Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাতক্ষীরায় সন্তান হত্যার দায়ে মা’কে মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাতক্ষীরা জেলা সংবাদদাতা : নিজ সন্তানকে হত্যার দায়ে মা’কে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দিয়েছেন সাতক্ষীরা অতিরিক্ত জেলা জজ (২য়) আদালতের বিচারক শরীফ এ, এম রেজা জাকের। বৃহস্পতিবার দুপুরে জনাকীর্ণ আদালতে বিচারক এই আদেশ দিয়েছেন। আদেশে মামলায় অপর আসামীকে বে-কসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত আসামী রিজিয়া খাতুন (৩২) সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর গ্রামের আব্দুল মাজেদ গাজীর মেয়ে। খালাসপ্রাপ্ত আসামী একই উপজেলার পাইকাড়া গ্রামের বাবু টাপালীর ছেলে কাশেম টাপালী (৩৫)। কাশেম টাপালী কারাগারে আটক থাকলেও ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী রিজিয়া পলাতক রয়েছেন।
আদালতের মামলার কাগজপত্রের সূত্র ও সরকার পক্ষের আইনজীবী অতিরিক্ত পিপি সৈয়দ জিয়াউর রহমান বাচ্চুর দেওয়া তথ্য মতে, ২০১০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বেলা পৌনে ১২ টার দিকে রহিমপুর গ্রামের জনৈক আব্দুস সাত্তারের পুকুর থেকে কালীগঞ্জ থানার এস আই রবীন্দ্রনাথ এক নবজাতক কন্যা শিশুর ভাসমান লাশ উদ্ধার করেন। এরপর তিনি থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করে লাশ ময়না তদন্তে প্রেরণ করেন। দু’মাস পর ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসে কালীগঞ্জ থানায়। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় নবজাতক শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এরপর এস আই রবীন্দ্রনাথ বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং-০৩। তারিখ-৪/৫/২০১০। মামলায় আসামী করা হয় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের। মামলার তদন্তভার পড়ে থানার এস আই আজগর আলীর ওপর। তিনি এক মাস পরে ৫ মে ২০১০ তারিখে গ্রেফতার করেন ওই নবজাতকের মা রিজিয়া খাতুনকে। রিজিয়া পুলিশের কাছে সব স্বীকার করার পর ওই দিনেই তাকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী নিতে সাতক্ষীরা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী আল মাসুদের সামনে হাজির করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
রিজিয়া বিচারকের কাছে দেওয়া জবানবন্দীতে জানিয়েছেন, ঘটনার প্রায় ১০ বছর আগে তিনি স্বামীর কাছ থেকে তালাক প্রাপ্ত হন। এরপর বিভিন্ন কষ্টে জীবন-যাপন করার একপর্যায়ে পাইকাড়া গ্রামের কাশেম টাপালীর সাথে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রিজিয়া তার কাছ থেকে ৯ হাজার টাকা হাওলাত নিয়েছিলেন কিন্তু শোধ করতে না পারায় কাশেমের কথামতো প্রথমে একটি আম বাগানে জোর করে তাকে ধর্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে আপোষে একাধিকার বিভিন্ন স্থানে কাশেমের সাথে তার দৈহিক মিলন ঘটে। প্রায় দু’বছর এমন মেলামেশার মধ্যে রিজিয়া গর্ভবতী হয়ে পড়েন। তিনি বিষয়টি কাশেমকে জানালে কাশেম বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সন্তান নষ্ট না করার পরামর্শ দেয়। একপর্যায়ে রিজিয়া ২০১০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে সন্তান প্রসব করেন। বিষয়টি কাশেমকে জানানো হলে কাশেম তার কাছে আসে এবং দুজনের পরামর্শে নবজাতক কন্যা শিশুটিকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর একই গ্রামের আব্দুস সাত্তারের বাড়ির পাশের পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।
সরকার পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ জিয়াউর রহমান বাচ্চু আরো জানান, এই মামলায় আসামী কাশেম কারাগারে থাকলেও নবজাতকের মা হত্যাকারী রিজিয়া ইতোপূর্বে আদালত থেকে জামিন নিয়ে পলাতক রয়েছে। তিনি আরো জানান, মামলায় ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য, চার্জশীট ও অন্যান্য জরুরি কাগজপত্র পর্যালোচনা করে বিচারক এই রায় প্রদান করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ