Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অনির্বাণের আলো ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে গল্প-আড্ডায় বুনা স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিলো

| প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিজানুর রহমান তোতা : দরকার শুধু উদ্যোগের। তাহলে যে কোন অসাধ্য কাজ সাধন করা যায়। এর একটি বড় প্রমাণ অজপাড়া গা’য়ের অণির্বাণ লাইব্রেরি। কখনো কেউ কল্পনা করেনি কপোতাক্ষ নদ পাড় ও উপকুলীয় অঞ্চলের অন্ধকারে ডুবে থাকা গ্রামটি আলোকিত হবে। একটি লাইব্রেরি অঞ্চলকে ছাপিয়ে এখন জাতীয়পর্যায়েও সাড়া জাগিয়েছে। অনুকরণীয় দৃষ্টান্তস্থাপন করেছে। দিনে দিনে ব্যাপক পরিচিতি পাচ্ছে লাইব্রেরীকে ঘিরে মামুদকাটি। গ্রামটি খুলনা জেলা সদর থেকে ৬০ কিলোমিটার দক্ষিণে পাইকগাছায়। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা-সংস্কৃতি ও তথ্য-প্রযুক্তির আলো ছড়াচ্ছে লাইব্রেরীটি। সরেজমিনে লাইব্রেরি গ্রাম পরিদর্শনে গিয়ে গল্প শোনা গেছে কিভাবে এর পরিকল্পনা হয়। পরিকল্পনাকারী একজন যুবক অতিকষ্ঠে লেখাপড়া শিখে গ্রামের দিকে দৃষ্টি দেন। প্রায় সবাই বড় হয়ে সাধারণত দেশবিদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকেন। গ্রামের দিকে দৃষ্টি দেন না। কিন্তু লাইব্রেরীর পরিকল্পনাকারী জন্মস্থানের মাটির টানে ছুটে এসে দৃষ্টান্তস্থাপন করেন। উদ্যোগ নেন গ্রামকে আলোকিত করার। তিনি হচ্ছেন একজন পুলিশ অফিসার। নাম জয়দেব কুমার ভদ্র। বর্তমানে তিনি হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার। যশোরে পুলিশ সুপার থাকাকালে সাংবাদিকদের সাথে তার সম্পকর্ ছিল নিবিড়। সেইসুবাদে অনেকেই গেছেন তার গ্রামে। গ্রামটিও সুন্দর। জয়দেব কুমার ভদ্রসহ প্রত্যেকের বাড়ি যেন বাগানবাড়ি। প্রতিটি বাড়ি প্রায় সব ফলের গাছে ঘেরা।
লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার কাহিনী সত্যিই গল্পের মতো। জয়দেব কুমার ভদ্রের উদ্যোগে মামুদকাটি গ্রামের কিশোর কিশোরীরা বিভিন্ন দিবস ও অনুষ্ঠান উপলক্ষে দল বেঁধে গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দু’ চার টাকা সংগ্রহ করে তা জমিয়ে লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করেন। তখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন জয়দেব কুমার ভদ্র। ছুটিতে বাড়ি এসে তিনি কপোতাক্ষ নদের পাড়ে মামুদ কাটী শ্মশান ঘাটে বসেন তার চার বন্ধুর সাথে। তারা হচ্ছেন সোনাতন কাটীর মানিক ভদ্র, মামুদ কাটীর বিশ্বকর্মা মন্ডল ভোলা এবং হরিঢালী গ্রামের মৃণাল ঘোষ। আড্ডা দিতে দিতে তারা সিদ্ধান্তে পৌঁছান গ্রামে একটি লাইব্রেরি স্থাপনের। সেই স্বপ্ন আজ বাস্তব।
লাইব্রেরির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক মানিক ভদ্র বললেন, আমাদের চারবন্ধুর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আশপাশের কয়েক গ্রামের আগ্রহীদের নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে লাইব্রেরি স্থাপনের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। এক্ষেত্রে স্থানীয় স্কুল কলেজের শিক্ষকদের পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের এই কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ১৯৯০ সালের ১০ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে লাইব্রেরির কার্যক্রম শুরু হয়। জয়দেব কুমার ভদ্র জানালেন, মহান বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয় ‘অনির্বাণ লাইব্রেরি’। খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার মামুদ কাটী গ্রামে অবস্থিত হরিসভার একটি ঘর লাইব্রেরির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বরাদ্দ পাওয়া যায়। প্রথমে প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের ব্যক্তিগত সংগ্রহের বই দিয়ে লাইব্রেরির সূচনা হয়। এরপর সকলের কাছ থেকে বই ও অর্থ সংগ্রহের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি সমৃদ্ধি লাভ করতে থাকে। বর্তমানে নিজস্ব জায়গায় একতলা ভবনের লাইব্রেরি পুর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছে। সাংবাদি নিখিল কুমার ভদ্র ও প্রফেসর বিধান চন্দ্রসহ অনেকেই প্রাণপন চেষ্টা করেছেন লাইব্রেরি সমৃদ্ধি করতে।
লাইব্রেরির বিষয়ে কথা হয়, স্থানীয় সাংবাদিক এস এম মুস্তাফিজুর রহমান পারভেজের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রত্যন্ত উপক‚লের একটি গ্রামে লাইব্রেরির কার্যক্রম শুরু হলেও কয়েক বছরের মধ্যেই তা খুলনা, যশোর ও সাতক্ষীরা জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় মানুষকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়। দুর-দূরান্তের অনেকেই এই লাইব্রেরির কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন। প্রতিষ্ঠানটি কেবলমাত্র বই পড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। প্রতিষ্ঠানটি হয়ে উঠেছে এতদঞ্চলের প্রগতিশীল সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম কেন্দ্রস্থল।
লাইব্রেরীর সভাপতি ও সম্পাদক বললেন, শিক্ষার্থীদের বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তোলার পাশাপাশি লাইব্রেরির পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সকল জাতীয় দিবস উদযাপন, বিখ্যাত মনীষীদের জন্ম-মৃত্যুদিন উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রকাশ করা হয় সাহিত্য সাময়িকী ও বাৎসরিক দিনপঞ্জি/ ক্যালেন্ডার। বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা, বৃক্ষরোপন কর্মসূচিসহ নানা ধরণের সামাজিক অনুষ্ঠানেও লাইব্রেরির সম্পৃক্ততা রয়েছে। লাইব্রেরির পক্ষ থেকে এলাকার মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। ইতোমধ্যেই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কেন্দ্র চালু ও এলাকার শিক্ষার্থীদের আইটি প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা গ্রহণ হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ