩০ লাখ থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক টার্নওভারের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য ছিল।
বিদায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ভ্যাট থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা ছিল ৭২ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। লক্ষ্য পূরণ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৬৮ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
৪ লাখ ২শ ৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ের মধ্যে বড় দুই খাত উন্নয়ন ব্যয় এবং অনুন্নয়ন ব্যয়। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিসহ (এডিপি) উন্নয়ন ব্যয় আগেই চূড়ান্ত হয়েছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ১৩ কোটি টাকা। এই অর্থ দিয়েই তৈরি হচ্ছে পদ্মা সেতু, মেট্টো রেল, মাতারবাড়ী তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী নদীর নীচ দিয়ে টানেল এবং রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বৃহদাকার সব উন্নয়ন প্রকল্প। আবার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনসহ সব ধরনের অবকাঠামো নির্মাণও হয় এই উন্নয়ন বাজেটের বরাদ্দ থেকে। বরাবরের মতো এবারও সবচে গুরুত্ব পেয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী এবং পরিবহন ও যোগাযোগ খাত।
রাস্তা-ঘাট, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ নানা ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের বাইরে সরকারের যে ব্যয় তাই অনুন্নয়ন ব্যয়। এর বড় অংশ চলে যায় সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, পেনশন পরিশোধ এবং দেশের ভেতর ও বিদেশ থেকে নেয়া ঋণের সুদ পরিশোধে, ভর্তুকি ও প্রণোদনা ব্যয় মেটাতে। আবার সরকার বছরজুড়ে বিভিন ধরনের পূর্ত কার্য করে, শেয়ার ও ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ করে, তার সংস্থানও হয় অনুন্নয়ন মূলধনী ব্যয় থেকে।
এবার অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা, যা বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত অনুন্নয়ন বাজেটের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি। এই ব্যয়ের মধ্যে ৫৩ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধেই যাবে, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ের ২২ শতাংশ।
আয় ও ব্যয়ের অংক তো জানা হলো। এখন প্রশ্ন, এই দুইয়ের যে ফারাক, সেই ঘাটতি মেটানো হবে কোথা থেকে? বিদেশি অনুদান বাদ দিলে বাজেটে যে ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৬ কোটি টাকার ঘাটতি, তা মেটাতে বরাবরের মতো এবারও অর্থমন্ত্রী ভর করেছেন দেশের ভেতরের ব্যাংক থেকে ধার-কর্জ, বিদেশী ঋণ এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে অর্থ পাওয়ার ওপর। এখানে বিদেশি অনুদান বাদ দিয়ে হিসাব করা হলো এই কারণে যে, কোন বছরই দাতা দেশগুলোর অনুদান প্রতিশ্রæত মাত্রায় আসে না।
বিশাল ঘাটতি মেটাতে নতুন বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা ধার করবে সরকার। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ধার করার লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। আর ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা।
বিদায়ী অর্থবছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিল ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। কিন্তু গতকাল উপস্থাপিত সংশোধিত বাজেটে তা ৪৫ হাজার কোটি টাকায় নেওয়ার কথা জানান অর্থমন্ত্রী। ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য মূল বাজেটের ৩৮ হাজার ৯৩৮ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ২৩ হাজার ৯০৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয় সংশোধিত বাজেটে।
বাজেট বক্তৃতার একদম শেষে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, যেভাবে ব্যয় পরিকল্পনা করা হয়েছে তাতে ২০২১ সালের আগেই চরম দারিদ্র্যকে বিদায় করতে চান তিনি। যেতে চান বহুদূর। চরম দারিদ্র্যকে বিদায় করার জন্য সামাজিক খাতকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের চতুর্থ বাজেট এটি। আর ২০০৮ সালে নির্বাচিত হবার পর বর্তমান সরকারের নবম বাজেট। অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটা আবদুল মুহিতের ১১তম বাজেট। বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০০৯-১০ অর্থ বছরে ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৫ কোটি টাকার বাজেট দিয়ে শুরু করেছিলেন মুহিত।
গতকাল দুপুরে স্পিকার ডক্টর শিরীন শারমিনের অনুমতি নিয়ে অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট ও আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট পেশ শুরু করেন। এর আগে মন্ত্রিপরিষদ সভায় বাজেট অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
৮৪ বছর বয়সী অর্থমন্ত্রী বক্তৃতায় বলেন, তাঁর এই বাজেট বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে শেষ কার্যকরি বাজেট।
২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেটে বিনিয়োগ বাড়িয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে বেশি ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ জন্য বিশাল এই বাজেটে ঘাটতি জিডিপি’র ৫ দশমিক শূণ্য ৪ শতাংশ। তাই এই বাজেটকে অনেকে ‘বিশাল দায়ের বাজেট’ বলছেন।
বাজেট উপস্থাপনা শুরু হয় দেশের অর্থনীতিতে গত সাত বছরের সাফল্যের একটি মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে। এবার মূল বাজেটের যে আকার মুহিত ধরেছেন, তা বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৮ শতাংশ। গতবছর প্রস্তাবিত বাজেট ছিল জিডিপির ১৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।