Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কক্সবাজার মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রমজান আলীর সেচ্ছাচারিতায় দুই মেধাবী শিক্ষিকা চাকরিচ্যুত

শাস্তিমূলক ব্যবস্থার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদন

| প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কক্সবাজার অফিস : কক্সবাজার মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের স্বেচাচারিতায় ওই বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষিকাকে নিয়ম বর্হিভূতব চাকরিচ্ছুত করা হয়েছে বলে জানাগছে। নিলুফার ইয়াসমিন এবং সুজাতা বড়–য়া কক্সবাজার কে.জি এন্ড মডেল হাই স্কুলের প্রাথমিক শাখার দু’জন শিক্ষিকা। যাদের একজনের চাকুরী যথাক্রমে ২১ বছর এবং অপরজনের ০৫ বছর। নিলুফার ইয়াসমিন ০৩.০৩.১৯৯৬ ইং এবং সুজাতা বড়–য়া ০৮.০৮.২০১২ ইং কক্সবাজার কে.জি এন্ড মডেল হাই স্কুলে প্রাথমিক শাখায় যোগদান করেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষক অভিভাবকসহ সকলের মাঝে এরা দু’জনের খুবই সুনাম রয়েছে। দীর্ঘ চাকুরী জীবনে এরা কখনও শৃঙ্খলা ভঙ্গ বা কারো সাথে অসদাচরণ করেননি। প্রধান শিক্ষকের স্বেচাচারিতায় ওই দুই শিক্ষিকা আজ চাকরিচ্ছুত।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, এরা দু’জন অভিজ্ঞ শিক্ষকের অপরাধ হলো এদের সন্তানদ্বয় পড়ালেখায় খুবই মেধাবী এবং বরাবরই ভাল রেজাল্ট করে থাকে। তেমনিভাবে বিগত ২০১৬ সালের পিএসসি পরীক্ষায় এদু’জন শিক্ষকের সন্তান যথাক্রমে তাহমিত জাওয়াদ চৌধুরী এবং নিলাঞ্জনা বড়–য়া অথৈ কক্সবাজার কে.জি এন্ড মডেল হাই স্কুল হতে টেলেন্টপুল বৃত্তিসহ জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। এখানেই এদের সাফল্যের শেষ নয়। ২০১৭ সালে সরকারী স্কুলে প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষায় এ দু’জন শিক্ষার্থী নিজ নিজ ক্ষেত্রে সাফল্য দেখিয়ে সরকারী স্কুলে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেছে। এতেই ঘটে যায় বিপত্তি। সন্তানদের ক্রমান্বয়ে ভাল রেজাল্ট এবং সরকারী বিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করায় আজ বিপদে পড়েছে হতভাগা উক্ত দু’জন শিক্ষিকা। এ দু’জন শিক্ষার্থী টেলেন্টপুল বৃত্তিসহ জিপিএ-৫ পেয়ে সরকারী বিদ্যালয়ে ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করায় খর্গ নেমে আসে এদের মায়ের জীবনে। সন্তানেরা ভাল রেজাল্ট করলে পরিবারের সদ্যস্যসহ আতœীয়-স্বজনদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। এদু’জন শিক্ষার্থীর জীবন যেন উল্টো পথে ঘুরল। ভাল রেজাল্টের জন্য এদের পরিবারে আনন্দের বদলে আজ বয়ে যাচ্ছে বেদনা । কক্সবাজার কে.জি এন্ড মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ রমজার আলী যেন এদের জীবনের জন্য আজ অভিষাপ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। উক্ত দু’জন শিক্ষার্থীকে তার স্কুলে না রেখে সরকারী স্কুলে ভর্তি করানোর অপরাধে উল্লেখিত দু’জন হতভাগা শিক্ষিকাকে চাকুরী থেকে অপসারণ করেন বিতর্কিত প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ রমজান আলী।
কক্সবাজর কে.জি এন্ড মডেল হাই স্কুল হতে এদু’জন শিক্ষার্থী সরকারী বিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায়, তাদের টিসি’র জন্য উক্ত বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ রমজান আলীর নিকট গেলে তিনি এমর্মে নির্দেশনা জারী করেন যে, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তানদের ছাড়পত্র নিতে হলে প্রথমে শিক্ষকদেরকে চাকুরী হতে পদত্যাগ করতে হবে। উক্ত অযৌক্তিক নির্দেশনা বিগত ০৪/০১/২০১৭ ইং তারা জেলা প্রশাসকের নিকট দাখিল করেন। তাৎক্ষনিকভাবে জেলা প্রশাসক প্রধান শিক্ষক রমজান আলীকে শিক্ষার্থীদের ছাড়পত্র প্রদানের জন্য টেলিফোনে নির্দেশনা প্রদান করেন। তার নির্দেশনা পেয়ে প্রধান শিক্ষক ছাড়পত্র প্রদান করতে বাধ্য হয় এবং জেলা প্রশাসকের ভূমিকায় তাদের সন্তানদেরকে কক্সবাজার সরকারী বালক/বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করাতে সক্ষম হয়। তাদের সন্তানদেরকে বিদ্যালয় হতে ছাড়পত্র প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসকের নির্দেশনার কারণে প্রধান শিক্ষক রমজান আলী পরবর্তীতে তাদের শিক্ষকতার চাকুরী থেকে অপসারণের জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করে আসছিলেন এরই ধারাবাহিকতায় বিগত ১৮/০২/২০১৭ ইং তিনি উক্ত দু’জন শিক্ষিকাকে স্কুলে আসতে মৌখিকভাবে নিষেধ করেন এবং প্রধান শিক্ষক আরও জানান যে, তাঁর হাত অনেক লম্বা তাকে কেউ কিছু করতে পারবেনা।
চাকুরী ফেরত চেয়ে উক্ত দু’জন শিক্ষিকা ১২/০২/২০১৭ ইং জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার বরাবর আবেদন করেন। জেলা প্রশাসক উক্ত আবেদনটির গুরুত্ব বিবেচনা করে অতি: জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি)-কে তদন্তের নির্দেশ দেন। উভয় পক্ষের বিস্তারিত শুনানী শেষে অতি: জেলা প্রশাসক কর্তৃক ১৮/০৪/২০১৭ ইং তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, অভিযোগকারী শিক্ষিকাদের সন্তানদের উক্ত বিদ্যালয় হতে সরকারী বিদ্যালয়ে ভর্তি করার প্রেক্ষিতে প্রতিহিংসামূলক আচরণ হিসাবে তথাকথিত গোল্ডেন হ্যান্ডস্যাকের মাধ্যমে উক্ত দু’জন শিক্ষিকাকে চাকুরী হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত, অমানবিক, স্বেচ্চাচারিতা ও প্রতিহিংসামূলক আচরণের জন্য প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ রমজান আলীর এমপিও বাতিলসহ তার রিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে।
মুহাম্মদ রমজান আলীর এহেন আচরণ প্রতিহিংসার বহি:প্রকাশ এবং নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত বলে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর পত্র প্রেরণ করেন যার স্মারক নং-০৫.২০. ২২০০.১২৭.১০.০০৪.২০১৭-২৩১, তারিখ: ২৭/০৪/২০১৭ ইং।
তবে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ রমজান আলী স্বাক্ষরিত একটি পত্রে উল্লেখ রয়েছে, “প্রাথমিক সমাপণী পরীক্ষা শেষে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তানদের ছাড়পত্র গ্রহণকারী শিক্ষকদের চাকুরী হতে পদত্যাগ পত্র জমা নেয়া স্বাপেক্ষে ছাড়পত্র দেয়ার বিষয়ে একাডেমিক কমিটি সম্মতি প্রকাশ করেছেন”।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ