Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ করা না করা

| প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


কামরুল হাসান দর্পণ : আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ যেন অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। বিএনপির জন্য যেমন জরুরি, তেমনি সরকারি দলের জন্যও জরুরি। ‘জরুরি’ কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তবে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিচারে জরুরিটা যেন ক্ষমতাসীন দলের জন্য একটু বেশি। বিএনপিকে নিয়ে তাদের কথা-বার্তায় তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারা জোর দিয়েই বলছেন, বিএনপিকে নির্বাচনে আসতেই হবে। কেন আসতে হবে, এর ব্যাখ্যা ক্ষমতাসীন দল তাদের মতো করে দিয়েছেন। তারা মনে করছেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলে তার অস্তিত্বই থাকবে না। ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হবে। ক্ষমতাসীন দলের এ কথার বিপরীতে অনেকে এ যুক্তিও দিচ্ছেন যে, আগামী নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও বিতর্কমুক্ত রাখতে হলে ক্ষমতাসীন দলের জন্য বিএনপির অংশগ্রহণ খুবই জরুরি। এর কারণ হচ্ছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দলটি যেভাবে করেছে, তাতে সাংবিধানিক বৈধতা থাকলেও, সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈধতার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে রয়েছে। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে অস্বস্তি রয়েছে। সবাই জানেন, ঐ নির্বাচনে ১৫৩টি আসন  বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়, যা সরকার গঠন করার জন্য যথেষ্ট। নির্বাচনে ভোট দেয়ার আগেই যদি সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জিত হয়ে যায়, তখন সে নির্বাচন অনেকটা অর্থহীন হয়ে পড়ে। এ বিবেচনায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি ক্ষমতাসীন দল বাদে সর্বজনের কাছে তাৎপর্যহীন এবং গুরুত্ব পায়নি। বলা যায়, ক্ষমতাসীন দল এক প্রকার ওয়াক ওভার পেয়ে যায়। এই ওয়াক ওভার কারো জন্যই স্বস্তিকর নয়। দুই দল যখন ফাইনাল ম্যাচে খেলতে নামে, তখন একটি দল যদি না আসে, তবে সে ম্যাচে যাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়, তাতে দলটির সমর্থক তো বটেই নিজেও সন্তুষ্ট হতে পারে না। এ ধরনের ফাইনাল কারো কাছেই ভাল লাগে না। কাম্যও নয়। এতে দর্শক যেমন বঞ্চিত হয়, তেমনি খেলার সৌন্দর্য ও মূল স্পিরিট নষ্ট হয়। আবার এ প্রশ্নও আসতে পারে, কোনো দল যদি মাঠে না আসে, তবে কি খেলা বন্ধ করে দিতে হবে? না, বন্ধ করা উচিত নয়, আবার খেলা চালিয়ে যাওয়া উচিত নয়। খেলাটি যাতে প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ এবং উপভোগ্য হয়, খেলার আগে তা আয়োজকদের নিশ্চিত করতে হয়। এজন্য উভয় দলের মধ্যে বোঝাপড়া অতি জরুরি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে জটিল পরিস্থিতিতে এমন একটি বোঝাপড়া দরকার ছিল। ক্ষমতাসীন দল প্রতিমুহূর্তে অভিযোগ করছে, তারা প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে নির্বাচনে আনার চেষ্টার কোনো ত্রæটি করেনি। নির্বাচনকালীন সরকারে অংশগ্রহণ করা থেকে শুরু করে সব অফারই বিএনপিকে দেয়া হয়েছিল। তাহলে বিএনপি গেল না কেন? না যাওয়ার কারণও সবার জানা। বিএনপি তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চেয়েছিল এবং এ দাবীতে অনড় ছিল। তার ধারণা, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করার অর্থ আত্মহত্যার শামিল। তার এ ধারণা যে একেবারে অমূলক ছিল, তা নয়। কারণ দেশের রাজনীতিতে এমন কোনো পরিবেশ ও পরিস্থিতি কখনো সৃষ্টি হয়নি যে, প্রধান দুই দল একে অন্যের উপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে পারে। এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতিও নেই, এক দলের অধীনে আরেক দল হাসিমুখে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। এই সংস্কৃতি এবং পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস ছিল না বলেই, আওয়ামী লীগের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যায়নি। সে সময় ক্ষমতায় যদি বিএনপি থাকত, তাহলে আওয়ামী লীগও নির্বাচনে যেত না। ’৯৬ সালে দেশের মানুষ তা দেখেছে। ঐ সময়ে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা অনেক জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করেছে। একইভাবে ২০১৪ সালেও বিএনপি ও তার জোট জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করেছে। পার্থক্য শুধু এই, ’৯৬ সালে ক্ষমতাসীন বিএনপি বাধ্য হয়েছে। ’১৪ সালে আওয়ামী লীগ বাধ্য হয়নি। বিএনপিকে বাদ দিয়ে দেশি-বিদেশিদের প্রচ্ছন্ন ও প্রত্যক্ষ প্রভাব এবং বুদ্ধি-পরামর্শে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করে। ভোটারবিহীন নির্বাচন হলেও সংবিধানসম্মত নির্বাচনের দোহাই দিয়ে ক্ষমতায় বহাল থেকে যায়। বলা যায়, বিএনপি এক ধরনের চানক্য নীতির কাছে হেরে যায়।
দুই.
এখন তাহলে বিএনপিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেই হবে-এমন তাকিদ অনুভূত হচ্ছে কেন? এর দুটি কারণ হতে পারে। এক. ক্ষমতাসীনদের কাছে দলিত-পীড়িত বিএনপিকে অস্তিত্ব রক্ষার জন্য নির্বাচন করতে হবে। দলের নেতা-কর্মীদের ধরে রাখতে এবং দল ভাঙা ঠেকাতে এ নির্বাচনে যেতে হবে। শাসক দল তো বটেই, অনেককেই এ ধরনের কথা বলতে দেখা যায়। তার অর্থ হচ্ছে, জয়-পরাজয় যাই হোক না কেন, অস্তিত্ব রক্ষার্থে বিএনপিকে নির্বাচনে যেতে হবে। আপাত দৃষ্টিতে পরিস্থিতি এমনই মনে হচ্ছে। দুই. বিএনপি নির্বাচনে গেলে ক্ষমতাসীন দলের জন্য বিশেষ সুবিধা রয়েছে। ইতোমধ্যে এমন ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, ক্ষমতাসীন দল আগামী নির্বাচনেও জিতবে। এ নির্বাচনে বিএনপি গেলে, সে দেখাতে পারবে দেশের অন্যতম প্রধান দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণয়োগ্য হয়েছে এবং তারা নির্বাচিত হয়েছে। যে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে তাদের মধ্যে অস্বস্তি ছিল, তা তারা কাটিয়ে উঠতে পারবে। অর্থাৎ ক্ষমতাসীন দলকে ৫ জানুয়ারির অগ্রহণযোগ্য ও বিতর্কিত নির্বাচন থেকে বের হয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার জন্য হলেও আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ জরুরি। তবে বিএনপির অংশগ্রহণ কীভাবে হবে, তা এখনও অনিশ্চিত। ক্ষমতাসীন দল স্পষ্টভাবেই বলে দিয়েছে, তাদের অধীনেই নির্বাচন হবে। বিএনপি বলেছে, নির্বাচনী সহায়ক সরকার ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হলে তারা অংশগ্রহণ করবে। এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়, ক্ষমতাসীন দল তাদের অধীনে ছাড়া নির্বাচন হতে দেবে না। এর কারণ, হেরে যাওয়ার ভয়। একজন সাধারণ মানুষও জানে, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীন দলের পরাজয় অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। ক্ষমতাসীন দল তা আরও ভালভাবে জানে। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক যখন নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আগামী নির্বাচনে হেরে গেলে দেশ ছেড়ে পালাতে হবে, তখন বুঝতে বাকি থাকে না, তাদের অধীনে নির্বাচন না হলে হার অনিবার্য। উল্লেখ করা প্রয়োজন, আমাদের দেশের মানুষ সাধারণত কোনো রাজনৈতিক দলকে পরপর দুইবার ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এক্ষেত্রে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল যেভাবেই হোক পরপর দুইবার ক্ষমতায় রয়েছে। এ বিবেচনায় তৃতীয়বার ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি অনেকটা অসম্ভবই বটে। বিশ্বের কোনো দেশেই কোনো দলের পর পর তিনবার ক্ষমতায় আসার নজির নেই। এটি ক্ষমতাসীন দলও জানে। কাজেই তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসতে হলে তাদেরকে আরেকটি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি করতে হবে। তারা কি পুনরায় এ ধরনের একটি নির্বাচন করবে? এ প্রশ্নের উত্তর এখনই পাওয়া কঠিন। বাতাসে অনেক কথাই শোনা যায়। সচেতন মানুষের মধ্যে এমন ধারণা জন্মেছে, যেমন করেই হোক, এ সরকারই আবার ক্ষমতায় আসবে। বিএনপি নির্বাচনে এলেও এমন প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হবে, যেন বিএনপি বিরোধী দলে বসে এবং ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতা অক্ষুন্ন থাকে। এ কথাও শোনা যায়, বিএনপি নির্বাচনে এলে তাকে তৃতীয় দলে পরিণত করা হবে। প্রধান বিরোধী দল করা হবে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে। যারা রাজনীতি সচেতন, তাদের আলাপ-আলোচনায় এসব কথা এখন অহরহ শোনা যায়। বলা বাহুল্য, রাজনীতি নিয়ে মানুষের এমন ধারণা জন্ম নেয়া কখনোই শুভ লক্ষণ হতে পারে না। এ ধারণা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার পরিপন্থী এবং মানুষের গণতান্ত্রিক চেতনায় আঘাত করা। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দেয়ার এ এক অশুভ প্রবণতা। মানুষের সৃষ্ট এমন ধারণা থেকে এটাই স্পষ্ট হয়, দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা নেই। জবরদস্তিমূলক শাসন ব্যবস্থা চলছে। যারা সচেতন শ্রেণী তারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করছেন, ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে এ মনোভাব- যেভাবেই হোক ক্ষমতায় থাকতে হবে। এজন্য ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রশাসন থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সব রাষ্ট্রযন্ত্রকে এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যে, এ সরকার ছাড়া অন্য কোনো সরকার তাদের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। সরকারের বিরুদ্ধে যায়, এমন রাজনৈতিক কর্মকান্ড প্রশাসন যন্ত্র অনেকটা তাদের স্বার্থেই স্বংক্রিয়ভাবে বিরোধী দলকে দমন করে চলেছে। বিশেষ করে সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপিকে যতভাবে পারা যায়, ততভাবে দমিয়ে রাখা হচ্ছে। দলটিকে ঘরবন্দি করে ফেলার সব ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হয়েছে। দলটি তার কার্যক্রম চালাতে মাঠেই নামতে পারছে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে এমন অশঙ্কা করে তাদের মাঠের কর্মসূচি পালন করতে দেয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচন কীভাবে হবে এবং বিএনপিই বা কীভাবে রাজনীতি ও নির্বাচন করবে, তা এক বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।
তিন.
বিএনপির সার্বিক কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে, দলটি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও বলছেন, বিএনপি যে কোনো সময় নির্বাচন করতে প্রস্তুত। তাদের এ কথার সত্যতা পাওয়া যায়, দলটির সাংগঠনিক কাঠামো ঠিক করা এবং নির্বাচনে প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করা থেকে। পত্র-পত্রিকার খবর থেকে জানা যায়, ইতোমধ্যে দলটি ৩০০ আসনের জন্য ৯০০ প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করেছে। ভিশন ২০৩০ দেয়ার পর নির্বাচনী ইশতেহারের কাজও শুরু করেছে। দলের মহাসচিবসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন জেলায় জেলায় কর্মী সম্মেলন করে বেড়াচ্ছেন। নব গঠিত কমিটিগুলো বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী নিয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর জেয়ারত করতে যাচ্ছে। তাদের এই জেয়ারত মিছিলে যে বিপুল উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়, তা দলটির জন্য উদ্দীপনামূলক হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বলা যায়, বিএনপি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি বেশ ভালভাবেই চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসনের শত বাধা-বিপত্তি সত্তে¡ও বিএনপির এই ঘর গোছানো এবং সাংগঠনিক কর্মকান্ড পরিচালনা করার বিষয়টি ক্ষমতাসীন দলের জন্য কিছুটা হলেও আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। তাদের মধ্যে এক ধরনের নার্ভাসনেস দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মন্ত্রীসহ শীর্ষ নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে যখন বিএনপির বিরুদ্ধে চরম কটাক্ষ ও বিষোদগার শোনা যায়, তখন যে কেউ বুঝতে পারে তারা খুবই অস্বস্তিতে রয়েছেন। কারণ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দল তখনই গরম গরম কথা বলে, যখন প্রতিপক্ষ তার জন্য ভয় ও হুমকির কারণ হয়ে উঠে। এই ভয় ও হুমকিকে তুচ্ছ করতে তখন দমন-পীড়নের পাশাপাশি প্রতিপক্ষকে গাল-মন্দ করাই মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়। ইদানিং ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্যে বিএনপিকে নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করার বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে। আমাদের দেশের রাজনীতির ধারা অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসে, ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে ততই অস্থিরতা সৃষ্টি হতে দেখা যায়। ইতোমধ্যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, আগামী বছরের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। এ সংবাদটিও ক্ষমতাসীন দলের নার্ভাস হওয়ার জন্য যথেষ্ট। কারণ, একদিকে মেয়াদ দ্রæত শেষ হয়ে আসছে, অন্যদিকে নির্বাচনটি সুষ্ঠু করার চাপও সৃষ্টি হচ্ছে। বলতে গেলে, ক্ষমতাসীন দল উভয় সংকটে রয়েছে। পুনরায় ক্ষমতায় আসার চিন্তা এবং সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের চ্যালেঞ্জ তাদের সামনে রয়েছে। এই দুই চিন্তা একসাথে সামাল দেয়া যে কোনো সরকারের জন্য অত্যন্ত কঠিন। বিশেষ করে বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার ক্ষমতাসীন হয়, তার জন্য এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সহজ নয়। এ চ্যালেঞ্জ কঠিন করে তুলছে, বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার প্রস্তুতি এবং সাংগঠনিক কর্মকান্ডে প্রাণচাঞ্চল্য। বলার অপেক্ষা রাখে না, শত্রæ বা প্রতিপক্ষকে যখন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে পর্যুদস্ত করার পরও, তাকে দমানো যায় না, তখন তা ভয়েরই কারণ হয়ে উঠে। বিএনপির বর্তমান নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড ক্ষমতাসীন দলের কাছে অনেকটা ভীতি সৃষ্টি করে চলেছে বলে প্রতীয়মাণ হচ্ছে। বিএনপির নেতৃবৃন্দ এটা কতটা বোঝে, তাই প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। তবে বিএনপির যেসব তৃণমূলের নেতা-কর্মী রয়েছে, তারা তা যথার্থভাবেই উপলব্দি করতে পারছে। গত সপ্তাহে গুলশানস্থ বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে হঠাৎ করেই পুলিশের তল্লাশি অভিযান নিয়ে যখন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ফেসবুক পেজ থেকে একটি স্ট্যাটাস দেয়া হয়, তখন দলটির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের তাতে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করতে দেখা যায়। এসব মন্তব্যের মধ্যে দুটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। একটি হচ্ছে, তারা মাঠে নেমে জীবন দিতে প্রস্তুত। তবে মাঠে কার ভরসায় নামবে। কারণ মাঠে নামলে শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের কোনো ইন্সট্রাকশন বা নেতৃত্ব থাকে না। তাহলে কীভাবে আন্দোলন করবে! দ্বিতীয়টি হচ্ছে, নেতা-কর্মীদের অনেকেই চাচ্ছেন  তারেক রহমান দেশে ফিরে নেতৃত্ব দিক। রাজপথে আন্দোলন করুক। তার জন্য জীবন দিতে তারা প্রস্তুত। বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখন এ ধরনের অনুভূতি কাজ করছে। অনেকে আবার বিরক্ত হয়ে মন্তব্য করেছে, প্রতিবারই ঈদের পরে আন্দোলন করা হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। সেই ঈদ কবে আসবে? আমরা জানি না, বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের এই সেন্টিমেন্ট বুঝতে পারছেন কিনা।
চার.
আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে কি করবে না, এটা তার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে। যদিও দলটির সার্বিক কর্মকান্ড বিবেচনায় বলা যায়, সে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং জরুরি বোধ করছে। তবে তার এ জরুরি বোধ যদি ক্ষমতাসীন দলের জরুরি বোধের কারণে হয়ে থাকে, তবে দলটির জন্য তা আত্মঘাতি হবে। বিএনপির জরুরি বোধ, তার প্রয়োজনেই হতে হবে। আবার নির্বাচনে যাওয়া তার এ জরুরি বোধ সহজ পথে যে হবে না, এটা নিশ্চিত। তাকে তার জনসম্পৃক্ত সুষ্ঠু রাজনৈতিক কর্মকান্ড দিয়েই পথ করে নিতে হবে। সর্বজনগ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায়ে আন্দোলন ছাড়া তার সামনে পথ নেই। এজন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে হবে এবং শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে মাঠে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। কেবল সভা-সেমিনার বা সংবাদ সম্মেলনে গরম গরম কথা বলে কোনোদিনই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না। এটা ইউরোপ-আমেরিকা নয় যে গণতান্ত্রিক ধারায় সুষ্ঠু নির্বাচন হয়ে যাবে। বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ আদায় করে নিতে হয়। বিএনপির নেতৃবৃন্দকে এ বাস্তবতা উপলব্ধি করতে হবে। বিএনপিকে এটাও মনে রাখতে হবে, তারা দশ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় নেই। এই দশ বছরে ক্ষমতায় না যাওয়ার কারণ কি এবং ক্ষমতায় কেন যেতে পারেনি, এ কারণগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আগামীতে ক্ষমতায় যেতে হলে কী করতে হবে, ক্ষমতায় না যেতে পারলে কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তারও সূচারু পরিকল্পনা করতে হবে। দশ বছর ধরে দলটির নেতা-কর্মীরা শত প্রতিকূলতার মধ্যেও যে টিকে আছে, দল ছেড়ে বা ভেঙ্গে কোথাও যায়নি, এ বিষয়টির মূল্যায়ণ করতে হবে। দলের প্রতি নেতা-কর্মীদের এই যে অন্তর্নিহিত শক্তি, তা কাজে লাগাতে হবে। এটা বুঝতে হবে ক্ষমতাসীন দলের পরই তার অবস্থান। কাজেই ক্ষমতায় যেতে হলে একটি পদক্ষেপের যে মূল্য, তা তাকে হৃদয়ঙ্গম করতে হবে। নেতা-কর্মীদেরও বুঝাতে হবে। তৃণমূলের যে নেতা-কর্মীরা নেতৃত্বের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে, তা শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বকে উপলব্ধি করতে হবে।  
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ