Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কায় এলাকায় আতঙ্ক

| প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বাঁশগাড়ী চরাঞ্চলে পুলিশ-লাঠিয়াল সংঘর্ষ
* অপহৃত ৩ পুলিশ কন্সটেবল উদ্ধার
* গ্রেফতারকৃতদের হদিস নেই
* বন্দুক ও টেঁটা নিয়ে পুলিশকে ধাওয়া

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : রায়পুরার দুর্গম চরাঞ্চলের বাঁশগাড়ীরচরে ত্রিমুখী উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত শুক্রবার বিকেলে সাহেদ সরকারের লাঠিয়াল বাহিনী ও পুলিশের মধ্যে বন্দুক ও টেটা যুদ্ধের পর এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সংঘর্ষের সময় অপহৃত ৩ পুলিশ কন্সটেবলকে উদ্ধার করা হয়েছে। সংঘর্ষের পর আওয়ামী লীগের দুই লাঠিয়াল বাহিনী মুখোমুখী অবস্থান নিয়েছে। অন্যদিকে দাঙ্গা পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। যে কোন সময়ই বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছে সাধারণ মানুষ।
জানা গেছে, বিগত ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই লাঠিয়াল বাহিনীর মধ্যে সংঘটিত ৭টি হত্যাকান্ডসহ ৪১টি মামলা হয়েছে রায়পুরা থানায়। এরপরও অব্যাহতভাবে চলছে বোমাবাজী, চাঁদাবাজি, ভাঙচুর, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। এসব ঘটনা নিয়ে রায়পুরার এমপি ও সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু গত ২৪ ও ২৫ মে রায়পুরা রাজিউদ্দিন অডিটরিয়মে বিবদমান আওয়ামী লীগের দুই লাঠিয়াল বাহিনীর নেতাদের নিয়ে ২ দিনব্যাপী শালিস বৈঠক করে। কিন্তু শালিসে কোন সিদ্ধান্ত পৌঁছতে না পারায় পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয় আগামী ৭ জুন। এরই মধ্যে গত শুক্রবার বিকেলে রায়পুরা থানা পুলিশ মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামিদের গ্রেফতার করার জন্য এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযান চলাকালে রায়পুরা থানা পুলিশ বাঁশগাড়ীর জোড়বিল এলাকা থেকে সাদেক সরকারের প্রধান লাঠিয়াল সর্দার রুপ মিয়া মেম্বারসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সাহেদ সরকারের লাঠিয়াল বাহিনী রুপমিয়া মেম্বারসহ ৪ জনকে ছিনিয়ে নেয়ার জন্য পুলিশের উপর হামলা চালায়। তারা বন্দুক ও টেঁটা নিয়ে পুলিশকে ধাওয়া করে পিছনদিক থেকে ৩ পুলিশ কন্সটেবলকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি বর্ষণ করে লাঠিয়ালদেরকে ধাওয়া কতে করতে গ্রেফতারকৃত রুপমিয়াসহ ৪ লাঠিয়ালকে নিয়ে বাঁশগাড়ী পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এসময় লাঠিয়ালরা পুনরায় সংগঠিত হয়ে বাঁশগাড়ী পুলিশ ফাঁড়ি ঘেরাও করে। পরে লাঠিয়ারা রুপমিয়া মেম্বার ও অন্যান্যদেরকে ছিনিয়ে নেয়ার জন্য পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ, বোমা ও টেঁটা নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ প্রাণ রক্ষার্থে পাল্টা গুলি বর্ষণ করতে থাকলে ৩ পুলিশসহ উভয় পক্ষের কমবেশী ২৫ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে মোস্তফা, নবী, রুবেল, মাসুদ, এরশাদ, আনোয়ার নামে ৬ জনের নাম জানা গেছে। বাকীদের নাম জানা যায়নি। এরা বিভিন্ন ক্লিনিকে গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছে। এদিকে ৩ পুলিশ সদস্য লাঠিয়ালদের হাতে অপহৃত হবার খবর পেয়ে নরসিংদী ও ভৈরব থেকে পুলিশ গিয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২ পুলিশ কন্সটেবলকে উদ্ধার করে। কিন্তু হামিদ নামে একজন একজন কন্সটেবলকে উদ্ধার করতে পারেনি। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সফিউর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের বিশেষ টিম এলাকায় অভিযান পরিচালিয়ে শুক্রবার রাত ১০ টায় অপহৃত পুলিশ কন্সটেবল হামিদকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
এই ঘটনার পর থেকে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সাহেদ সরকারের লাঠিয়াল বাহিনীর বিরুদ্ধে পুলিশী অভিযানের সুযোগে ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হকের লাঠিয়াল বাহিনী পূনরায় সংগঠিত হয়ে ইঞ্জিনের নৌকা নিয়ে মেঘনায় টহল দিচ্ছে। সিরাজুল হকের লাঠিয়াল বাহিনী চেষ্টা চালাচ্ছে এলাকায় উঠার জন্য এবং সাহেদ সরকারের বাহিনী বন্দুক, বোমা ও টেঁটা নিয়ে মেঘনার তীরবর্তী এলাকাগুলোতে পাহাড়া দিচ্ছে সিরাজুলের বাহিনীকে ঠেক দেয়ার জন্য।
মাঝখানে রয়েছে দাঙ্গা পুলিশের দল। দুই লাঠিয়াল বাহিনী ও পুলিশের উপস্থিতিতে সেখানে ব্যাপক উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে রুপ মিয়া মেম্বার, আজিজুল, জাকির ও হাবিবুর নামে গ্রেফতারকৃত ৪ লাঠিয়াল সর্দার বর্তমানে কোথায় আছে তা জানা যায়নি। পুলিশ বলেছে, গ্রেফতারের পরই লাঠিয়ালরা তাদেরকে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। পক্ষান্তরে তাদের আত্মীয়-স্বজনরা জানিয়েছে তারা এখন পুলিশ হেফাজতেই রয়েছে। তবে তারা গ্রেফতারকৃতদের কোন সন্ধান পাচ্ছে না। এ নিয়ে লাঠিয়াল বাহিনীসহ আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে গত শুক্রবার পুলিশ ও সাহেদ সরকারের লাঠিয়াল বাহিনীর মধ্যে সংঘটিত বন্দুক যুদ্ধের পর এলায় ব্যাপক পুলিশী অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে এলাকার লোকজন। তারা জানিয়েছে, রাজনগর, ও বালুয়াকান্দী এলাকায় পুলিশী অভিযান চলাকালে ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে। পুলিশের ভয়ে এসব গ্রাম থেকে নারী-পুরুষ ও শিশুরা নিরাপদ দূরত্বে পালিয়ে যাচ্ছে। বাঁশগাড়ীর গ্রামগুলোতে এখন শুধুই আতঙ্ক বিরাজ করছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ