Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদকে সয়লাব আশুলিয়া জড়িত একাধিক পুলিশ সোর্স

| প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সেলিম আহমেদ, সাভার (ঢাকা) থেকে  : রাজধানীর উপকন্ঠ সাভার উপজেলায় প্রায় ২০ লাখের অধিক লোকের বসবাস। যার বেশিরভাগই আশুলিয়া থানা এলাকায়। মানুষের সাথে সাথে ওই এলাকায় বেড়ে চলছে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। ফলে আশুলিয়া থানা এলাকায় অপরাধী চক্র আগের থেকে তৎপর হয়ে উঠেছে বহুগুন। আর দিন দিন আশুলিয়া থানা এলাকায় মাদকে সয়লাব হয়ে উঠছে। আর এ মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে পুলিশের একাধিক সোর্স। গত দেড় মাসে আশুলিয়া থানায় প্রায় ৩৬টি মাদকের মামলা হয়েছে। এরমধ্যে ৩১টি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৬ জনকে।
তবে আইনশৃংখলা বাহিনী এ ব্যাপারে মাঝে মাঝে তৎপর থাকলেও কতিপয় পুলিশের একাধিক সোর্স মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সক্ষ্যতার কারনে মূল অপরাধীরা রয়ে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ফলে মাদকের করাল গ্রাসে ধ্বংসের পথে আশুলিয়া যুবসমাজ। স্কুল কলেজগামী ছাত্ররা আসক্ত হয়ে পড়ছে মাদকের এ মরন নেশায়। বিপথগামী হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে অনেক সময় তারা চুরি, ছিনতাই, খুনসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। আশুলিয়ায় মাদকের ভয়াবহতা বাড়ার কারনে বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরাও নেশায় আসক্ত হয়ে পরেছে। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে অভিভাবকরাও। মাদকের এ করাল গ্রাস থেকে যুবসমাজকে রক্ষায় আশুলিয়াবাসী প্রশাসনের উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের নিকট জোর দাবী জানালেও পুলিশ বলছে, আশুলিয়ায় কোন মাদক কিংবা মাদকের স্পট নেই। তবে পথে-ঘাটে ঘুরে মাদক কেনাবেচা হয়।
অনেকেই বলছে, প্রকাশ্যে কতিপয় পুলিশের ছত্রছায়ায় বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। মাদক ব্যবসায়ীদের দাবি থানা পুলিশের কিছু কর্মকর্তা তাদের কাছ থেকে মাসোহারা নেন। তাই তাদের এ ব্যবসা চালাতে খুব একটা সমস্যা হয় না। আবার উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের চাপের মুখে পুলিশ ২/১ জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করলেও রাতের আধারে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ারও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে মাদক বন্ধের জন্য জনসচেতনতা বাড়াতে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারসহ মিজান শাফিউর রহমান নানান পদক্ষেপ নেয়ার পর কয়েকদিন স্বাভাবিক থাকলেও পরে আবার শুরু হয় মাদক কেনাবেচা।
আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহসিনুল কাদির দাবি করেন, আশুলিয়ায় কোথাও মাদক নেই, এমনকি মাদক স্পর্ট পর্যন্ত নেই। তবে কিছু লোকজন ঘুরে ফিরে মাদক বেচাকেনা করে। সেটাকে মাদক স্পর্ট বলা যাবে না।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, আশুলিয়ায় প্রায় শতাধিক মদকের স্পর্ট রয়েছে। এর মধ্যে, নলাম, কুড়গাঁও, চিত্রসাইল, শুটিংবাড়ী, গোরাট, ধনাইদ, তাজপুর, দিয়াখালী, ইয়ারপুর, গোমাইল, জামগড়া, বেরণ, নরসিংহপুর, ঘোষবাগ, ভাদাইল, বুড়িবাজার, বুড়িপাড়া, বাইপাইল, দক্ষিন বাইপাইল, গাজিরচট, আড়িয়াড়ামোড়, পলাশবাড়ী, কন্ডা, জিরানী, কোনাপাড়া, কলতাসুতি, আশুলিয়া, আউখপাড়া, গৌড়িপুর, জামগড়া উত্তরপাড়া, শ্রিপুর, পবনার টেক, দিয়াখালী, বাশবাড়ী, নয়ারহাট, গোহাইলবাড়ী, দক্ষিন নাল্লাবুল্লা, দক্ষিন কোনাপাড়াসহ শতাধিক র্স্পট। এ সকল স্পর্টে হেরোইন, ফেন্সিডিল, ইয়াবা ট্যাবলেটের পাশাপাশি গাঁজা ও বাংলা মদ (চোলাইমদ) বিক্রি করা হয়।
আবার কিছু কিছু এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীরা অভিনব কায়দায় শার্টের কলার ও হাতলের ভাঁজে, মানিব্যাগে, জুতার ভেতরে, দিয়াশলাই ও সিগারেটেরে প্যাকেটের ভেতরে রেখে খুচরা ইয়াবা ট্যাবলেট ঘুরে ঘুরে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
মাদকের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা অপরাধীরা ছিনতাই, চুরি, দেহব্যবসা, ভুমি দখলসহ নানারকম অপরাধ ঘটিয়ে সহসাই পার পেয়ে যাচ্ছে। এলাকার লোকজন এদের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হলেও প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। কেউ কেউ প্রতিবাদ করলে হামলা মামলার স্বীকার হতে হচ্ছে। পুলিশের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের সক্ষ্যতার কারনে ভুক্তভোগীদের আরও ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে।
এদের সিন্ডিকেট এতই শক্তিশালী যে আইনশৃংখলা বাহিনী এ সকল স্পটে হানা দেয়ার আগেই তারা পুলিশের উপস্থিতি টেরে পেয়ে যাচ্ছে। জানা যায়, এ সিন্ডিকেটগুলোর নেতৃত্ব দিয়ে আসছে এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও নেতা।
সরজমিনে ঘুরে পুলিশ, এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ঠ সূত্র থেকে জানাগেছে, গোরাট এলাকার আল আমিন ফেন্সিডিল ও গাঁজার ব্যবসার সাথে জড়িত। গোহাইলবাড়ী এলাকার নিখিল, দক্ষিন নাল্লাবুল্লার ফয়সাল ও কোনাপাড়ার রফিক মাদকের পাইকারী ব্যবসায়ী। এছাড়া বুড়িপাড়া এলাকার ছফুর উদ্দিন, জামগাড়ার উজ্জল, তাজপুরের আলমগীর হোসেন, দক্ষিন বাইপাইলে লতা ইয়াবা ও গাঁজার ব্যবসা করে। বুড়ি বাজার আমবাগান মহল্লার সোহেল ও পারভীন বাংলা মদ (চোলাইমদ) ও গাঁজা, ভাদাইলের মতিন গাঁজা ও মদ, গোরাটের লেহাজ উদ্দিন গাঁজা বিক্রি করে। বাইদগাওয়ের মোতালেব গাঁজা ও ইয়াবা স¤্রাট। কবিরপুরের পাগলাবাজারে হারুন, তেলিবাজারে রাসেল, আরিফ, শাকিল, আসলাম ইয়াবা ও গাঁজার ব্যবসায়ী। ধনাইদ এলাকায় শামা, জিরানী কলতাসুতি এলাকায় আব্দুল হাকিম, জামাল, আশরাফ মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত।
এদের মধ্যে মাদক ব্যবসায়ী মোতালেব, আব্দুল হাকিম, জামাল, আশরাফ, আরিফ, শাকিল, আসলাম ও হারুনসহ আরো কয়েকজন পুলিশেন সোর্স হিসেবে কাজ করে। ফলে তাদের মাদক ব্যবসায় তেমন বেগ পেতে হয়না।
অভিযোগ রয়েছে, আশুলিয়া থানার এসআই মশিউর রহমান নয়ন, অভিজিৎ চৌধুরী, মনিরুজ্জামান, মলয় কুমার সাহা, কামাল হোসেন ও মাসুদ রানার সাথে একাধিক মাদক ব্যবসায়ীদের সক্ষ্যতা রয়েছে।
পুলিশ কনস্টেবল ফিরোজের হয়ে থানার দালাল আফজাল মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায় করে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
তবে আশুলিয়া থানার ওসি মোহসিনুল কাদির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, গত এক মাসে ইয়াবা, ফেন্সিডিলসহ ৪৬ লাখ ৪০হাজার ৪০০টাকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, মাদক ব্যবসার সাথে কেউ জড়িত অভিযোগ পেলেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে পুলিশের একার পক্ষে মাদক বন্ধ করা সম্ভব নয়। সকলকেই সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, পোশাক শ্রমিকরাও মাদক বিক্রি করছে, আর তাদের ক্রেতাও পোশাক শ্রমিক। বিষয়টি জানার পর বিজিএমইএ-র সভাপতিকে অবহিত করেছি।




 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ