Inqilab Logo

বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রায়পুরার বাঁশগাড়ীরচরে শত শত পুলিশের সাঁড়াশী অভিযান

| প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : রায়পুরার বাঁশগাড়ীরচরে পুলিশের গুলিতে আহত লাঠিয়াল সর্দার মোস্তফা (৩০) মারা গেছে। গতকাল রোববার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। নিহত মোস্তফা বাঁশগাড়ীরচরের বালুয়াকান্দী গ্রামের মোতালিব মিয়ার পুত্র। তার লাশ গতকাল রোববার রাতের মধ্যে গ্রামের বাড়ীতে পৌছানোর কথা রয়েছে। এদিকে পুলিশের নিকট থেকে ছিনিয়ে নেয়া সাদেক সরকারের লাঠিয়াল সরদার রুপ মিয়া মেম্বার, আজিজুল, জাকির ও হাবিবুর নামে ৪ লাঠিয়াল সর্দারকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। আসামী ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় রায়পুরা থানা পুলিশের এসআই মোঃ রইজুল আলম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলায় আসামী করা হয়েছে কমবেশী সহ¯্রাধিক লাঠিয়ালকে। এর মধ্যে নাম উল্লেখ করা হয়েছে ২৩ জনের এবং বেনামে আসামী করা হয়েছে ৭ থেকে ৮শত ব্যক্তিকে। ছিনতাইকৃত আসামী ও তাদের সহযোগীদের গ্রেফতারের জন্য এলাকায় ব্যাপক পুলিশী অভিযান শুরু হয়েছে। রায়পুরা থানার ওসি আজহারুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, ৩ দিন যাবত তিনি রায়পুরার বাঁশগাড়ীতে অবস্থান করছেন। তার সাথে রয়েছে কমবেশী ৩শতাধিক পুলিশ। তারা বাঁশগাড়ীর বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে রয়েছে এবং আসামীদেরকে গ্রেফতারের জন্য তল্লাশী অভিযান চালাচ্ছে। ওসি আজহার জানান, লাঠিয়ালদেরকে চিরতরে এলাকা থেকে উৎখাত করার জন্য অভিযান শুরু করা হয়েছে। যে কোন ভাবেই তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে।
এদিকে এলাকার লোকজন জানিয়েছে, গত শনিবার চেয়ারম্যান সিরাজুল হক সরকারের লাঠিয়াল বাহিনী আছরের নামাজের পর মির্জারচর ও পাড়াতলী ইউনিয়নের  মেঘনা নদী দিয়ে বাঁশগাড়ী তাদের নিজ এলাকায় উঠে যায়। পরে রাতে সাদেক সরকারের লাঠিয়াল বাহিনী নিলক্ষা ও চরমধুয়া দিয়ে বাঁশগাড়ীতে প্রবেশের চেষ্টা করলে সিরাজুল হকের লাঠিয়ালরা এলাকা ছেড়ে পূর্ববর্তী অবস্থানে ফিরে যায়। তবে তাদের মধ্যে কোন প্রকার সংঘর্ষ বা হতাহতের ঘটনা  ঘটেনি। পুলিশী অভিযানের মুখে সাদেক সরকারের লাঠিয়াল বাহিনী এলাকা  ছেড়ে পার্শ্ববতী ইউনিয়ন নিলক্ষা ও চরমধুয়ায় আশ্রয় নিয়েছে। পক্ষান্তরে সিরাজুল হকের লাঠিয়াল বাহিনী মির্জাচর ও পাড়াতলীতে অবস্থান করছে। গত ১৩ এপ্রিল এলাকা ছাড়া হবার পর চেয়ারম্যান সিরাজুল হকের লাঠিয়ালরা কয়েকবার চেষ্টা করেও এলাকায় উঠতে পারেনি। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নেতা সাদেক সরকারের লাঠিয়ালদের দখলে ছিল গোটা বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের গ্রামগুলো। গত বৃহস্পতিবার রায়পুরা থানা পুলিশ ওয়ারেন্টভূক্ত আসামীদের গ্রেফতার করতে গিয়ে জোড়বিল এলাকা থেকে সাদেক সরকারের মূল লাঠিয়াল সর্দার রুপ মিয়া মেম্বারসহ ৪  লাঠিয়াল সর্দারকে গ্রেফতার করার পর সাদেক সরকারের লাঠিয়ালরা পুলিশের উপর হামলা চালায়। ওসি আজহার জানিয়েছেন, শত শত  লাঠিয়াল বন্দুক, বোমা, টেটা, বল্লম নিয়ে পুলিশের উপর হামলা চালায়। এই অবস্থায় পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি বর্ষণ করতে করতে গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে নিয়ে বাঁশগাড়ী ফাড়িতে চলে যায়। সেখানে আসামীদেরকে নিয়ে আটক করার পর সাদেক সরকারের লাঠিয়ালরা থানা ঘেরাও করে গুলি বর্ষণ, বোমা নিক্ষেপ এবং টেটা বল্লম ছুড়তে থাকে। শত শত লাঠিয়াল আক্রমন চালিয়ে গ্রেফতারকৃত লাঠিয়াল সর্দার ২০টি খুন ও দাঙ্গাবাজী মামলার আসামী রুপ মিয়া মেম্বার, আজিজুল, জাকির ও হাবিবুরকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এরপর থেকেই শুরু হয় পুলিশী অভিযান। এলাকায় শত শত পুলিশের  সাড়াশী অভিযানে বাঁশগাড়ীরচরের গ্রামগুলো প্রায় পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। পালিয়েছে যুবক থেকে শুরু করে উঠতি বয়সের তরুণরাও। ওসি আজহার জানিয়েছে, পুলিশের উপর হামলাকারীদের মধ্যে উঠতি বয়সের ছেলেদের সংখ্যাই বেশী। এরা এলোপাতারি পুলিশের উপর গুলি, বোমা, টেটা ও বল্লম নিক্ষেপ করে। পুলিশ উপায়ান্তর না দেখে আত্মরক্ষার্থে গুলিবর্ষণ করতে বাধ্য হয়। এতে কমবেশী ২৫জন লাঠিয়াল আহত হয়। এদের মধ্যে মোস্তফা, নবী, রুবেল, মাসুদ, এরশাদ ও আনোয়ার নামে ৬ জনকে প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে। পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। গুলিতে আহত মোস্তফাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার ৩ দিন পর রোববার সে সেখানে মারা যায়।
এদিকে পুলিশের নিকট থেকে ছিনিয়ে নেয়া লাঠিয়াল সর্দার রুপ মিয়া, আজিজুল, জাকির ও হাবিবুরের আত্মীয়-স্বজনরা জানিয়েছে, তাদেরকে কেউ ছিনিয়ে নেয় নি, তারা এখনো পুলিশের কাছেই রয়েছে। কিন্তু পুলিশ গ্রেফতারকৃত এসব লাঠিয়াল সর্দারদের তাদের কাছে থাকার কথা অস্বীকার করায় আত্মীয়-স্বজনরা উদ্বিগ্ন হয়ে তাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় খুজে বেড়াচ্ছে। কোথাও তাদেরকে খুজে পাচ্ছে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ