Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি : কষ্টে দক্ষিণ জনপদের মানুষ

| প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : চালসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি আর নজিরবিহীন বিদ্যুৎ সংকটের সাথে দুঃসহ তাপপ্রবাহে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ যথেষ্ঠ কষ্টে আছেন। রাত পোহালেই রমজান মাস শুরুও বার্তা আসলেও এখনো বিদ্যুৎ সংকটে বিপর্যস্ত দক্ষিণের জনজীবন। এমনকি দিনভর লোডশেডিং সান্ধ্য পীক আওয়ার পেরিয়ে এখন সারা রাত ধরেই অব্যাহত থাকছে। শুক্রবার রাতের প্রথম প্রহর থেকে গতকাল সকাল ৫টা পর্যন্ত গোটা দক্ষিণাঞ্চলেই চাহিদার অর্ধেকেরও কম বিদ্যুৎ সরবারহ করা হয়। ফলে সারা দিনের বিদ্যুৎ ঘাটতি মধ্যরাত পেরিয়ে সকাল পর্যন্ত প্রলম্বিত হওয়ায় সাধারন মানুষের দূর্ভোগ ছিল সব বর্ণনার বাইরে। অপরদিকে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের বাজারেও উত্তাপ ক্রমশ বাড়ছে। বাড়ছে সাধারন মানুষের দূর্ভোগও। চিনি, ছোলা, খেশারী ডাল সহ সব ইফতার সামগ্রীর দাম গত একমাসে ২০Ñ২৫% পর্যন্ত বেড়েছে। পাইকারীতে গত পনের দিনে মুসুর ডালের দাম কমলেও খুচরা পর্যায়ে তার কোন প্রভাব নেই দক্ষিণাঞ্চলে। মোটা চালের দম গত তিন মাসে প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১০টারও বেশী। আর মধ্যম সরু চাল-মিনিকেট’এর দাম বেড়েছে কেজিতে ১২টাকারও বেশী। মাছ, মাংশ,মুরগী আর সবজির বাজারও চড়া। রোজাকে সামনে রেখে টমেটো বাজার থেকে উধাও হয়ে এখন হীমঘরে। পহেলা রোজাতেই তা দু-তিনগুন দরে আবার বাজারে ফিরবে বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা। শশার সরবারহ চাপে হীমঘরে না ঢুকলেও গত পনের দিনে দর বেড়েছে দেড়গুন। বেগুনের কেজি ইতোমধ্যে ৫০টাকা ছুয়েছে।
বিদুৎ সংকটের সাথে বৃষ্টির দেখা না মেলায় তাপপ্রবাহে জনজীবন যথেষ্ঠ বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অপরদিকে গত ২০থেকে ২৪এপ্রিল ভয়াবহ অতি বর্ষনে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি ব্যবস্থায় চরম বিপর্যয় সৃষ্টি করার পরে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের আর দেখা নেই। এবাওে দুদফার অকাল বর্ষনে দক্ষিণাঞ্চলে কৃষি সেক্টরে ক্ষতির পরিমান হাজার কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। এবার বসন্তের শ্রাবন ধারায় দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিÑঅর্থনীতি সহ স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হবার পরে গ্রীষ্মে স্বভাবিক বৃষ্টিপাতের অনুপস্থিতি তাপপ্রবাহ বাড়াচ্ছে। অথচ আবহাওয়া বিভাগের দীর্ঘমেয়াদী বুলেটিনে চলতি মে মাসেও স্বাভাবিক ২৬০মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। গত মার্চে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫২% ও এপ্রিলে ১৬০%-এর মত বেশী বৃষ্টিপাত হয় দক্ষিণাঞ্চলে। কিন্তু গত দিন দশেক যাবত মওশুমের স্বাভাবিক বৃষ্টিরও দেখা নেই। ফলে চলতি মাসে স্বাভাবিক ২৮৬মিলিমিটারের স্থলে গতকাল পর্যন্ত মাসের প্রথম ২৬দিনে দক্ষিণে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৭২মিলিমিটার। অথচ গত এপ্রিলে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিক ১২৬মিলিমটারের স্থলে ২৬০মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
এরই সাথে চলতি মাসের শুরু থেকেই তাপমাত্রার পারদ বাড়তে শুরু করে দক্ষিাণাঞ্চল জুড়ে। গতমাসে ৩৫ডিগ্রী ছুয়ে যাওয়া তাপমাত্রা এমাসের শুরু থেকে জনজীবনে অস্বস্তি বাড়িয়ে ক্রমে চড়তে করে। গত ২১মে বরিশালে স্মরনকালের সর্বোচ্চ ৩৭ডিগ্রী সেলসিয়াসে উঠে যায় তাপমাত্রার পারদ। এর পর থেকে পুরো সপ্তাহ যুড়েই তা ৩৬ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপরে রয়েছে। গতকাল বরিশালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ডিগ্রী সেলসিয়াস। আবহাওয়া বিভাগ গতকালের বুলেটিনে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হবার কথা জানিয়ে আজ সকালের পরবর্তি ৪৮ঘন্টার মধ্যে বৃষ্টিপাতের সম্ভবনার কথা জানিয়ে রেখেছে। অপর একটি লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের বিহার ও তৎসংগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত থাকার কথাও বলা হয়েছে। তবে পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকার কথাও জানিয়ে রেখেছে আবহাওয়া বিভাগ।
আর এরই সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে নজিরবিহীন বিদ্যুৎ সংকট। পশ্চিম জোনে একাধীক উৎপাদন ইউনিট অচল হওয়ার সাথে রোজাকে সামনে রেখে ওভারহলিং করায় সংকট বেড়েছে। সাথে পূর্বজোন থেকে সরবারহ হৃাস করায় পরিস্থিতি হয়েছে আরো ভয়াবহ। বরিশাল ও খুলনা বিভাগ সহ ফরিদপুর অঞ্চলের ২১টি জেলার পশ্চিম জোনে সান্ধ পীক আওয়ারে প্রায় ১৪শ মেগাওয়াট ও ডে-পীক আওয়ারে প্রায় হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরিতে সরবারহ অর্ধেকেরও নিচে। তবে ইতোমধ্যে ভোলা ও ভেড়ামারাতে পিডিবি ও নর্থ-ওয়েষ্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানীর বড় মাপের দুটি কম্বাইন্ড সাইকেল ইউনিট প্রায় স্বাভাবিক উৎপাদনে ফিরে এসেছে। কিন্তু পূর্ব জোন থেকে সরবারহ স্বাভাবিক না হওয়ায় পশ্চিম জোনে বিদ্যুতের হাহাকার চলছে।
ফলে আজ রাতে সম্ভাব্য তারাবীর নামাজে কি অবস্থা হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে এ অঞ্চলের বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানীটির কর্তাসহ বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দায়িত্বশীলদের মধ্যেও। তবে পরিস্থিতি উন্নতির যত আশাবাদ ব্যক্ত করা হোক, এবারের রমজানে দেশের পশ্চিম জোন চাহিদার অন্তত ২৫ভাগ বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকাছে বলে নিশ্চিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধীক দায়িত্বশীল মহল।
আবহাওয়ার উত্তাপের সাথে বিদ্যুৎ ঘাটতির সীমাহীন দূর্ভোগের মাত্রা আরো একধাপ বৃদ্ধি করছে রোজার আগেই নিত্য পণ্য মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টিও। এর সাথে ইফতার সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির শংকাও রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। আগামীকাল সম্ভাব্য পহেলা রমজানে ইফতার সামগ্রী কিনতে গিয়ে দক্ষিণাঞ্চলবাসীকে কি ধরনের বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয় তা দেখার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন দক্ষিণাঞ্চলবাসী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ