পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মালেক মল্লিক : সংবিধান বিশেষজ্ঞ বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বিচারক অপসারণের ক্ষমতা দিয়ে জাতীয় সংসদে পাস করা ষোড়শ সংশোধনী সংবিধানের পরিপন্থি। সংবিধান হলো দেশের সর্বোচ্চ আইন। যেখানে কার কি ক্ষমতা, তা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিচার বিভাগের দায়িত্ব হলো সবার নিজ নিজ সীমা রেখার মধ্যে আছে কি না তা দেখা। ষোড়শ সংশোধনীকে বাতিলের রায়কে সমর্থন করে প্রবীণ এই আইনজীবী আরো বলেন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও চাপের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সংসদের মাধ্যমে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা দেয়ায় বিচার বিভাগকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। সংবিধানের মৌলিক কাঠামোতে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। ষোড়শ সংশোধনী হাইকোর্ট বিভাগ অলরেডি অবৈধ ঘোষণা করে দিয়েছে। এই সংশোধনী বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে বলে মতামত দিয়েছেন এই আইনজীবী।
গতকাল সোমবার ষোড়শ সংশোধনীর হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল শুনানিতে আদালতের বন্ধুর (অ্যামিকাস কিউরি) হিসেবে এই যুক্তি তুলে ধরেন কামাল হোসেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ সাত বিচারপতি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে এই শুনানি চলছে। গতকাল নবম দিনের মত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এদিন শুনানিতে এম আই ফারুক, এ এফ হাসান আরিফ, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, ড. কামাল হোসেন ও আজমালুল হোসেন কিউসি তাদের নিজ নিজ মতামত দেন।
এর আগে কয়েক দিনে অ্যামিকাস কিউরির মতামত দিয়েছেন সিনিয়র আইনজীবী টি এইচ খান, ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম।
অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে এই পর্যন্ত সাত জন সিনিয়র আইনজীবী তাদের মতামত উপস্থাপন শেষ করেছেন। আরো ৫ জন আইনজীবীর কাছ থেকে এ বিষয়ে মতামত শুনবেন আপিল বিভাগ। সাত জনের মধ্যে এরা সবাই ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে এবং বিচারপতিদের অপসারণ সুপ্রিম কাউন্সিলের মাধ্যমে করা উচিত বলে আদালতে মতামত দেন। তবে শুধু মাত্র একজন অ্যামিকাস কিউরি ষোড়শ সংশোধনী পক্ষে মতামত দেন।
গতকাল আদালতের বন্ধুর (অ্যামিকাস কিউরি) এম আই ফারুকী অসমাপ্ত মতামত দিয়ে শুরু হয়। শেষ ডর্যন্ত আজমালুল হোসেন কিউসি এর বক্তব্য মধ্য দিয়ে বিচারকার্য মলতুবি করেন আদালত। আজ মঙ্গলবার ফের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
সংবিধান প্রণেতাদের মধ্যে অন্যতম বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন শুনানিতে বলেছেন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও চাপের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সংসদের মাধ্যমে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা দেওয়ায় বিচার বিভাগকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। হাইকোর্ট ষোড়শ সংশোধনীকে বাতিল ও অবৈধ বলে যে রায় দিয়েছে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে এ রায়কে পুরোপুরিভাবে সমর্থন করছি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ। সুপ্রিম কোর্ট বেশ কয়েকটি রায়ে বলে দিয়েছে। এর মধ্যে অষ্টম সংশোধনী মামলা এবং মাসদার হোসেন, মামলা ইদ্রিসুর রহমান মামলার রায়ে বলা হয়েছে। হাই কোর্ট ষোড়শ সংশোধনীকে বাতিল ও অবৈধ বলে যে রায় দিয়েছে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে এ রায়কে পুরোপুরিভাবে সমর্থন করছি।
হাই কোর্ট বিভাগের এক বিচারক ষোড়শ সংশোধনী মামলার মূল রায়ে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন যে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান একমাত্র পাকিস্তানে রয়েছে। তার এই বক্তব্য সম্পূর্ণ ভুল দারণা প্রসূত।
আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, হংকং, জার্মানি, সুইডেন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইসরাইল, জাম্বিয়া, ত্রিনিদাদ ও টোবাকো, নিউসাউথ ওয়েলসসহ বিভিন্ন দেশে বিচারক অপসারণের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল অথবা এরকম পদ্ধতি রয়েছে। ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক হিসেবে আপনারা এটিকে বাতিল করে দেন। ১৯৭২ সালে
প্রণীত সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদকে বলা হয়েছে সংবিধানের মৌলিক নীতির একটি। এখানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে, যা থাকবে রাষ্ট্রের অন্য দু’টি অঙ্গের হস্তক্ষেপমুক্ত। যা সংবিধানের ৯৪ (৪), ১৬ (ক), ১৪৭ উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এখানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য জনগণের একটি ঐতিহাসিক সংগ্রামের নজির রয়েছে। সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্ব সমুন্নত রাখা ও রাষ্ট্র ক্ষমতা দ্বারা জনগণের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করা যা সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলে দিয়েছে।
ওই রায়ে বলা হয়েছে, গণতন্ত্র, প্রজাতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতার পৃথকীকরণ, স্বাধীন বিচার বিভাগ, মৌলিক অধিকার হলো সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। ১৯৭৫ সালের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ১৯৭২ সালের আদি সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ থেকে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাত থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। পরবর্তীতে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধান করা হয়।
পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে রায় দেয়া হলেও এই ব্যবস্থা রেখে দেয়া হয়েছে। ওই রায়ে বলা হয়েছে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল একটি স্বচ্ছ পদ্ধতি। ষোড়শ সংশোধনীর মত সংশোধনী স্বাধীন বিচার বিভাগকে ক্ষুন্ন করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। যা দেশের বিচার বিভাগকে ঝুঁকি ও অবৈধ হস্তক্ষেপের মুখে ফেলেছে। আইনের শাসনকে বিপন্ন করেছে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে নির্বাচিত সংসদ সদস্যের আসন শূণ্য হবে যদি নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেন। বিচারক অপসারণের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরা নিরপেক্ষ ও উন্মুক্তভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন কিনা সে প্রশ্ন ওঠে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও চাপের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সংসদের মাধ্যমে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা দেওয়ায় বিচার বিভাগকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। পরে ষোড়শ সংশোধনী সংবিধানের পরিপন্থি হয়েছে কিনা সাংবাদিকদের জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, পরিপন্থি হয়েছে। আমি এই সাবমিশন রেখেছিলাম, সেই গুলো হাইকোর্ট মেনে নিয়েছে। আজ আমি সেই গুলো বললাম। অবশ্যই পরিপন্থি।
এ এফ এম হাসান আরিফ শুনানি শেষে সাংবাদিকদের বলেন, আমার সিন অব সিন্স ছিলো, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ইন্ডিপেন্ডেন্ট অব জুডিশিয়ারি এটা বিচারকদের নিজস্ব প্রয়োজনে নয়। জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রয়োজন। এর আগে আনোয়ার হোসেনের মামলায় এই সুপ্রিম কোর্ট বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বাংলাদেশ সংবিধানের একটি অপরিহার্য্য অংশ অর্থাৎ বেসিক স্ট্রাকচার বলে রায় দিয়েছেন। পরেও আরো দু একটি রায়ে ইন্ডিপেন্ডেন্ট অব জুডিশিয়ারিকে সংবিধানের বেসিক স্ট্রাকচার বলা হয়েছে। আমাদের আশে পাশের দেশে বিশেষ কওে ভারতে এ ধরনের আরো অনেক রায় হয়েছে, যেখানে ইন্ডিপেন্ডেন্ট অব জুডিশিয়ারিকে বেসিক স্ট্রাকচার, সংবিধানের বেসিক পিলার বলা হয়েছে।
এবং সেপারেশন অব পাওয়ার অর্থাৎ তিনটি অর্গানের ভিন্ন ভিন্ন এরিয়া, এখতিয়ার, বিষয়বস্তু সুনিদৃষ্ট কওে দেয়া হয়েছে। বিচার বিভাগের জন্য যে এরিয়া সুনিদৃষ্ট করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আমি যেটা আগে বললাম বিচার বিভাগের স্বাধীনতাটা বিচারকদের প্রয়োজনে নয় জনগনের অধিকার সুরক্ষার জন্য এটা প্রয়োজন। শুনানিতে আমি নতুন একটা বিষয় বলেছি। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা শুধু বেসিক স্ট্রাকচার নয়, এটা মৌলিক অধিকারও বটে। জনগনের মৌলিক অধিকার যেন বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকতে পারে। কেউ যতি আদালতের সামনে উপস্থিত হয় আদালত যেন স্বাধীন ভাবে বিচার করতে পারে। সংসদ বা নির্বাহী বিভাগের চাপে পওে যেন জনগনের অধিকার ক্ষুণœ না হয়, সে ভাবে যেন বিচার করতে পারে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট অব জুডিশিয়ারি একটা মৌলিক অধিকার। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে ইন্ডিপেন্ডেন্ট অব জুডিশিয়ারিকে হস্তক্ষেপ। কারণ এর মাধ্যমে জুডিশিয়ারিকে পার্লামেন্টের কাছে জবাবদিহিতা দিতে হয়। এবং পার্লামেন্ট এবং সরকার এক। যেহেতু একই সদস্য দিয়ে তারা কেবিনেট ফরম করেছে। সুতরাং সে ক্ষেত্রে সেপারেশন অব পাওয়ার যেটা বলছি পার্লামেন্ট এবং কেবিনেটের ফরমেশনের মাধ্যমে সেপারেশন অব পাওয়ারটা পুরোপুরি এখানে পালিত হচ্ছে না। একমাত্র জুডিশিয়ারিকে যদি আমরা এর বাইরে রাখি তবেই একমাত্র সেপারেশন অব পাওয়ারটা থাকে। আর সেপারেশন অব পাওয়ারটা যদি না থাকে তাহলে জনগনের মৌলিক অধিকার রক্ষা হবে না। সুতরায় চতুর্থ সংশোধনী বাতিল করে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সুপ্রিশ জুডিশিয়াল কাউন্সিল করা হয়েছে। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে সেটা পার্লামেন্ট নিজে এনেছে এবং যেটা দুই বার আদালতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো সেইটাকে সংশোধন করার কোন এখতিয়ার তাদের নেই।
আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের ক্ষমতা প্রধান বিচারপতির হাতে থাকতে হবে। যদি এটা সংসদের হাতে দিয়ে দেয়া হয় তাহলে ভারসাম্য নষ্ট হবে।
আজমালুল হোসেন কিউসি কিউরি ষোড়শ সংশোধনী পক্ষে মতামত দিয়ে শুনানিতে বলেন, সংসদের হাতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা দিয়ে যে সংশোধনী আনা হয়েছে এটি কার্যকর সংশোধনী এবং একইসঙ্গে এটি বৈধ আইন হিসেবে বিবেচিত।
সংশোধনী নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে বিচার বিভাগকে উপলব্ধি করতে হবে এর সঙ্গে তাদের স্বার্থের বিষয়টি সরাসরি জড়িত। কে এই পদ্ধতির আইনগত বৈধতা দিবে? উত্তর হচ্ছে অবশ্যই সুপ্রিম কোর্ট। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, একজন বিচারক নিজের মামলার বিচার কি নিজেই করবে? অথচ এই মামলায় বিচার বিভাগের স্বার্থ জড়িত। তাই এ মামলায় সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকতে হবে। ষোড়শ সংশোধনীর মাধ্যমে আদি সংবিধানে ফিরে যাওয়া হয়েছে। এই সংশোধনী অবশ্যই আইনত বৈধ। কানাডায় এ ধরণের পদ্ধতিতে বিচারক অপসারণ করা হয়। তিনি বলেন, বিচারক অপসারণটা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ কিন্তু অপসারণের পদ্ধতিটা মৌলিক কাঠামোর অংশ না। সংসদের হাতে বিচারক আপসারণের যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তার পরিবর্তনের দরকার নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।