বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ কুমিল্লা। নজরুলের সামগ্রিক জীবনের অস্তিত্ব কুমিল্লা কেন্দ্রিক। নজরুলের রাজনীতি, প্রেম, বিয়ে, সঙ্গীত ও সাহিত্যের বর্ণিল অধ্যায় জুড়ে রয়েছে কুমিল্লা। পাঁচবারের আগমন আর এগার মাসের অবস্থান ঘিরে কবি নজরুলের জীবনের মোড় ঘুরার প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়েছিল এই কুমিল্লাতেই। কবি নজরুলের প্রাণের শহর কুমিল্লায় নজরুল প্রেমীরা কবিকে স্মরণ করে আপন মহিমায়। আজ বৃহস্পতিবার কবির ১১৮তম জন্মবার্ষিকী ঘিরে জেলা, উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন আয়োজনের মধ্যদিয়ে কুমিল্লাকে মুখর করে তুলবে।
দ্রোহ, মানবতা ও সাম্যের কবি নজরুেেলর জীবন ও সাহিত্যের বর্ণিল অধ্যায় জুড়ে জড়িয়ে আছে পথিকৃৎ কুমিল্লা। এগার মাসে পাঁচবারের আগমন নজরুলের জীবনের মোড় ঘোরার প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়েছে কুমিল্লাতেই। কবি নজরুল প্রথম কুমিলায় আসেন তার বিশিষ্ট বন্ধু মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের আলী আকবর খাঁর সঙ্গে ১৯২১ সালের এপ্রিল মাসে। মুরাদনগরের দৌলতপুরের খা বাড়িতে দুই মাস অবস্থান করে নজরুল বহু গান-কবিতা রচনা করেন। এসময়টিতে নজরুলের সাথে পরিচয় ঘটে আলী আকবর খানের ভাগিনী নার্গিস আসার খানমের। তারপর প্রেম ও বিয়ে এবং বিয়ের রাতের কোন এক সময়ে নার্গিসকে ছেড়ে চলে আসা। নজরুল দ্বিতীয়বার কুমিল্লায় আসেন ১৯২১ সালের নভেম্বর মাসে। ছিলেন এক মাস। এসময়ে কবি বৃটিশ বিরোধী গান গেয়েছিলেন। তখন তাকে কুমিল্লা শহরের রাজগঞ্জ এলাকার রাস্তা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। কবি নজরুলের তৃতীয় বার আগমন ঘটেছিল ১৯২২ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে। চার মাস অবস্থানের পর জুন মাসে তিনি ফিরে যান কোলকাতায়। এ চার মাস সময়ে প্রমীলার প্রেমের আকর্ষণ তাকে প্রভাবিত করে। যা শেষ পর্যন্ত পরিণয়ে গড়ায়। নজরুল চতুর্থবার গ্রেফতার এড়াবার জন্য কুমিল্লায় আসেন। ধূমকেতু পত্রিকায় আনন্দময়ীর আগমন নামের কবিতা লেখার জন্য বৃটিশ সরকারের জারীকৃত গ্রেফতারী পরোয়ানায় ১৯২২ সালের ২৩ নভেম্বর বিকেলে তিনি শহরের ঝাউতলায় গ্রেফতার হন। কবি শেষবারের মতো কুমিল্লায় আসেন ১৯২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর জেল থেকে ছাড়া পাবার পর পরই। কবি নজরুলের কুমিল্লায় অবস্থানের ১১ মাস ছিল বৈচিত্র্যময়। এ সময়ে তিনি অজস্র কবিতা ও গান রচনা করেছেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কবিতা ও গান হলো অবহেলা, অনাদৃতা, বিদায় বেলায়, বেদনা, হারামণি, হারমানা হার, অভিমান, বিজয় গান, পথিক প্রিয়া, পরশ পূজা, পাগল পথিক, মনের মানুষ, বিধুরা, মরণ বরণ, বন্দীর বন্দনা ইত্যাদি। এখানে অবস্থানকালে নজরুলের সঙ্গী ছিলেন কুমিল্লার কয়েকজন কৃতি সন্তাান। তাঁরা হলেন, শচীন দেব বর্মন, মৌলভী পাড়ার জানে আলম চৌধুরী, মোতাহের হোসেন চৌধুরী, দারোগা বাড়ির মোহাম্মদ হোসেন খসরু, কলেজ ছাত্র সুলতান মাহমুদ মজুমদার প্রমুখ। কুমিল্লা শহরের যেসব স্থানে নজরুল বিচরণ ও অবস্থান করেছিলেন সেসব স্থানে রয়েছে স্মৃতিফলক।
জাতীয় কবি নজরুলের ১১৮তম জন্মবার্ষিকীর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে গতকাল বুধবার থেকে। সকাল ৯টায় কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আর আজকের দিনব্যাপী আয়োজনের মধ্যে রয়েছে সকাল ৯টায় শিল্পকলা একাডেমির সামনে নির্মিত ‘চেতনায় নজরুল’ স্মৃতিস্তম্ভে পুর্ষ্পাঘ্য অর্পণ। একই সময়ে মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুরে সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। বিকেল সাড়ে চারটায় শিল্পকলা একাডেমিতে নজরুল জীবনভিত্তিক আলোকচিত্র ও পুস্তক প্রদর্শনীর উদ্বোধন। এরপর শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হবে সা¤্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ বিরোধী সৈনিক নজরুল প্রতিপাদ্য বিষয়ের ওপর আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নজরুল জন্মবার্ষিকীর পরদিন শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটায় মুরাদনগরের দৌলতপুরে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। এছাড়াও কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ, ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা সরকারি কলেজ, অজিতগুহ কলেজ, নজরুল মেমোরিয়াল একাডেমি, নজরুল পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, কুমিল্লা সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবি নজরুলের জন্মবার্ষিকী সাড়ম্বরভাবে আয়োজন করবে। কুমিল্লার নজরুল প্রেমীরা মনে করেন, নজরুল কুমিল্লার-কুমিল্লা নজরুলের এই বোধ ও বিশ্বাসের জায়গাটি পরিপূর্ণতার মধ্যদিয়ে কুমিল্লা কেন্দ্রিক হয়ে ওঠেছে জাতীয় কবি নজরুলের সামগ্রিক জীবনের অস্তিত্ব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।