Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মংলা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বেহাল অবস্থা ২৭ জনের স্থলে চিকিৎসক মাত্র ৫ জন

| প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মংলা সংবাদদাতা : সামুদ্রিক বন্দর, উপজেলা ও পৌরসভা এই নিয়ে মংলা। এখানে দুই লক্ষাধিক লোকের জন্য সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র মাত্র একটি। ২৭ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৫ জন। জুনিয়র কনসালট্যান্ট ১০ জনের স্থলে একজনও নেই। আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও এক্সরে করারও ব্যবস্থা নেই। এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই কোন এ্যানেসথেটিষ্ট নেই। ফলে কোন ধরনের অপারেশন হয় না। আবার ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে এখানে এক্সরে অপারেটরের পদটি খালি রয়েছে। ফলে রোগীরা এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোন এক্সরে সুবিধা পায় না। প্যাথলজির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি থাকেন নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নিয়ে। ফলে এ এলাকার জনসাধারন চিকিৎসা সুবিধা থেকে চরমভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্বোধনের মাসখানেক পরই অকেজো হয়ে পড়ে এক্সরে মেশিনটি। অনেক চেষ্টা করেও মেশিনটি ঠিক করা সম্ভব হয়নি। এরপর ২০০৯ সালের অক্টোবরে আনা হয় অত্যাধুনিক ডিজিটাল এক্সরে মেশিন। সেটিও চালু করা যায়নি। আবার এক্সরে মেশিন পরিচালনার জন্য ভোল্টেজ ষ্ট্যাবিলাইজারও নেই। ফলে এ হাসপাতাল থেকে রোগীরা কোন এক্সরে সুবিধা পাচ্ছে না। গত ১৯ এপ্রিল স্থানীয় এমপি তালুকদার আঃ খালেকের উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মংলা উপজেলা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় হাসপাতালের আরএমও ডা. শাহিন হাসপাতালের নানা সমস্যা তুলে ধরে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে একজন অবেদনবিদ (অ্যানেসথেসিস্ট), একজন মেডিসিন ও একজন সার্জারি চিকিৎসক প্রয়োজন। এছাড়া বর্তমান ৫০ শয্যার এ হাসপাতালে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে আগের ৩১ শয্যার। সমস্যা রয়েছে বিভিন্ন ইউনিয়নের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতেও। উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্রে আরো জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পরবর্তীতে এটিকে ৫০ শষ্যায় উন্নীত করা হয়। উদ্বোধনের পর থেকেই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে জুনিয়র কনসালট্যান্ট (এ্যানেসথেসিয়া) পদটি শূন্য। ফলে এ উপজেলার কোন জনগণ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোন অপারেশনের সুবিধা পায় না। আবার ব্যবহার না করার কারণে অপারেশন থিয়েটারের মূল্যবান যন্ত্রপাতিগুলোও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এদিকে হাসপাতালটিকে ঘিরে রয়েছে দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য। ঔষধ কোম্পানীদের প্রতিনিধিদের অতিষ্ঠে সাধারণ রোগীরা ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিরা অধিকাংশ সময় সময় ডাক্তারদের ঘিরে রাখেন। মংলার সোনাখালী গ্রামের কায়কোবাদ গোলদার জানান, আমার স্ত্রীর বাচ্চা প্রসবের জন্যে এ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তির জন্যে গেলে ডাক্তার বলেন এখানে সিজার করার সুযোগ নেই। রোগীকে কোন ক্লিনিক অথবা খুলনা মেডিকেলে নিয়ে যান। পৌরসভার কম্পিউটার ব্যবসায়ী শাহিন বলেন, কোন দুর্ঘটনার রোগী আসলে ডাক্তাররা বলেন, এখানে চিকিৎসা হবে না। খুলনা নিয়ে যান। মংলা থেকে খুলনার দূরত্ব ৫০ কিলোমিটারের বেশী। আবার নদী পার হয়ে যেতে হয়। ফলে রোগীর জন্যে এ এক চরম ভোগান্তি। আবার কোন কোন গুরুতর রোগী খুলনা নেয়ার পথে মারাও যান। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আবাসিক চিকিৎসক মোঃ শাহিন জানান, আমরা চাই দুর্ঘটনা কবলিত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে। কিন্তÍ এ্যানেসথিষ্টের অভাবে আমরা কোন অপারেশন করতে পারি না। ফলে বাধ্য হয়েই আমাদের সুবিধাসংবলিত হাসপাতালে রোগীদের নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করতে হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শেখ আবদুর রকিব চিকিৎসক সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে বহুবার জানানো হয়েছে। তারা আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তÍ সমাধান হয়নি। অপরদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ¦ তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, হাসপাতালের বিরাজমান সমস্যা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে দ্রæত সমাধানের চেষ্টা করা হবে। এ ছাড়া বিদ্যুৎ না থাকার সময়ে যাতে নির্বিঘেœ সেবা দেওয়া যায় সেজন্য হাসপাতালের জন্য একটি সোলার প্যানেল দেওয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ