Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ত্রিশ লাখ টাকায় ভাড়াটিয়া খুনি দিয়ে মিঠুকে হত্যা

| প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীতা হ পারিবারিক দ্ব›েদ্বর জের
আবু হেনা মুক্তি ও আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. মামুন রহমান ত্রিশ লাখ টাকার বিনিময়ে ভাড়াটে কিলার দিয়ে খুলনা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফুলতলা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরদার আলাউদ্দিন মিঠুকে হত্যা করিয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ আসনে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে ও শত্রুপক্ষের পারিবারিক পূর্বশত্রুতাকে কাজে লাগিয়ে এ কাজ করিয়েছেন তিনি লন্ডনে বসে। গত সোমবার আদালতে এমনি স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন ফুলতলা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাসনাত রিজভী মার্শাল। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি দিদার আহমেদ তার নিজস্ব কার্যালয়ে প্রেসব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন।
ডিআইজি ব্রিফিংকালে বলেন, পূর্ব শত্রুতা, স্থানীয় পারিবারিক প্রতিহিংসা ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রতিদ্ব›িদ্বতার ধারাবাহিকতায় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে এটা স্পষ্ট হয়েছে।গত ২৭ মে নিহত মিঠুর দেহরক্ষী দামোদরের মিজানুর রহমানের ছেলে শিমুল হাওলাদার (২৫), মৃত জিন্নাহ ভুইয়ার ছেলে মুশফিকুর রহমান রিফাত (২৫), উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাসনাত রিজভী মার্শাল (৫২) কে গ্রেফতার করা হয়। তারা গত রোববার ও গতকাল ৩০ মে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কান্তি দালালের আদালতে ১৬৪ধারায় দিয়েছে। এ জবানবন্দির ভিত্তিতে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত দামোদর পশ্চিমপাড়ার ওমর আলীর ছেলে তাইজুল ইসলাম রনি (২৫) কে হত্যাকান্ডের ব্যবহৃত শর্টগান স্বাদৃশ্য দেশীয় তৈরি কাটা বন্দুক ও এক রাউন্ড বন্দুকের কার্তুজসহ গত সোমবার ভোর রাতে গ্রেফতার করা হয়। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
রেঞ্জের ডিআইজি বলেন, এমনিতেই ফুলতলার সরদার এবং ভূঁইয়া পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে কয়েকটি হত্যাকান্ডও সংঘটিত হয়েছে। মিঠু হত্যার ঘটনাটিও সেই ধারাবাহিকতায় চালিয়ে দিয়ে রাজনীতির মাঠ ফাঁকা করতে চেয়েছিলেন ড. মামুন রহমান।
প্রেসব্রিফিংয়ে রেঞ্জ ডিআইজি দিদার আহমেদ বলেন, লন্ডন প্রবাসী বিএনপি নেতা ড. মামুন রহমান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই আসনে নির্বাচন করতে চাইছেন। আবার সরদার আলাউদ্দিন মিঠুও প্রার্থী। তাই তার নির্বাচনী পদ পরিষ্কার করতেই লন্ডন থেকে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে সরদার আলাউদ্দিন মিঠুর পারিবারিক শত্রæদের কাজে লাগিয়ে এ হত্যাকান্ড করিয়েছেন।দু’টি ভাগে ১০ লাখ টাকা এবং কিলার গ্রæপের হাতে ২০ লাখ টাকা সর্বমোট ত্রিশ লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি। এজন্য হাসনাত রিজভী মার্শালের মাধ্যমে শিমুলের সঙ্গে ৩০ লাখ টাকা চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী মার্শাল ৩০ লাখ টাকা নিয়ে ২০ লাখ টাকা চরমপন্থী ক্যাডার শিমুলের হাতে দেয়। বাকি ১০ লাখ টাকা অন্যান্য কাজে খরচের জন্য রেখে দেয়। এ টাকা ফুলতলা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাসনাত রিজভী মার্শালের মাধ্যমে বন্টন হয়েছে। মার্শাল ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতেই বলেছে এসব কথা। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ড. মামুন রহমান মোট ৩০ লাখ টাকা দিয়েছে সরদার আলাউদ্দিন মিঠুকে হত্যা করতে। ইতিমধ্যে চারজন আসামীকে গ্রেফতার করেছি। বাকী আরো চারজন আসামী রয়েছে। তাদেরকেও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি শর্টগান গুলিসহ উদ্ধার করেছি। মোবাইল ট্রাকিংয়ে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমেই হত্যাকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন,মিঠুর পিতা কাশেম হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী চরমপন্থী প্রধান শিমুল ভূঁইয়া, তার ভাই শরীফ আহমেদ শিপলু ভূঁইয়া (বর্তমান দামোদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান) ও মমিনুল ভূঁইয়া মিঠু হত্যাকান্ডের জড়িত রয়েছে। মিঠুর পিতা ও বড় ভাই হত্যা মামলার বাদী ছিল সরদার আলাউদ্দিন মিঠু। তাই পারিবারিক শত্রæতার জেরধরে এবং বিএনপি নেতা মামুন রহমানের দেয়া ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে আলাউদ্দিন মিঠুকে হত্যা করা হয়েছে। কিলিং মিশনের নেতৃত্ব দিয়েছে চরমপন্থী ক্যাডার শিমুল ভূইঁয়া। এছাড়া স্থানীয় কোন জনপ্রতিনিধি হত্যাকান্ডে জড়িত আছে কি না তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে ডিআইজি আরও বলেন, ফুলতলা উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যানসহ আরও কোন নেতা জড়িত আছে কি না; সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।
প্রেসব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন র‌্যাব-৬ এর পরিচালক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম, খুলনার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার এসএম সফিউল্লাহ, ফুলতলা থানা পুলিশের ইনচার্জ (ওসি) মো: আসাদুজ্জামান মুন্সী প্রমুখ। আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর ডাবল হত্যার ঘটনায় ফুলতলা থানার পুলিশ ছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), র‌্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কাজ করছে। প্রসঙ্গত্ব,১৯৯৮ সালের ১৮ আগস্ট দুপুরে দামোদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সরদার আবুল কাশেম (মিঠুর পিতা) কে ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কক্ষে হত্যা করেছিল সন্ত্রাসীরা।এরপর ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট বেলা পৌনে ১১টার দিকে ফুলতলা উপজেলা পরিষদের অদূরে দামোদর ইউপি চেয়ারম্যান সরদার আবু সাঈদ বাদল (মিঠুর বড় ভাই) কে গুলি করে হত্যা করেছিল চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা। আর গত ২৫ মে রাত ১০টার দিকে বাড়ীর সামনে ব্যক্তিগত অফিসে অস্ত্রধারী দেহরক্ষী নওশের আলীসহ চরমপন্থীরাই গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিল ফুলতলা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আলাউদ্দিন মিঠুকে। এ ডাবল হত্যাকান্ডের ঘটনায় ২৭ মে নিহত মিঠুর ভাই মো: রাজ সরদার বাদী হয়ে মামলা করেন (যার নং-২৯, ২৭-০৫-১৭ইং)। মামলায় অজ্ঞাত ৭/৮জনকে আসামী করা হয়।



 

Show all comments
  • ইউনুস ৩১ মে, ২০১৭, ১২:২৪ পিএম says : 0
    এই হত্যার সাথে যারা জড়িত সকলকে গ্রেফতার করা হোক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ