বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : ইফতারিতে রোজাদারদের নিকট বেগুনী হচ্ছে একটি মুখরোচক জনপ্রিয় খাবার। সন্ধ্যা রাত ও সেহরিতে বেগুনের ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়ে রোজাদাররা পরিতৃপ্ত হয়। প্রায় সকল শ্রেণী পেশার লোকজনের নিকটই বেগুন অতি জনপ্রিয় সব্জী। এমন মানুষ কম যারা প্রাত্যহিক কাঁচা বাজারে গিয়ে বেগুন কিনে না। বেগুনের এই জনপ্রিয়তার সুযোগে সব্জী ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষের পকেট থেকে হাতিয়ে নেয় লক্ষ লক্ষ টাকা। প্রতি বছরই রোজা এলে বেগুনের দাম কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়া হয়। এ বছরও রোজা আসার পূর্বেই বেগুনের বাজার কব্জা করে নিয়েছে পাইকারী ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা। তারা নরসিংদীর বেগুন চাষীদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে বেগুনের ক্ষেত অগ্রীম কিনে নিয়ে গেছে। রোজা আসার পর বেগুনের মূল্য বেড়ে গেছে ২ থেকে ৩ গুন। ২০ টাকা কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে। চাষীদের নিকট থেকে কম দামে কিনে নিয়ে এসব বেগুন এখন চড়া দামে বিক্রি করছে। রোজাদারসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ এই চড়া দামেই বেগুন কিনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। প্রবাদ আছে ‘য্যায়সার সাথে ত্যায়সা মিলে, শুটকির সাথে বেগুন মিলে’। রোজার ইফতারীতে বেগুনী ছাড়াও লম্বা বেগুনের রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার। রোজার মাসে বেগুন পুড়ে পিয়াজ কুচি করে ভর্তা বানিয়ে সর্ষের তেল দিয়ে গরম ভাতের সাথে খায় বাঙ্গালী নারী পুরুষেরা। শুটকি দিয়ে বেগুন রেধে খেতে পছন্দ করে বাঙ্গালী নারী পুরুষেরা। যে কোন মাছের সাথেই বেগুনের রয়েছে রাসায়নিক সম্পর্ক। ইলিশের সাথে বেগুন, পাঙ্গাসের সাথে বেগুন, চিংড়ি মাছের সাথে বেগুন, ফলি মাছের সাথে বেগুন, পাবদা মাছের সাথে বেগুন। রুই, কাতল, মৃগেল, বোয়াল, আইড়, সকল প্রকার কার্প মাছের সাথে বেগুনের রয়েছে অভাবিত রাসায়নিক সম্পর্ক। বিশেষ করে বেলে মাছের সাথে বেগুনের কাঁচা ঝোলের স্বাদের কথা বাঙ্গালী সমাজের মানুষের মুখে মুখে যুগযুগ উচ্চারিত হয়ে আসছে। এক কথায় এমন মাছের সংখ্যা কম যার সাথে বেগুনের রাসায়নিক মিল নেই। আর এ কারণেই বাঙ্গালী সমাজে বেগুনের রয়েছে অস্বাভাবিক কদর। নরসিংদীর কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নরসিংদী জেলায় বেগুনের ব্যাপক চাষাবাদ ও ফলন হয়। নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলায় প্রতি বছর ১ থেকে দেড় হাজার হেক্টর জমিতে বেগুন চাষাবাদ হয়ে থাকে। ফলন হয় কমবেশী ৪৫ থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন। এসব বেগুন উৎপাদনের জন্য নরসিংদীকে বলা হয় বেগুনের জেলা। নরসিংদীতে উৎপাদিত বেগুন রাজধানী ঢাকা শহর ও আশেপাশের জেলাগুলোর ৪০ ভাগ চাহিদা পূরন করে। সুদূর সিলেট থেকে সব্জী ব্যবসায়ীরা এসে ট্রাক ভর্তি করে নরসিংদী, শিবপুর, মনোহরদী, বেলাব ও রায়পুরার বিভিন্ন বাজার থেকে বেগুন নিয়ে যায়। দেশে বন্যা হলে বা অতি বৃষ্টি হলে বেগুনের ফলন কমে যায়। সারা দেশে যখন বেগুন থাকেনা তখনও নরসিংদীর পাহাড়ী এলাকায় বেগুন উৎপাদিত হয়। আর এ সুযোগকে কাজে লাগায় মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়ারা। চাষীদের কাছ থেকে ২৫/৩০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে ঢাকা শহরে ১০০ টাকা কেজি দরে বেগুন বিক্রি করে ফড়িয়ারা। ফড়িয়াদের কারণে নরসিংদীর স্থানীয় জনগনকেও চড়াদামে বেগুন কিনে খেতে হয়। রোজার আগে উৎপাদন মৌসুমের প্রথম দিকে এক কেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে। এ বছর মার্চ মাসে অনাকাঙ্খিতভাবে বৃষ্টিপাত হওয়ায় বেগুন ফলনে কিছুটা বাধার সৃষ্টি হয়। আর এই সুযোগেই ফড়িয়ারা বেগুনের বাজার দখল করে নেয়। প্রতি বছর রোজা এলে যে কোন অজুহাতেই ফড়িয়ারা বেগুনের মুল্য বাড়িয়ে দেয়। এ ব্যাপারে দৈনিক ইনকিলাব কয়েক বছর বেগুনের উপর বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। ওয়ান ইলিভেনের সময় বেগুনের মুল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তৎকালীন সেনা শাসকরা বিচলিত হয়ে পড়েন। তারা নরসিংদীতে সভা করে বেগুনের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে স্থানীয় সাংবাদিকরা মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়াদের দৌরাত্বের কথা জানান। এরপর সেনাবাহিনী বিশেষ ব্যবস্থায় নরসিংদী থেকে বেগুন কিনে নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন বাজারে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করে। কিন্তু পরবর্তী সরকার এসে বেগুনের বাজার নিয়ন্ত্রনে আর কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। যার ফলে এ বছরও ফড়িয়াদের কারসাজিতে বেগুনের মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। ৩০ টাকা কেজির বেগুন এখন ১শত টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চাষীরা পাচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। আর ফড়িয়ারা মুনাফা গুনছে কেজি প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সাধারণ মানুষ রোজার মাসে পোকড়া-কোকড়া বেগুনও কিনে খেতে পারছে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।