Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এটা আওয়ামী লীগের আপসকামিতার রাজনীতি

মূর্তি অপসারণ নিয়ে বিশিষ্ট নাগরিকের প্রতিক্রিয়া

| প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে অপসারণ করা হয়েছে আলোচিত মূর্তিটি। হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামী ধারায় কয়েকটি দল পবিত্র রমজানের আগেই এটি সরানোর জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল। বিতর্কিত মূর্তি ভাস্কর্য অপসারণ নিয়ে চার বিশিষ্ট নাগরিকের তাদের প্রতিক্রিয়ার পৃথক পৃথক মতামত দেন। তারা বলেছেন, এটা আওয়ামী লীগের আপসকামিতার রাজনীতি। সরকার তথাকথিত ধর্মীয় ভোটের কাছে ক্রমাগত নতি স্বীকার করার আরেকটা বহিঃপ্রকাশ।
বিশিষ্ট্য সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী বলেছেন, আমরা এগুলো মেনে নেব?: এটা তো বিশ্ববিবেককে নাড়া দেবে। কারণ গোটা পৃথিবীর বিচারের প্রতীক হিসেবে সব উচ্চ আদালতের সামনে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্যটি দাঁড় করানো থাকে। এটি আমাদের এখানেও ছিল। এটাকে সরানোর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছিলেন, এটা ভালো লাগছে না, শাড়ি পরিয়ে দেয়া হয়েছে। তারপর এ ব্যাপারে হেফাজতে ইসলামের চাপের মুখে তিনি বলেছেন, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে তিনি কথা বলবেন।
সা¤প্রদায়িক শক্তি যদি এভাবে আমাদের পদানত করে রাখার চেষ্টা করে এবং ক্ষমতাসীন দল তাদের কাছে নতজানু হয়ে যায়, তাহলে এ দেশের সাধারণ মানুষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যে মানুষগুলো এবং লাখ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন দেশে আমরা এগুলো কিছুতেই মেনে নেব না।
মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, এ তো আওয়ামী লীগের বিরাট আপসকামিতার রাজনীতি। আওয়ামী লীগ যে মৌলবাদীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, তার একটা অংশ হিসেবে এটা হলো। শুধু তো এটা না, পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন এবং তাদের অন্যান্য দাবির প্রতি আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সমর্থন তো আমরা দেখতেই পাচিছ। তারা নিজেরাও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের কথা বলছে। কিন্তু দেখা যাচেছ, কোনো না কোনো কারণে তারা একেবারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী যেই চিন্তাভাবনা, কার্যকলাপগুলো রয়েছে, সেটির সঙ্গে একটা আপস করে যাচ্ছে। নারীর হাতে ন্যায়বিচারের একটা দায়িত্ব, একটা ক্ষমতা কিংবা নারী যে ন্যায়বিচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত, অনেক বিষয় এটার সঙ্গে ছিল। একটা মৌলবাদী গোষ্ঠী এটি সরানোর দাবিটা তুলেছে এবং প্রধানমন্ত্রী মনে করেছেন তাদের দাবির সঙ্গে তিনিও একমত। প্রধানমন্ত্রীর ইচছা এবং মৌলবাদীদের যে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এটা সরানো হলো এর পেছনে রক্ষণশীলতা, পশ্চাৎগামিতা, এগুলোর সঙ্গে একটা আপসের অংশ হিসেবেই পুরো বিষয়টিকে দেখছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের ডিন নিসার হোসেন বলেছেন, আমার দুটো মতামত। একটা শিল্পের দিক থেকে। আরেকটা হচেছ সা¤প্রদায়িকতা শক্তির তৎপরতার দিক থেকে। যারা বাংলাদেশ চায়নি, তাদের কথার ওপর চলবে নাকি দেশ! তাদের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কেন সিদ্ধান্ত নিতে যাচেছ? এটা লজ্জাজনক। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে ঠিকই, কিন্তু নেবে শিল্পের বিচারে। এখন যেভাবে নেওয়া হচেছ, তার তীব্র প্রতিবাদ করি। শিল্পের বিচারে ভালো একটি শিল্পকর্ম এখানে বসানো উচিত। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, এটি দুটো ধারণার বহিঃপ্রকাশ। প্রথমত, সরকারের সুপ্রিম কোর্টকে নিয়ন্ত্রণ করার ধারাবাহিক চেষ্টার একটি বহিঃপ্রকাশ। দ্বিতীয়ত, সরকার তথাকথিত ধর্মীয় ভোটের কাছে ক্রমাগত নতি স্বীকার করার আরেকটা বহিঃপ্রকাশ। সুপ্রিম কোর্ট নিয়ন্ত্রণ আর ধর্মীয় জুজুর ভয় এই দুটোই আমাদের আইনের শাসন, গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ-কোনো কিছুর জন্যই শুভ নয়। সবকিছুর জন্যই খুবই অশুভ এবং অশনি সংকেত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ