রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) থেকে : সীতাকুন্ডে সাগর থেকে অবৈধভাবে চিংড়ি পোনা আহরণ ও পাচার রোধে পদক্ষেপ নিতে গিয়ে রাঘব বোয়ালদের লেলিয়ে দেওয়া সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে পড়েছেন ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট ও মৎস্য কর্মকর্তারা! গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে উপজেলার বড়দারোগারহাট থেকে ২০লাখ চিংড়ির একটি বড় চালান আটক করার পর তা অবমুক্ত করতে গেলে চিংড়ি পাচারকারীদের সন্ত্রাসীরা বাধা দেয়। অবশ্য পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এতে মাছগুলো অবমুক্ত করতে বেশ কয়েক ঘন্টা সময় লেগে যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীতাকুন্ডে প্রতিদিনই সাগর থেকে অবৈধভাবে চিংড়ি আহরণ ও পাচার চলছে। কিছু রাঘব বোয়াল স্থানীয় পাচারকারী সিন্ডিকেডের মাধ্যমে বাগদা চিংড়ি সংগ্রহ করে তা খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে তারা একেবারে বিনা বাধায় চিংড়ি আহরণ ও পাচার করে আসলেও বর্তমান মৎস্য কর্মকর্তা সেলিম রেজা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ রহুল আমিনের তৎপরতায় সম্প্রতি চরম বেকায়দায় পড়ে যায় পাচারকারীরা। তারা বারবার চিংড়ির চালান আটক ও সাগরে অবমুক্ত করতে শুরু করলে লোকসানের স্বীকার হতে হতে এখন অনেকটা বেপরোয়া আচরণ শুরু করে তারা। সর্বশেষ গত ২৫ এপ্রিল ও ২৭ এপ্রিল রাতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ রহুল আমিন ও মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা উপজেলার বড়দারোগারহাট স্কেল এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৪লাখ পিস ও ২০লাখ পিস চিংড়ির বড় চালান আটক করলে পাচারকারীরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। বিশেষত গত বৃহস্পতিবার রাতের ২০লাখ বাগদা চিংড়ি আটক করলে এ চালান ছেড়ে দেওয়ার জন্য পাচারকারীরা ব্যাপক তদবির শুরু করেন। স্থানীয় বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল এ চিংড়িগুলো ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। মৎস্য কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে বহু দেন দরবার করেও তা ছাড়িয়ে নিতে না পেরে পাচারকারী সিন্ডিকেডের লোকজন বেপরোয়া হয়ে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দেয়! সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে খুলনাগামী এসপি পরিবহন নামক একটি বাসে (নং ঢাকামেট্টো ব ১৪-৯৫৫১) ২০লাখ চিংড়ি পাচারের খবর পেয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ রুহুল আমিনকে বিষয়টি জানালে তিনি দ্রুত বড়দারোগারহাট এলাকায় গিয়ে গাড়িটি আটক করেন। এরপর চিংড়িগুলো তারা বড় কুমিরা সাগর পাড়ে নিয়ে গেলে শুরু হয় পাচারকারীদের তৎপরতা। তারা মাছগুলো ছাড়িয়ে নিতে মরিয়া হয়ে উঠে। এমনকি তারা সাগর পাড়ে সন্ত্রাসী পাঠিয়ে মাছগুলো অবমুক্ত করতে বাধা দেয়। পরে পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে মাছগুলো সাগরে অবমুক্ত করতে হয়। বিষয়টি জানতে চাইলে ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ রুহুল আমিন প্রতিবেদককে বলেন, ২৫ এপ্রিল বড়দারোগারহাট থেকে খুলনাগামী একটি গাড়ি থেকে সাড়ে ৪লাখ চিংড়ি পোনা আটকের পর বৃহস্পতিবার রাতে আরো একটি বড় চালানের খবর পেয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা আমাকে অবগত করলে আমিসহ চিংড়ি পাচার রোধে অভিযান পরিচালনা করি। উপজেলার বড়দারোগারহাটে এস.পি পরিবহন নামক একটি গাড়ির গতিরোধ করে সেখান থেকে বিভিন্ন পাত্রে রাখা ২০লাখ চিংড়ি পোনা আটক করি। কিন্তু এগুলো আটকের পর থেকেই চিংড়ি পাচারকারী রাঘব বোয়ালদের স্থানীয় প্রভাবশালী মহল এগুলো ছেড়ে দিতে তদবির শুরু করে। কিন্তু এরপরও মাছগুলো না ছেড়ে অবমুক্ত করতে কুমিরা ঘাটঘরে নিয়ে গেলে সেখানে পাচারকারীদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা এসে মৎস্য কর্মকর্তাসহ পাচারে নিয়োজিতদের চিংড়ি অবমুক্ত করতে বাধা দিয়ে মাছ দিয়ে দেবার জন্য চাপ দিতে শুরু করেন। এ পরিস্থিতিতে আমরা সীতাকুন্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি অবগত করি এবং সীতাকুন্ড থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ মোজাম্মেল হককে ঘটনা জানিয়ে পুলিশের সহযোগিতা চাই। পুলিশ তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ নিয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠালে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। শেষে তাদের উপস্থিতিতে পোনাগুলো সাগরে অবমুক্ত করতে রাত দেড়টা বেজে যায়। এদিকে এসব ঘটনার পরও পাচার বন্ধ হয়নি। শুক্রবার ফের ৩লাখ পোনা আটক হয়। আগের মতই বড়দারোগারহাট বাজারে অবস্থান নিয়ে পোনাগুলো আটক করা হয়। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা প্রতিবেদককে বলেন, মশারির নেট বা ঠেলা জাল দিয়ে যেভাবে চিংড়ি শিকার করা হয় তা আইনত দন্ডনীয়। কারণ, এভাবে মাছ শিকার করতে গিয়ে আরো বহু চিংড়িসহ অন্যান্য প্রজাতির মাছ, সামুদ্রিক প্রানী মারা পড়ছে। এ কারণে আইন সংশোধন করে এভাবে চিংড়ি পোনা শিকার সম্পূর্ণরুপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই আমরা এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছি। ইতিপূর্বেও বেশ কয়েকবার চিংড়ি পাচারকালে আমরা আটক করে অবমুক্ত করেছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।