Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নকশা জটিলতায় স্থগিত

| প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

খুলনার রূপসা রেল সেতুর নির্মাণ কাজ
বিশেষ সংবাদদাতা, খুলনা : নকশা জটিলতায় থমকে আছে খুলনার রূপসা রেল সেতুর নির্মাণ কার্যক্রম। আর এ কারণে দু’দফা সেতুটির পরীক্ষামূলক পাইল লোড টেস্ট করেও ফেল হয়েছে। ফলে নকশা সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ সেতু ছাড়া খুলনা-মংলা রেলপথ চালু সম্ভব নয়। স¤প্রতি রেল ভবনে এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছেন খুলনা-মংলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক মোঃ মজিবর রহমান। এতে প্রকল্পটির সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে প্যানেল অব এক্সপার্ট গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
দেখা গেছে, রূপসা রেল সেতু নির্মাণের লক্ষে ভারতের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লারসেন এন্ড টার্ব প্রকল্প এলাকায় প্রয়োজনীয় কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। গড়ে তুলেছেন অফিস, টেস্টিং ল্যাব, ওয়ার্কসপসহ নানা স্থাপনা। আনা হয়েছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি। অফিসের দাপ্তরিক এবং নির্মাণ সামগ্রী প্রকল্প এলাকায় আনার কাজ চলছে। গড়ে তোলা হচ্ছে শ্রমিকদের জন্য কলোনী। এছাড়া সেতু এরিয়ায় যাতায়াতের জন্য তৈরি করা হচ্ছে রাস্তা। এছাড়া নদীর ওপারে রূপসা এলাকায়ও কাজ চলছে। তবে এসব কাজ হলেও নকশা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে থমকে রয়েছে মূল রেল সেতু নির্মাণ কাজ। নকশা আসলেই পাইলের কাজ শুরু করা হবে বলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন।
প্রকল্পের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আব্দুর রহিম বলেন, সয়েল টেস্টের পর দু’দফায় লোড টেস্টের কাজ হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দফায় কিছুটা সমস্যা থাকলেও দ্বিতীয় দফায় সন্তোষজন। তবে আরো ভালো করার জন্য কাজ চলছে।
তবে রেল ভবনে প্রকল্পের পরিচালকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, রূপসা রেল সেতুর খুলনা প্রান্তের ভায়াডাক্ট অংশে একটি ৪০ মিটার গভীর ও দেড় মিটার প্রস্থ ডায়া টেস্ট পাইল করা হয়। গত ১০ জানুয়ারি এর লোড টেস্ট করা হলে ফল সন্তোষজনক হয়নি। এ জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পুনরায় একই স্থানে ৪০ মিটারের পরিবর্তে ৫২ মিটার দৈর্ঘ্যের আরেকটি পাইলের নকশা জমা দেয়। এক্ষেত্রে একটি বেইজ গ্রাউটিংসহ ও আরেকটি বেইজ গ্রাউটিং ছাড়া লোড করতে বলা হয়। টেস্ট পাইলের নকশাটি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পেশাদার প্রকৌশলী দ্বারা পরীক্ষা করে প্রত্যয়ন গ্রহণের সুপারিশ করে রেলওয়ে। তবে বুয়েটের প্রত্যয়ন গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে চুক্তির শর্ত দেখিয়ে বলা হয়, কোনো নকশা দাখিলের আগেই পেশাগত প্রকৌশলীর প্রত্যয়ন গ্রহণ করা হয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে বেইজ গ্রাউটিং ছাড়া ৫২ মিটার দৈর্ঘ্যরে দেড় মিটার ডায়া টেস্ট পাইল করে ৩০ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত লোড টেস্ট করা হয়। তবে দু’টি পাইলই লোড নিতে ব্যর্থ হয়। এতে নির্মাণ কাজ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিভিন্ন পিয়ার পয়েন্টে মাটির অবস্থা খুবই খারাপ। এটি এতটাই খারাপ যে, ডিজাইন লোড বহন করা খুবই কঠিন। এজন্য প্রতিটি পিয়ার লোকেশনে পাইল পুনরায় ডিজাইন করতে হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন প্রকল্পের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, বেইজ গ্রাউটিং করে পাইলের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মৌখিকভাবে জানায়, বেইজ গ্রাউটিংয়ের বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা বা অভিজ্ঞতা নেই। তাছাড়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ডিজাইন পুনঃপরীক্ষা করা দরকার, যাতে টেকসই সেতু নির্মাণ করা যায়। এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিশেষজ্ঞ দ্বারা একটি প্যানেল এক্সপার্ট গঠন করা যেতে পারে।
এদিকে, খুলনা-মংলা রেলপথের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে ভারতের কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার্স গ্রæপ ও নিপ্পন কোয়িই ইন্ডিয়া লিমিটেড। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তির মেয়াদ ২০১৮ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা। তবে রেলপথ ও সেতু নির্মাণ চুক্তি শেষ হবে ২০২০ সালে। এজন্য পরামর্শকের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো দরকার। এছাড়া সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা প্রণয়নে বেশি সময় লাগায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি বেশি অর্থ দাবি করে। এজন্য গত ৪ এপ্রিল একটি চিঠি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এক্ষেত্রে বাড়তি অর্থ পরিশোধে ৪৫ দিন সময় দেয়া হয়েছে। তা না হলে চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানায়, দক্ষিণাঞ্চলে সেতু নির্মাণ একটি জটিল প্রক্রিয়া। কারণ এ দেশের নদীগুলো প্রচুর পলি বয়ে আনে। এগুলো জমা হয়ে মাটির ওপর একটি স্তর তৈরি হয়। তবে এর নিচে মাটির অবস্থা খুবই খারাপ থাকে। এজন্য টেস্ট পাইল ফেল হতে পারে। দেশের অনেক বড় সেতুতে এ ধরনের ফেইলুর হয়েছে। রূপসা সড়ক সেতু, বঙ্গবন্ধু (যমুনা) সেতুসহ অনেক সেতু নির্মাণে এ সমস্যা হয়েছিল। পরে পাইলের ডিজাইন পরিবর্তন করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা আরো জানায়, রূপসা রেল সেতুতেও কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। পরীক্ষামূলক পাইল লোড নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এক্ষেত্রে দেবে যাওয়ার একটা গ্রহণযোগ্য পরিমাণ রয়েছে; রূপসায় সেটি হয়নি। তবে সেটা সমাধান করা যাবে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নতুন নকশা জমা দিয়েছে। সেটি গ্রহণযোগ্য কি না, তা বুয়েটের বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে দেখবেন। এরপর টেস্ট পাইল করে লোড পরীক্ষা করা হবে। সেতুটি নির্মাণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে নির্মাণকাজ কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও একবার শুরু হলে তা দ্রæত এগিয়ে নেওয়া যাবে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১৪ এপ্রিল রূপসা রেল সেতু নির্মাণের জন্য সয়েল টেস্টের কাজ শুরু হয়েছিল। পাঁচ দশমিক ১৩ কিলোমিটার এ সেতুর মূল অংশ ৭১৬ দশমিক ৮০ মিটার। আর চার দশমিক ৪১৩ কিলোমিটার ভায়োডাক্ট। পুরো সেতুটি স্টিল কম্পোজিট গ্রিডে তৈরি হবে। ২০১৫ সালে এজন্য চুক্তি সই হয়। সেতুটি নির্মাণের চুক্তিমূল্য ছিল এক হাজার ৭৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আর পুরো প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৮০২ কোটি টাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ