হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
মোহাম্মদ আবদুল গফুর : আজ এগারোই জ্যৈষ্ঠ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য সংস্থা জাতীয় কবিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের প্রাঙ্গনে অবস্থিত কবির মাজারের পাশে দাঁড়িয়ে কবির মুগ্ধ গুণগ্রাহীরা কবির রূহের মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত করছে পরম করুণাময়ের দরবারে।
নজরুল ইসলামকে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসাবে স্মরণ করা হলেও কবির যৌবনকালেই ১৯২৯ সালে কলিকাতার এ্যালবার্ট হলে তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র, এস ওয়াজেদ আলী, সুভাষ চন্দ্র বসু প্রমুখ হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় গুণীজনদের উদ্যোগে কবিকে প্রথম জাতীয় সংবর্ধনা দেয়া হয়। ঐ সংবর্ধনা সভায় ভাষণ দিতে গিয়ে বিপ্লবী রাজনীতিবিদ নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু বলে ছিলেন, আমরা যখন রাজপথে থাকব তখন কবির গান আমাদের প্রেরণা যোগাবে। আবার আমরা যখন কারাগারে যাব, তখনও সেখানে নজরুলের গান গাওয়া হবে। নেতাজীর এ বক্তব্য ছিল বিশেষ তাৎপর্য মন্ডিত।
বাংলা সাহিত্যের দুই প্রধান কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। উভয়ের জন্ম পরাধীন ভারতবর্ষে যথাক্রমে ১৮৬১ ও ১৮৯৯ সালে। রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুবরণ করেন পরিণত বয়সে ১৯৪২ সালে। নজরুল দৈহিকভাবে ১৯৭৬ সালে মৃত্যু বরণ করলেও ১৯৪২ সালে এক দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলায় ঐ বছরই তাঁর কবি জীবনের করুণ পরিসমাপ্তি ঘটে। সে নিরিখে কাজী নজরুল ইসলামের কবি জীবন ছিল মাত্র আড়াই দশকের মত। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যে তিনি বাঙলা সাহিতের সমৃদ্ধি সাধনের ক্ষেত্রে যে বিশাল ও বৈচিত্রধর্মী অবদান রাখেন, ফলে তিনি বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে রয়েছেন।
আগেই বলা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের এই দুই শ্রেষ্ঠ কবিরই জন্ম পরাধীন ভারতবর্ষে। তবে পরাধীন ভারতবর্ষের শাসকদের নিকট থেকে দুই কবির প্রাপ্তি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। একজন (রবীন্দ্রনাথ) বিদেশী শাসকদের নিকট থেকে যেখানে সম্মানজনক ‘নাইট’ উপাধি লাভ করেন, সেখানে আরেকজন (নজরুল) পরাধীনতার বিরুদ্ধে কলম যুদ্ধ চালনার অপরাধে একাধিকবার কারাদন্ডে দন্ডিত হন। শুধু তাই নয় নজরুলের একাধিক গ্রন্থও সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতার দায়ে বাজেয়াপ্ত ঘোষিত হয়।
বাংলা সাহিত্যের এ দুই শ্রেষ্ঠ কবির প্রতি দেশের স্বাধীনতাকামী বৃদ্ধিজীবীদের দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রও ছিল বৈশিষ্ট্যের পরিচায়ক। সাম্রাজ্যবাদী পৃষ্ঠপোষকতা-ধন্য নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির কারণে রবীন্দ্রনাথে কবি খ্যাতির সূর্য যখন মধ্য গগনে তখন ১৯২৯ সালে কলিকাতার অ্যালবার্ট হলে কাজী নজরুল ইসলামকে সেকালের হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের শ্রেষ্ঠ গুণীজনদের উদ্যোগে জাতীয় সংবর্ধনা দানের ঘটনা প্রমাণ করে জাতির গুণীজনেরা নজরুল ইসলামকে কত অধিক গুরুত্ব দিতেন।
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, কবি কাজী নজরুল ইসলামের পূর্ব পুরুষেরা পলাশী পূর্ব স্বাধীন ভারতবর্ষের মুসলিম শাসনামলে বিচার বিভাগের উচ্চপদে সমাসীন ছিলেন। পলাশী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর বহুদিন পর্যন্ত নব্য শাসক ইংরেজদের একটা নীতি হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, দেশের প্রশাসন-প্রতিরক্ষা, জমিদারী-আয়মাদারী, ব্যবসা বাণিজ্যে, শিক্ষা-সংস্কৃতি প্রভৃতি প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হতে বেছে বেছে মুসলমানদের উৎখাত করে সেসব স্থানে ইংরেজ-অনুগত হিন্দুদের বসানো। এভাবেই পলাশী ট্র্যাজিডির অল্পকালের মধ্যে পূর্বতন ভূমি নীতি বদলিয়ে ইংরেজ শাসকরা চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমে ইংরেজ-ভক্ত যে নব্য জমিদার গোষ্ঠী গড়ে তোলে তার সিংগভাগই ছিলো হিন্দু।
মুসলমানরাও কিছুতেই বিদেশী ইংরেজদের শাসনকে সহজভাবে মেনে নিতে পারছিলেন না। পলাশীতে স্বাধীনতা হারিয়ে দীর্ঘ ১০০ বছর পর্যন্ত তারা স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যান। কিন্তু এসব সংগ্রামের প্রত্যেকটিতে মুসলমানরা পরাজিত হন প্রতিবেশী বৃহৎ সম্প্রদায়ের অসহযোগিতার কারণে। সর্ব শেষ লড়াই ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহেও তাদের পরাজয় বরণের ফলে সাহিত্য সম্রাট বংকিম চন্দ্র, কবি ঈশ্বর গুপ্ত প্রমুখ হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন এবং গদগদ কণ্ঠে ইংরেজদের প্রতি তাদের আনুগত্য নিবেদন করেন। তাদের এই আনুগত্যর সুযোগে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ইংরেজ শাসকদের নির্যাতনের স্টীম রোলার নেমে আসে নতুন ভাবে।
মুসলমানদের এই চরম দুর্দিনকালে উত্তর ভারতের স্যার সৈয়দ আহমদ, এবং বাংলার নবাব আবদুল লতিফ প্রমুখ তদানীন্তন মুসলিম নেতৃবৃন্দ ধ্বংসের হাত থেকে মুসলমানদের রক্ষা করতে সাময়িক ভাবে হলেও ইংরেজ শাসকদের সঙ্গে সহযোগিতার নীতি অবলম্বনের মাধ্যমে মুসলমানদের আধুনিক শিক্ষায় উন্নত করে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। নবাব আবদুল লতিফের এই সহযোগিতার নীতির ফলে কলিকাতার সরকারী হিন্দু কলেজকে প্রেসিডেন্সী কলেজে রূপান্তরিত করা হলে সেখানে হিন্দুদের পাশাপাশি মুসলমান শিক্ষার্থীদের প্রবেশের দ্বার উন্মোচিত হয়।
মুসলমানদের এই সহযোগিতার নীতিকে দুর্বলতা মনে করে একধরনের খৃস্টান পাদ্রী ইসলাম, পবিত্র কোরআন শরীফ ও মহানবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে জঘন্য অপপ্রচারে নেমে পড়েন। সে সময় দেশে আলেম-ওলামার অভাব ছিলো না। কিন্তু তাদের কেউ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা-ধন্য এসব অপপ্রচারের জবাব দিতে সাহস পাননি। অবশেষে ইসলামের বিরুদ্ধে এই অপপ্রচারের জবাব দিতে এগিয়ে আসেন গ্রাম্য এক দরজী, ইতিহাসে যিনি খ্যাত হয়ে আছেন মুন্সী মেহেরুল্লাহ নামে।
গ্রামের অল্প শিক্ষিত এই দর্জিকে অনায়াসেই তর্কযুদ্ধে হারিয়ে দিতে পারবেন এই আশায় উচ্চ ট্রেনিং প্রাপ্ত মিশনারীরা মুন্সী মেহেরুল্লাকে তর্কযুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বসলেও শেষ পর্যন্ত তারা একের পর এক বাহাছ বা তর্কযুদ্ধে হেরে গিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে আর বাহাছ-যুদ্ধে অংশ গ্রহনেই সাহস পেলেন না। মুন্সী মেহেরুল্লাহ শুধু একজন বাগ্মীই ছিলেন না, ইসলাম বিদ্বেষী লেখকদের বিরুদ্ধে পদ্যে-গদ্যে বহু জওয়াবী লেখালেখিতেও তিনি সার্থকতার পরিচয় দেন।
পরবর্তীকালে তাঁর অন্যতম ভাবশিষ্য সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী বাংলা উপন্যাসে বঙ্কিমচন্দ্র প্রমুখ ইসলাম বিদ্বেষী ঔপন্যাসিকদের বিরুদ্ধে সার্থক উপন্যাস রচনা করে বাংলা সাহিত্যে “জওয়াবী উপন্যাস’ নামের, একটি নতুন ধারা সৃষ্টি করেন।
মুন্সী মেহেরুল্লার পর যেমন সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী, তেমনি সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজীর পর কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলা সাহিত্যের কথা সাহিত্যের ধারায় ইতোমধ্যে ‘বিষাদ সিন্ধ’ু-খ্যাত মীর মশাররফ হোসেনের আবির্ভাব হওয়ায় কথা-সাহিত্যে অন্তত মুসলিম বিষয়বস্ত একটা মর্যাদাজনক অবস্থায় উন্নীত হলেও বাংলা কাব্যে প্রতিশক্তিশালী মুসলিম কবির স্থান অপূরিতই রয়ে যায়। এই অভাব এক লহমায় যিনি পূরন করে ফেলেন তিনিই বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি নামে চির অমর হয়ে আছেন।
প্রধানত বিদ্রোহী কবি হিসাবে খ্যাত কবি কাজী নজরুল ইসলামের পূর্ব পুরুষরা পলাশী-পূর্ব মুসলিম শাসনাধীন স্বাধীন ভারত বর্ষে বিচার বিভাগের উচ্চপদে কর্মরত ছিলেন একথা পূর্বেই উল্লেখিত হয়েছে। এর পাশাপাশি একথাও উল্লেখিত হয়েছে, পলাশী বিপর্যয়ের পরবর্তী কালে দীর্ঘদিন পর্যন্ত নব্য শাসক ইংরেজদের একটা নীতিই হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো প্রশাসনের বিভিন্ন উচ্চ পদে থেকে বেছে বেছে মুসলমানদের উৎখাত করে সেসব পদে ইংরেজ অনুগত হিন্দুদের বসানো। এই নীতির পরিনতিতে মুসলিম শাসনামলের বিচার বিভাগের উচ্চপদে অধিষ্ঠিত কাজী নজরুল ইসলামের পূর্ব পুরুষদের ইংরেজ আমলে ভারতবর্ষের এক স্থান থেকে আরেক স্থানে পালিয়ে বেড়াতে হতো।
এভাবেই সর্বশেষ বাসস্থান পাটনা থেকে বর্ধমান জেলার প্রত্যন্ত চুরুলিয়া গ্রামে বসতি স্থাপন করেন নজরুলের পূর্ব পুরুষরা। সেখানেই ১৮৯৯ খৃস্টাব্দে বাংলা ১১ই জ্যৈষ্ঠ জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। শৈশব থেকে শুরু করে জীবনের সিংহভাগ তাঁকে কাটাতে হয় অসহনীয় দারিদ্রের মধ্যে। দারিদ্রের কারণে লেটোর দলে গান গাওয়া থেকে শুরু করে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খাদেমগিরি করাসহ রুটির দোকানে চাকুরি করা পর্যন্ত হেন কাজ নেই যা তাকে করতে হয়নি। প্রথম মহা যুদ্ধ শুরু হলে এক পর্যায়ে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে নিজ মেধাগুণে হাবিলদার পদে উন্নীত হন। সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায়ই হাবিলদার কাজী নরুজল ইসলাম নামে তার লেখা লেখি শুরু হয় এবং সেসব লেখা কলিকাতায় বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। ইতোমধ্যে যুদ্ধ শেষে তার পল্টন ভেঙ্গে দেওয়া হলে তিনি কলিকাতা এসে উঠেন বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্যে সমিতি অফিসে। এভাবেই তাঁর নিয়মিত সাহিত্য জীবন শুরু হয়।
বাংলা সাহিত্যের দুই শ্রেষ্ঠ কবির এক জন ছিলেন বৃটিশ শাসকদের আনুকূল্য ধন্য জমিদার, আরেক জন ছিলেন সারা জীবন দারিদ্রের নিপীড়নে জর্জরিত থাকার পাশাপাশি বৃটিশ-বিরোধী লেখালেখির দায়ে একাধিকবারে কারাদন্ডে দন্ডিত। তাছাড়া একই কারণে তার একাধিক গ্রন্থ বৃটিশ সরকার কর্র্তৃক বাজেয়াপ্ত ঘোষিত হয়। তবে বাংলা সাহিত্যের এই বিপ্লবী কবি কখনো ইংরেজদের এ নির্যাতনকে পরোয়া করতেন না।
নজরুল ইসলাম আজীবন ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা যুদ্ধে জনগণকে সংগ্রামে উদ্বুদ্ব করার লক্ষ্যে লিখে গেছেন অসংখ্য কবিতা ও গান। জনগনের মুক্তির লক্ষ্যে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী স্বাধীনতা যুদ্ধকে সার্থক করে তুলতে তিনি হিন্দু-মুসলমানের মিলন কামনা করেছেন যদিও তিনি ব্যক্তিগতভাবে ছিলেন ইসলামে গভীরভাবে বিশ্বাসী। ইসলামে তাঁর বিশ্বাস সুগভীর হলেও ইসলামকে যারা ব্যক্তিগত ও জাগতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে আগ্রহী তাদের বিরুদ্ধে ছিল তাঁর কঠোর অবস্থান। ইসলাম যে সর্বোত্তম জীবনাদর্শ এ বিশ্বাস থাকা সত্তে¡ও আজকের বিশ্বের মুসলমানরা যে ইসলামের মূল মর্মবানীকে মূল্য না দিয়ে নিজেরাই ধ্বংসের পথে এগিয়ে গেছে, এ নিয়েও তাঁর ছিলো তীব্র বেদনা বোধ। নজরুলের এ বিশ্বাসের প্রমাণ হিসাবে নিচের উদ্বৃতিই যথেষ্ট :
আল্লাহ আমার প্রভু, আমার নাহি নাহি ভয়।
আমার নবী মোহাম্মদ যাঁহার তারিফ জগৎময়
আমার কিসের শংকা
কোরআন আমার ডঙ্কা
ইসলাম আমার ধমর্, মুসলিম আমার পরিচয়।
কলেমা আমার তাবিজ তৌহিদ আমার মুর্শিদ
ঈমান আমার ধর্ম, হেলাল আমার খুর্শিদ
আল্লাহো আকবার ধ্বনি
আমার জেহাদ বাণী
আখের মোকাম ফেরদৌস, খোদার আরশ যথা রয়।
আরব মেসের চীন হিন্দ, মুসলিম জাহান মোর ভাই,
কেহ নয় উচ্চ কেহ নীচ, এখানে সমান সবাই।
এক দেহ এক দিল এক প্রাণ,
আমির ফকির এক সমান
এক তকবীরে উঠি জেগে, আমার হবেই হবে জয় \
নজরুল ইসলাম এমন এক আদর্শে বিশ্বাস করতেন যে আদর্শে মানুষে মানুষে সাম্যভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে সমাজ গঠিত হয়। সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সংগ্রামে এগিয়ে গেলে সে আদর্শের জয় নিশ্চিত। সে আদর্শের পরিচয় দিতে গিয়ে নজরুল লিখেছেন :
হাতে হাত দিয়ে আগে চল, হাতে নাই থাক হাতিয়ার।
জমায়েত হও, আপনি আসিবে শক্তি জুলফিকার।
আনো আলীর শৌর্য, হোসেনের ত্যাগ,
ওমরের মত কর্মানুরাগ
খালেদের মত সব অসাম্য
ভেঙ্গে করো একাকার।
ইসলামে নাই ছোট বড় আর
আশরাফ আতরাফ;
এই ভেদজ্ঞান নিষ্ঠুর হাতে
করো মিসমার সাফ।
চাকর সৃজিতে চাকরি করিতে
ইসলাম আসে নাই পৃথিবীতে;
মরিবে ক্ষুধায় কেহ নিরন্ন,
কারো ঘরে রবে অঢেল অন্ন,
এ জুলুম সহে নিক ইসলাম-
সহিবে না আজো আর \
আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম উপরোক্ত আদর্শের প্রেক্ষাপটে যে সমাজের স্বপ্ন দেখে ছিলেন সে সমাজে জুলুম অত্যাচার বৈষম্য নির্যাতনের কোনো অবকাশ নেই। স্বয়ং কবি তাঁর বিখ্যাত “বিদ্রোহী” কবিতায় লিখেছেন :
বিদ্রোহী রনক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল
আকাশে-বাতাসে ধনিবে না
অত্যাচারীর খড়গ-কৃপান
ভীম রনঘুমে রনিবেনা।
বিদ্রোহী রনক্লান্ত
আমি সেইদিন হব শান্ত \
কবির এ লেখা থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যতদিন সমাজ থেকে অবিচার-অত্যাচার-অসাম্য-উৎপীড়নের পালা শেষ না হবে, ততদিন কবির স্বপ্নের সমাজ গড়ে উঠবে না। আমরা যারা কবির জন্মদিনে তার জীবনের আদর্শে সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখি তারা কবির স্বপ্নের আদর্শে তাদের এ প্রিয় স্বদেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কতটা আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছি, সেটাই আজ বড় প্রশ্ন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।