Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রাজধানীর অভিজাত এলাকার লেক হবে দৃষ্টিনন্দন

| প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

 রাজউকের এ উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে ২০২০ সালে ষ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে ২ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা : ২৯৮ একরের গুলশান-বনানী-বারিধারা লেকের ৮টি স্থানে হাতিরঝিলের মতো নান্দনিক সেতু হবে

উমর ফারুক আলহাদী : রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক হবে হাতিরঝিলের চেয়েও অধিক দৃষ্টিনন্দন। গুলশান-বনানী ও বারিধারা লেকের পরিবেশ উন্নয়ন ও লেক রক্ষার জন্য প্রায় ২ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই লেকের ইন্নয়ন করচ্ছে রাজউক। প্রথম দফায় প্রকল্পের ব্যয় যা ছিল তা থেকে বাড়িয়ে এ মহাপ্রকল্পটি বাস্তবায়নে রাজউক পুরোদমে কাজ শুরু করেছে। নতুন করে বরাদ্দ বাড়িয়ে চলতি মাস থেকে তিনটি ধাপে কাজ শুরু করেছে রাজউক কর্তৃপক্ষ। আগামী তিন বছরের মধ্যে এই লেক তিনটি হবে হাতিরঝিলের ন্যায় দৃষ্টিনন্দন। প্রায় ২৯৮ একরের গুলশান-বনানী-বারিধারা এ লেকের ৮টি স্থানে হাতিরঝিলের মতো নান্দনিক সেতুও নির্মাণ করা হবে। গুলশান-বারিধারা ও বনানী লেকের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় রাজউক, ঢাকা ওয়াসা ও পরিবেশ অধিদফতরের সমন্বিতভাবে কাজ শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত মাসে তিন ধাপে ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে কাজ শুরু করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে দুই ধাপের জন্য আরো ৪০ কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যাবে। আর আগামী এক বছরের মধ্যেই এ লেকগুলোর পরিবেশ ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক ওপরে স্থাপন করা হবে ৬টি ব্রিজ ও অন্যান্য উন্নয়ন কাজে পাল্টে যাবে পুরো এলাকার চিত্র। রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এমনটি জানিয়েছেন।
রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন) আবদুর রহমান বলেছেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে হাতির ঝিলের চেয়েও একটি সুন্দর দর্শনীয় স্থান হবে । দৃষ্টিনন্দন হবে গুলশান বনানীর লেক। তিনি বলেন, জমি অধিগ্রহনের পর সম্পূর্ণ নতুনভাবে এবং নতুন নতুন কার্যক্রম যুক্ত করায় প্রকল্পটির ব্যয় অনেক বেশি বাড়ছে।তিনি বলেন,আরো প্রায় দুই হাজার সাতশ’ ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রক্রিয়াধীন। অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। শিগগির এ বরাদ্দের অনুমোদন পাওয়া যাবে, আর সবগুলো ধাপের কাজ শুরু কররার জন্য আগামী জুনের মধ্যে অনুমোদন করাতে পারলে ২০২০ সালের মধ্যেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হচ্ছে ২ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা। এর ফলে মূল ব্যয়ের তুলনায় খরচ বাড়ছে ৬০৬ শতাংশ। শুধু তাই নয়, প্রকল্পটি ৪ বছরে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এখন সময় লাগছে ১০ বছর। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।
ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানোর কারণ হিসেবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বলছে, প্রকল্পটিতে নতুনভাবে প্রায় ১৯টি অঙ্গ যুক্ত করা হয়েছে। এতে হাতিরঝিলের চেয়ে প্রকল্পটি দৃষ্টিনন্দন করা হবে। এ সংক্রান্তএকটি সংশোধনী প্রস্তাব এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় পরিকল্পনা কমিশনে।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়,পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন করা হচ্ছে। অতীতে অপরিকল্পিত ভাবে কিছূ কাজ করায় পুরো ঢাকা শহরে বাড়ছে যানজট। এমনভাবে বা এমন জায়গায় ফ্লাইওভার করতে হবে তা যেন হয় পরিকল্পিত, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে করে দেখিয়েছে, যেমন কুড়িল ফ্লাইওভার, জিয়া কলোনী ফ্লাইওভার আর হাতিরঝিল, বিজয় স্বরনী সংযোগ সড়ক ইত্যাদি
একটি শহরের সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে লেকের অবদান অপরিসীম। ঢাকার বুকেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কয়েকটি লেক। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ঢাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে লেকগুলোর দখল ও দূষণের মাত্রাও তীব্রভাবে বেড়ে চলেছে। দখলের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না রাজধানীর লেকগুলো। গুলশান লেকের বেশ কিছু জায়গায়ই ইতোমধ্যে দখল হয়ে গেছে। জায়গা দখল করে বহুতল ভবন, টিনশেড ঘর, বস্তি তৈরি করা হয়েছে। এখন এগুলো উচ্ছেদ করে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন মূলক কাজ হাতে নিয়েছে রাজউক।
পরিবেশবিদরা বলছেন, বিপুল জনসংখ্যার নগরী ঢাকা। পরিবেশ বিপর্যয়সহ নানা কারণে ঢাকা দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। প্রশস্ত রাস্তা নেই, খেলার মাঠ নেই, উদ্যান নেই, প্রয়োজনীয় জলাশয় নেই। নদী-নালা সব দখলদূষণে পরিত্যক্ত প্রায়। এ অবস্থায় এখানে জীবন ধারণ করাই কঠিন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া আমাদের টিকে থাকা দায়। নিজেদের স্বার্থেই রাজধানীর জলাশয়গুলো বাঁচিয়ে রাখার একান্ত প্রয়োজন।
এদিকে রাজউক বলছে,অনিয়ম, দুর্নীতি সহ্য করা হবে আত্মঘাতী। দখলদাররা যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তারা সংখ্যায় কম। গুটিকয়েক মানুষের স্বার্থ হাসিলের জন্য বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। গুলশান লেক পুনরুদ্ধারে সর্বশক্তি নিয়োগ করা হয়েছে এবং উদ্ধার করাও হয়েছে।
রাজধানীর প্রাকৃতিক পরিবেশ টিকিয়ে রাখতে কয়েক বছর আগে লেকগুলো সংস্কারের মহাপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। লেক খনন, ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হয়। কিন্তু মহাপরিকল্পনা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে উৎসাহ দেখা দিয়েছে। এ লেকটির আধুনিকীকরণের ৭৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্প সরকার ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে। কাজও শুরু হয়েছে। ধানমন্ডি লেক আধুনিকায়নে নেয়া ২৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ এখন রয়েছে চলমান অবস্থায়। গুলশান-বারিধারা লেকের আধুনিকায়নে ৪১০ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলছে।
রাজউক জানায়,গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্প ২০১৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। পরে নানা কারণ দেখিয়ে ৬১১ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় বাড়িয়ে মেয়াদ ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত সংশোধন করা হয়। এখন আবার ২য় বারের মতো ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে।
রাজউক জানায়, প্রায়২৯৮ একরের এই লেকের গুলশান-বনানী-বারিধারায় ৮টি স্থানে হাতিরঝিলের মতো নান্দনিক সেতু তৈরি করা হবে। গুলশান ও বাড্ডার মধ্যে একটি এবং গুলশান-২ থেকে বারিধারা যেতে একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। নিকেতনে বিদ্যমান সেতুটি ভেঙ্গে এখানে একটি বড় সেতু তৈরি করা হবে। এছাড়া, শাহজাদপুরের ঝিলপাড়ে একটি, বনানী থেকে গুলশান-২ নাম্বারে যেতে একটি, গুলশান-১ নাম্বারে কাছে একটি, বনানী থেকে গুলশান-২ নাম্বারে যেতে একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি ২০১৫ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। প্রকল্পটি ২০২০ সালে শেষ হবে।
গুলশান লেক প্রকল্পের পরিচালক মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, হাতিরঝিলের মতোই আরও একটি নান্দনিক প্রæকল্প হতে যাচ্ছে গুলশান লেক প্রকল্প। এখানে ৮টি নান্দনিক সেতু হবে। এছাড়া গুলশান-বনানী-বারিধারা এই এলাকার বিভিন্ন সংযোগ সড়ক, ডাইভারসন রোড, কালভার্ট ভেঙেও বড় সেতু তৈরি করা হবে। লেকের তলদেশের কাদা মাটি, আবর্জনা অপসারণ করে লেকের গভীরতা বৃদ্ধি করা হবে। লেকের পানি থেকে যেন গন্ধ বের না হয় সেই লক্ষ্যে ‘গ্রীন অ্যাপ্রোচ সোলার অ্যাকুয়াটিক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ স্থাপন করা হবে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, গুলশান লেকের হাতিরঝিল অংশ থেকে গুদারাঘাট পর্যন্ত সবুজে আচ্ছাদিত ওয়াকওয়ে তৈরি করা হয়েছে। লেকের পাশে বালির বস্তা দিয়ে বাঁধ তৈরি করা হয়েছে। বাঁধের ওপরে লাগানো হয়েছে সবুজ ঘাস। এছাড়া লেকের পানিতে থাকা কচুরিপানা অপসারণ করা হয়েছে। লেকের পানি স্বচ্ছ রাখার জন্য মাঝে মাঝে চুনও ব্যবহার করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ