Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জ্যৈষ্ঠের কাঠফাটা রোদে স্বস্তি নেই কোথাও তীব্র গরমে বিপর্যস্ত কুমিল্লার জনজীবন

| প্রকাশের সময় : ২৪ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : তীব্র গরমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কুমিল্লার জনজীবন। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হচ্ছে। বেড়েই চলছে তাপমাত্রা। সূর্যের প্রখর তাপ আর ভ্যাপসা গরমে ক্লান্ত নগরজীবন। একদিকে তাপদাহ, অপরদিকে বৃষ্টিহীন দিন-রাত। ঘরে বাইরে কোথাও স্বস্তিতে থাকতে পারছে না মানুষ। তীব্র তাপদাহ কুমিল্লার জনজীবনে দুর্ভোগ বয়ে দিচ্ছে। এবারে বৈশাখে খুব একটা গরম না পড়লেও জৈষ্ঠ্যের শুরুতেই অত্যধিক গরম অনুভূত হতে থাকে। যার ধারাবাহিকতা টানা ১০/১২দিন ধরে রয়েছে। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে ডায়েরিয়া, জ্বরসহ নানা রোগব্যাধিতে। কুমিল্লা আবহাওয়া অফিস বলছে, মৃদু তাপদাহ বইছে। এ অবস্থা আর কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। মৌসুমী বায়ু যোগ হলেই গরমের দাপট কমে যাবে।
জৈষ্ঠ্যের কাঠফাটা রোদে স্বস্তি নেই কোথাও। ঘর থেকে বাইরে বেরুলেই মনে হয় অগ্নিকুন্ডু। শরীর ভিজে ঘামে একাকার হয়ে যায়। তাপদাহ শরীরে জ্বালাপোড়া ধরাচ্ছে। প্রচন্ড গরমে হাঁপিয়ে উঠেছে কুমিল্লার সব বয়সী ও শ্রেণি-পেশার মানুষ। গত এক সপ্তাহের বেশি ধরে কুমিল্লায় ৩৮ থেকে ৪১ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। তীব্র গরমে কুমিল্লার যেসব অফিসে কর্মকর্তা কর্মচারীরা কেবল সিলিং ফ্যানের হাওয়ায় কাজকর্ম সারছেন তারাও হাঁপিয়ে উঠেছেন। আবার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ থেকে বেরিয়ে অনেকেই বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে না পেরে অস্বস্তি বোধ করছেন। কুমিল্লা নগরীর ফুটপাতের দোকানি ও ভ্রাম্যমান হকাররা গরমে কাহিল। নগরীর কান্দিরপাড়ে কাজের সন্ধানে সকালে জড়ো হওয়া দিনমজুরের সংখ্যা গরমের কারণে কমে গেছে। দুপুরের আগেই নগরীতে রিকশার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। প্রচন্ড গরমে রিকশাচালকদের বেশির ভাগই সকাল থেকে বেলা বারোটা এবং বিকেলে সূর্যের তাপ কমার পর রাত্র পর্যন্ত সময়ে রিকশা নিয়ে রাস্থায় বের হচ্ছে।
কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছা, পুলিশ লাইন, ঝাউতলা, কান্দিরপাড়, টমসনব্রীজ, মনোহরপুর, রাজগঞ্জ, গোয়ালপট্রি ও চকবাজার এলাকায় রিকশাভ্যানে পানির ফিল্টার মেশিন বসিয়ে লেবু ও বেলের শরবত বিক্রি হচ্ছে। আবার এসব এলাকায় বিভিন্ন রকমের গাছগাছালির ছাল-বাকল দিয়ে বরফের ঠান্ডা শরবত বিক্রি হচ্ছে। গরমে ক্লান্ত পথচারিরা ৫ থেকে ১০টাকার বিনিময়ে তৃষ্ণা মেটাতে গøাসে চুমুক দিচ্ছে। ফুটপাতে ডাব ও তরমুজের কাটা চির বিক্রিও জমে উঠেছে। নগরীর কনফেকশনারী ও ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোরগুলোতে ফ্রিজে রক্ষিত বিভিন্ন কোম্পানীর কোমল পানীয়, আইসক্রীম, দই ও জুসের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুন। ফার্মেসী ও অন্যান্য মনোহরী দোকানগুলোতে খাবার স্যালাইন দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। প্রচন্ড গরমে পুকুর দিঘীর পানিতে এক ধরণের দুর্গন্ধ অনুভূত হচ্ছে। গোসলের পর অনেকের শরীরে চুলকানি হচ্ছে বলে জানা গেছে। আবার প্রচন্ড গরমের মাঝেও প্রতিদিন নগরী ও নগরীর বাইরের সব এলাকাতেই লোডশেডিং চলছে। বাজারে চার্জার ফ্যানের চাহিদা বেড়েছে। প্রচন্ড গরমকে ঘিরেই এতোসব কান্ড।
এদিকে প্রচন্ড গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, জ্বরসহ পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। কুমিল্লা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য প্রাইভেট হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী প্রতিদিনই কমবেশি ভর্তি হচ্ছে। এরমধ্যে বয়স্ক ও শিশু রোগীর সংখ্যাই বেশি। নগরীর শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারে প্রচন্ড গরমের কারণে সর্দি কাশিসহ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়া শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা চিকিৎসকের সরনাপন্ন হয়েছে। যেসব শিশুর অবস্থা জটিল তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুজিব রহমান জানান, এই সময়ে পানি খাওয়া ও ব্যবহারে বেশ সতর্ক হতে হবে। রাস্তার পাশে ফুটপাতের পানীয় শরবত ও ঠান্ডা জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ