Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৮ জুন ২০২৪, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বাদশা মিয়া এখন একপাল ভেড়ার মালিক ছেড়েছেন ভিক্ষাবৃত্তি

| প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু বগুড়া অফিস : পৈতৃক নাম বাদশা মিয়া হলেও শারীরীক প্রতিবন্ধী মানুষটি ভিক্ষা বৃত্তিকেই বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তবে সব সময় মনে মনে হয়তো ভাবতেন কিছু একটা করবেন, কিন্তু বাস্তবতার কাছে বারে বারে হেরে যাচ্ছিলেন বগুড়ার গাবতলী উপজেলার চক সিকান্দার গ্রামের বাসিন্দা এই বাদশা মিয়া (৬৫)। কিন্তু তারপরও ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে কিছু একটা করবেন এমন স্বপ্ন তিনি সব সময়ই দেখতেন । 

অবশেষে একদিন স্বপ্নের মতই তার কাছে এলো একটি অবাক করা প্রস্তাব । তাকে ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়তে হবে । কিন্তু ভিক্ষা না করলে কিভাবে চলবে তার অভাবের সংসার, কি হবে তার বিকল্প আয়ের উৎস ? জানতে চাইলেন প্রস্তাবকারীর কাছে । প্রস্তাবকারী বগুড়ার গ্রাম উন্নয়ন কর্ম (গাক) নামের একটি এনজিওর ‘‘ ভিক্ষুক পূণর্বাসন প্রকল্পের ’’ কো অর্ডিনেটর সাইফুল ইসলাম নিজের পরিচয় দিয়ে বাদশা মিয়াকে জানালেন , তাকে ফকিরী (ভিক্ষাবৃত্তি) ছেড়ে বাবার দেয়া নামের মত সত্যিকারের বাদশাহ হতে হবে। করতে হবে আয় উপার্জন। কিন্তু কিভাবে। কিছু একটা করতে গেলেতো টাকা লাগবে , কে দেবে টাকা ? জিজ্ঞাসু চোখে জানতে চাইলে বাদশাহ মিয়াকে আশ্বস্ত করে সাইফুল ইসলাম জানালেন, টাকা তারা দেবেন। কত টাকা জানতে চাইলে বাদশা মিয়াকে জানানো হলো লাখ টাকা মানে পুরো ১ লাখ টাকা দেয়া হবে গাকের পক্ষ থেকে ।
প্রথমে বিশ্বাস না হলেও ‘‘ ভিক্ষুক পূণর্বাসন প্রকল্পের ’’ আওতায় ফকিরী (ভিক্ষাবৃত্তি) ছাড়ার শর্তে বাদশা মিয়াকে দেয়া হল ১ লাখ টাকা । শুধু টাকা দেয়ায় নয়, সেই এক লাখ টাকার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা সহ প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান সহ পুরোপুরি ভাবে চললো বছর ব্যাপী মনিটরিং। এর ফল হিসেবে বাদশা মিয়া জমি এগ্রিমেন্ট নিয়ে চাষবাস আর ভেড়া কিনে লালন পালন শুরু করলো ।
এখন বাদশা মিয়াকে জীবীকার জন্য আর মানুষের বাড়ি বাড়ি যেয়ে ভিক্ষা করতে হয়না । একটা ভেড়ার পালের মালিক তিনি । লোকে এখন তাকে আর ফকির ( ভিক্ষুক ) বলেনা , প্রতিবেশিরা তাকে বাদশাহ বলে সম্বোধন করে। ভিক্ষুক পূণর্বাসন প্রকল্প ’’ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনজিও কর্ম ‘‘ গাক’’ এর নির্বাহী পরিচালক ড. আলমগীর হোসেন জানালেন পিকেএসএফের অর্থায়নে মুলত প্রাথমিক ভাবে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে তারা এটি বাস্তবায়ন করছেন। গত ১৫-১৬ অর্থবছরে বগুড়ার গাবতলী ও সারিয়াকান্দি উপজেলায় তারা ১২ জন পুরুষ ও নারী ভিক্ষুককে ১ লাখ করে মোট ১২ লাখ টাকা এককালীন দিয়েছেন। প্রদত্ত¡ টাকার সঠিক ব্যবহারও তারা কঠোর ও দায়িত্বশীলতার সাথে মনিটরিং করেছেন। এতে ১২জনই ভিক্ষাবৃত্তি¡র মতো ঘৃণ্য পেশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন। প্রাথমিক সাফল্যের পর তারা প্রকল্পের আরো সম্প্রসারণের আশা করছেন ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ