পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গরমে-ঘামে মানুষ নাকাল : বেড়েছে বিদ্যুতের ভোগান্তি ষ তাপপ্রবাহ চলতে পারে এক সপ্তাহ : হিটস্ট্রোকের শঙ্কা ষ পানি পান ও তীব্র রোদ এড়ানোর পরামর্শ চিকিৎসকের
শফিউল আলম, মিজানুর রহমান তোতা ও রেজাউল করিম রাজু : ছড়িয়ে পড়েছে তাপদাহ। অসহনীয় খরতাপে পুড়ছে দেশ। ভ্যাপসা গরমে-ঘামে মানুষ নাকাল। তপ্ত ও গুমোট আবহাওয়া। সর্বত্র দুর্বিষহ জনজীবন। চলমান তাপপ্রবাহের চতুর্থ দিনে গতকাল (সোমবার) খরার অসহ্য দহন আরও বেড়ে চলে। বিদ্যুতের লোডশেডিং ও বিভ্রাট এবং পানির সঙ্কটের কারণে জনজীবনের ভোগান্তি আরো বেড়ে গেছে। আবহাওয়া পূর্বাভাসে আপাতত কোনো সুখবর নেই। জ্যৈষ্ঠের শুষ্ক আবহাওয়ায় তাপপ্রবাহ চলতে পারে কমপক্ষে আরও এক সপ্তাহ। এরপর ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। গরম নয়; এ যেন আগুনের কড়াইয়ে একটু শীতলতা চাই- এমনটি আকাক্সক্ষায় চারদিকে মানুষজনের মনের আকুতি ‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে ছায়া দে’। মানুষ ছাড়াও সবখানেই প্রাণিকুল হাঁসফাঁস করছে। বাতাসে যেন আগুনের হল্কা। রাস্তায় পিচ গলতে শুরু করেছে। তীর্যক সূর্যের দহনে দিনমান অতিবাহিত হচ্ছে। বেড়েই চলেছে জনজীবনে অস্থিরতা। এমনকি রাতের বেলায়ও স্বস্তি মিলছে না।
দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও বেড়ে গেছে। এতেই গরমের তীব্রতা অনেক বেশি। বর্ষার মৌসুমি বায়ুমালা বাংলাদেশে এগিয়ে আসতে এখনো অনেক দেরি। ট্রপিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোঃ আবুল কালাম কড়াকড়ি সতর্ক করে জানান, তীব্র খরতাপে এমনকি ঘরে-বাইরে বাতাসে আগুনের হল্কা বইতে থাকার কারণে এই সময়ে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়া, ডিহাইড্রেশন (মাত্রাতিরিক্ত ঘামে দেহে পানিশূণ্যতা), পেটের পীড়া, ভাইরাস জ্বরে ভোগার আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের রোগ-ব্যাধি এড়াতে তীব্র রোদে চলাফেরা এড়িয়ে চলার এবং ঘন ঘন বিশুদ্ধ পানি, লেবুর শরবত, ওরস্যালাইন, ডাবের পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জানান, হিটস্ট্রোকে সাধারণত ১০৪-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট জ্বর এসে এক পর্যায়ে কিডনি অথবা লিভার ফেইলইউর হয়ে রোগী মারাও যেতে পারে। এ ধরনের রোগীকে দ্রæত হাসপাতালে বা ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে বিশ্রাম দিতে হবে। তিনি বলেছেন, এ সময়ে কোনোমতেই কারোর খোলা জায়গার শরবত, পানীয় ইত্যাদি দূষিত খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করা নিরাপদ নয়।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল খুলনা ও যশোরে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ ৩৬ ডিগ্রি সে.। এমনকি সর্বনিম্ন তাপমাপক পারদও তেঁতে উঠেছে। গতকাল যশোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৯.৬, ঢাকায় ২৮.৯, চট্টগ্রামে ২৮.৩ ডিগ্রি সে.। বাতাসে আর্দ্রতর হার বেশি থাকায় ভ্যাপসা গরমে হাঁপাচ্ছে মানুষ-প্রাণিকুল। তাপদাহে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন চট্টগ্রাম মহানগরী, পর্যটন নগরী কক্সবাজারেও জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এ ধরনের বৈরী-গুমোট আবহাওয়ায় সমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ¡াস সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন চর, উপকূল, দ্বীপাঞ্চলবাসী। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ উঁচুতে উঠে গেছে। সর্বত্র হাঁপাচ্ছে মানুষ। সবজি আবাদ-উৎপাদনে সারাদেশের মধ্যে বরাবরর রেকর্ড সৃষ্টিকারী যশোরে চাষিরা মাঠে বেরিয়ে কাজকর্ম করতে পারছেন না ঠিকমতো। সবজি রক্ষায় বাড়তি পরিচর্যায় খরচও বেড়ে গেছে। ফুল আবাদের প্রধান এ অঞ্চলে চাষিরা জানান, খরার দহনে বাগানে বাগানে ফুল নেতিয়ে পড়ছে। ‘আম পাকা গরম’ বলা হলেও আমের রাজধানী খ্যাত রাজশাহী বিভাগজুড়ে তাপপ্রবাহের কারণে আম-লিচুসহ ফল-ফলাদির বোটা শুকিয়ে ঝরে পড়ছে। ফল-ফসল ও সবজি ক্ষেত বাঁচাতে বেশি সেচ দিতে গিয়ে ব্যয়ও বেড়েছে। প্রচন্ড তাপদাহে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে পদ্মা তীরবর্তী মানুষ। মরণবাঁধ ফারাক্কার কারণে প্রমত্ত পদ্মায় এখন মরুভুমির মতো বালিুর চর। মাইলের পর মাইল জেগে থাকা বালিচর খরতাপে পরিণত হচ্ছে ফুটন্ত কড়াইয়ে। এখান থেকে তাপ ছড়াচ্ছে। একটু বাতাস হলেই তপ্ত বালি ভেসে আসছে, ধাক্কা দিচ্ছে পদ্মা তীরের মানুষকে। গরম চিকন বালির ঝাপটা চোখে মুখে জ্বালা ধরাচ্ছে। স্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বাঁচতে ঘরের জানালা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে করে সৃষ্টি হয়েছে অবর্ণনীয় দমবন্ধ অবস্থা।
এদিকে দেশের সর্বত্র অব্যাহত তাপদাহে, ঘামে নাকাল শিক্ষার্থী, পথচারী, কর্মজীবী লোকজন রাস্তাঘাটে ফেরি করা আইসক্রিম, শরবত ও হরেক রকম পানীয় নিয়ে গলা ভেজানোর চেষ্টা করছে। চপল কিশোররা দল বেঁধে পুকুর-দীঘি, নদী-খালে ঝাঁপ দিয়ে গা শীতল করছে। চলমান তাপপ্রবাহের কারণে আয়-রোজগারে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে দিনে এনে দিনে খাওয়া দিনমজুর ও নিম্নআয়ের শ্রমিক-কর্মজীবীরা। উটকো মৌসুমি রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু-বৃদ্ধসহ অনেকেই।
দিনমান অবিরাম সূর্যকিরণে জ্যৈষ্ঠের অসহ্য খরতাপে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সর্বত্র ব্যাহত হচ্ছে। গরমের সাথে বিশুদ্ধ পানির অভাবে সবখানেই চলছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ, হাহাকার অবস্থা। পুকুর, নদ-নদী, খাল, দীঘি, জলাশয়, পাতকুয়ার পানি শুকিয়ে তলায় গিয়ে ঠেকেছে। অধিকাংশ নলকূপে পানি উঠছে না। বৃষ্টির আকুল প্রত্যাশায় আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রহর গুণছে মানুষ। অনাবৃষ্টি ও খরায় রাতের বেলায়ও তাপদাহ অসহনীয়।
সর্বশেষ আবহাওয়া পরিস্থিতি সম্পর্কে আবহাওয়া বিভাগ জানায়, লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ ভারতের বিহার ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। যা উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। পূর্বাভাসে জানা গেছে, রংপুর, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। চাঁদপুর, নোয়াখালী, রাজশাহী ও পাবনা অঞ্চলসহ ঢাকা, খুলনা, বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী তিন দিনে আবহাওয়ার তেমন পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।
দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানানো হয়, চলতি মে মাসে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ১ বা ২টি তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঊর্ধ্বে) বয়ে যেতে পারে। দেশের অন্যত্র ২-৩টি মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে এ মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৭.৮ ডিগ্রি সে.। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩৬.৮ ও ২৮.৯ ডিগ্রি সে., চট্টগ্রামে ৩৫ ও ২৮.৩ ডিগ্রি সে.। আবহাওয়া বিভাগ আরও জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও এর সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। যা উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। আজকের (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। বরিশাল, পটুয়াখালী, চাঁদপুর ও নোয়াখালী অঞ্চলসহ ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। তবে এর পরবর্তী ৫ দিনে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
যশোর ব্যুরো
সবার মুখে মুখে এখন ফরিয়াদ ‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে’। বাতাসে আগুনের হল্কা। ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ। গ্রীষ্মের অস্বাভাবিক শুষ্কতা ও প্রখর খরতাপে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হচ্ছে যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের কৃষি, শিল্প, মৎস্য, বনজ ও পরিবেশ। মানুষ রীতিমতো হাঁপাচ্ছে। প্রচন্ড দাবদাহে ছটফট করছে প্রাণিকুল। আবহাওয়াবিদদের বক্তব্য, নদ-নদী, খাল-বিল প্রায় পানিশূন্য এবং গাছপালা কমে যাওয়ায় ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপমাত্রা উপরে উঠার সময় বাষ্প বা পানিকণা নিতে পারছে না। আকাশে মেঘ ও বৃষ্টির জন্য যে বায়ু দরকার তা পাচ্ছে না। যশোরে গত ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গিয়ে উঠে ৩৮ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমনকি সর্বনিম্ন ছিল ২৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সে.। আবহাওয়া দপ্তর বলেছে, আপাতত বৃষ্টিপাতের কোন সম্ভাবনা নেই। উপরন্তু তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে। অসহ্য গরমে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। প্রচন্ড গরমে লোডশেডিং চলছে রীতিমতো পাল্লা দিয়ে। ভর দুপুরে রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত এর থেকে মানুষ নিস্কৃতি পাওয়ার উপায় নেই। রোগ বাড়ছে শিশু-বৃদ্ধদের। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারছেন না প্রচন্ড গরমের কারণে। খরতাপে কর্মজীবীদের অনেকেই মাঠেঘাটে কাজ করতে নামতে পারছেন না। যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, প্রতিদিনই অসহনীয় গরমে মানুষ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। যার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
ফুল উৎপাদনের শীর্ষ রেকর্ড স্থাপনের যশোরের ফুল চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, বাগানে বাগানে ফুল নেতিয়ে পড়ছে। মান খারাপ হচ্ছে। বিশেষ করে গøাডিওলাস, জারবেরা রক্ষা করা কঠিন হচ্ছে। সাদা সোনা চিংড়ি ও মাছের রেণু পোনা উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। অবশ্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক চন্ডি দাস কুন্ডু দাবি করেন, খরতাপে এখনো বড় ধরণের কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে তিনি বলেন, এতবেশী তাপ যে সবজি ফলমুল ও ফুল শুধু নয় প্রাণিকুলের অবস্থা অনেকটাই সংকটাপন্ন। প্রচন্ড গরমে পুড়ছে মানুষ প্রকৃতি।
রাজশাহী ব্যুরো
প্রচন্ড তাপদাহে পুড়ছে রাজশাহী অঞ্চল। গত কদিন ধরে তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সে. ছুই ছুই করছে। জনজীবন হয়ে উঠেছে অসহনীয়। সকালের সূর্য যেন উদয় হচ্ছে আগুনের হল্কা নিয়ে। বেলা যত বাড়ছে তাপমাত্রা তত বাড়ছে। জনজীবনও হয়ে উঠেছে অসহনীয়। খরতাপে পুড়ছে মানুষ পুড়ছে প্রকৃতি। আর টিনের ঘরে তাপ যেন চুইয়ে নামছে। আবহাওয়া দপ্তর বলছে খরতাপ তীব্র হওয়ার কারনে জনজীবন অসহনীয় হয়ে পড়েছে। এমন বিরূপ আবহাওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে শুরু হয়েছে বিদ্যুতের যাওয়া আসার খেলা। বিদ্যুত থাকাটাই এখন অস্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। ফলে মানুষ আরো বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। গরম থেকে একটু স্বস্তি পাবার জন্য ফ্যান কিংবা এসি তা কোন কাজে আসছেনা। ঘরে বাইরে বাজারে অফিসে আদালত পাড়ায় সর্বত্র এক অস্বস্তিকর অবস্থা। এনিয়ে মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে চাহিদা মোতাবেক তারা বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছেনা। যা পাওয়া যাচ্ছে তা লোড ম্যানেজমেন্ট করে সরবরাহ করা হচ্ছ্।ে আবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যান্ত্রিক ত্রæটি। সব মিলিয়ে এক যন্ত্রনাদায়ক পরিস্থিতির মধ্যে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশী বিপাকে পড়েছে শিশু বৃদ্ধ ও রোগীরা। বিদ্যুতের কারনে পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় চরম বিঘœ ঘটছে। এমনিতে শুকনো মওসুমের আগেই পদ্মা শুকিয়ে যাবার সাথে সাথে ভুগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যায় অনেক নীচে। টিউবওয়েল গুলেঅয় টান ধরে। আর শুস্ক মওসুমে এসে আর পানি উঠেনা। শহরে মানুষের ভরসা সরবরাহের পানি। বিদ্যুতের পানির পাম্পগুলো ঠিক মত চালাতে না পারার কারনে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা প্রচন্ড সংকট আরো বাড়িয়েছে। প্রচন্ড খরতাপ থেকে বাঁচতে একটু গোসল কিংবা চোখে মুখে পানির ঝাপটা দেয়া অনেক সময় কঠিন হয়ে যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে সেচের জন্য গভীর নলকুপের পানিই ভরসা। সেখানেও বিদ্যুত সংকট। প্রচন্ড খরতাপে সবচেয়ে বেশী বেকায়দায় পড়েছে দিন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। পশু পাখি হাঁসফাঁস করছে তীব্র গরমে। আবহাওয়া দপ্তর বলছে সহসা বৃষ্টি না হলে এ অবস্থা থেকে পরিত্রান নেই। মানুষ চেয়ে আছে আল্লাহর রহমতের করুণার বৃষ্টির দিকে।
নেছারাবাদ(পিরোজপুর)উপজেলা সংবাদদাতা জানান, নেছারাবাদে গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহ আর ঘন ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে ওষ্ঠাগত হয়ে পড়েছে মানুষের জীবন। একদিকে প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাত বার লোডশেডিং অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে তাপমাত্রা বেড়ে চলায় ক্রমেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে জনজীবন। জনজীবনে নেমে এসেছে অন্তহীন সমস্যা। অসুস্থ হয়ে পড়ছে বাসাবাড়ীর শিশুসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
সকালে ঘুম থেকে উঠে বিদ্যুতের মুখ দেখে কর্মক্ষেত্রে বের হওয়ার সাথে সাথে উদাও হয়ে যায় বিদ্যুৎ। পরে দিনে ক্ষনিক সময়ের জন্য একটু আধটু বিদ্যুৎ পেলেও সন্ধ্যার সাথে সাথেই শুরু হয় বিদ্যুতের লাগাতর ভেলকিবাজী। তখন অসহনীয় গরম থেকে মানুষেরা একটু অব্যহতি পেতে মধ্যে রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে। মাঝরাতে বিদ্যুতের একটু মুখ দেখে ঘুমিয়ে পড়ার সাথে সাথেই চলে যায় কাঙ্খিত সেই বিদ্যুৎ। তখন সারারাতেও আর আসেনা। গরমে এই মাত্রারিক্ত লোডশেডিংয়ের কথা অনেকটা স্বীকার করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পূর্বপাড় অফিসের জুনিয়ার ইঞ্জিনিয়ার নরউত্তম জানান, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের পূর্বপাড়ের চারটি ইউনিয়নে মোট ১৪ হাজার গ্রাহক রয়েছে। তাদের চাহিদা অনুযায়ি প্রতিদিন পাঁচ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ দরকার। কিন্তু সে অনুযায়ী তারা বিদ্যুৎ পাচ্ছেনা। ।
হাসপাতাল থেকে জানা যায়, গত ২৪ ঘন্টায় নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১১ জন ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া গত সাত দিনে ৫৪জন, ৩০ দিনে ২২০জন ডায়রিয়ার রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। ।
পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডি,জি,এম মো. সাইফুল আহম্মেদ বলেন, জাতীয় গ্রীড থেকে যে পরিমান বিদ্যুৎ বরাদ্দ আসে তা খুবই অপ্রতুল। এ উপজেলায় বিদ্যুতের যে চাহিদা সে তুলনায় সরবারহ হচ্ছেনা। এছাড়া পূর্বপাড়ের চারটি ইউনিয়নে সাড়ে চার মেঘাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র দেড়(১.৫০) মেঘাওয়াট। তবে অচিরেই বিদ্যুতের এ দুর্ভোগ ঘুচে যাবে বলে আশ্বস্ত করে ডি,জি,এম সাইফুল আহম্মেদ।
মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে জ্যৈষ্ঠের তীব্র দাবদাহের সাথে চরম বিদ্যুৎ বিভ্রাটে মঠবাড়িয়া উপজেলার জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ভ্যাপসা গরমে মানুষের দৈনন্দিন কাজকর্ম স্থবির হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গরমে উপজেলার মানুষ ছাড়া সমগ্র প্রাণী কুলের অবস্থাও দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
নজিরবিহীন ভ্যাপসা গরমে স্বস্তি নাই কোথাও। ঘর-বাহির সর্বত্রই যেন আগুনের হল্কা তাড়া করছে। বেলা যত বাড়ে তাপদাহও তত বাড়তে থাকে। দুপুর হলেই পৌর শহরসহ হাট-বাজারের রাস্তা-ঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। এঅবস্থায় বাজারে আখের রস, তরমুজ, শসা ও ডাবের পানির কদর বেড়েছে। ফাস্ট ফুডের দোকান গুলোতে আইসক্রিম ও কোমল পানীয়র বিক্রি বেড়েছে কয়েক গুন। ব্যাবসায়িরাও এই সুযোগে মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে ভাইরাস জ্বর, সর্দি ও কাশিসহ গরম জনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশী। এব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিবল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ বশির আহমেদের সাথে যোগাযোগ করলে হিটষ্ট্রোক বা অন্য রোগে আক্রান্ত কোন রোগী হাসপাতালে আসেনাই বলে তিনি জানান। তিনি এই সময় রোদ ও ধুলাবালি থেকে দুরে থাকা, প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের না হওয়া এবং নিরাপদ পানি পান করার পরামর্শ দিয়েছেন।
গরমে শিক্ষার্থীদের পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। বিশেষ করে কোমল মতি শিশু শিক্ষার্থীরা রয়েছে প্রচন্ড স্বাস্থ্য ঝুকির মুখে। উপজেলার বাদুরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: শহিদুল্লাহ আল মামুন জানান, তীব্র তাপদাহে স্কুলে উপস্থিতি সংখ্যা কমে গেছে। দুপুরে কোমল মতি শিশুদের স্কুলে ধরে রাখা কঠিন বলে তিনি জানান।
গরমের সাথে বিদ্যুৎ বিভ্রাটও চলছে সমান তালে। রোড শেডিংয়ের কোন নিয়ম কানুন নাই। সারাদিনে ২ ঘন্টাও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাওয়া যায়না। দিনের পর রাতেও ঘন্টার পর ঘন্টা লোড শেডিং চলায় ঘুমহীন রাত কাটে মানুষের। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য পল্লী বিদ্যুতের অবহেলা ও অযোগ্যতকে দায়ী মনে করে জনগণ। শুক্রবার বিকালে সোসাল জার্ণালিস্ট গ্রæপ এবং সিয়াম মেমোরিয়াল ট্রাষ্টের ব্যানারে শত শত মানুষ পৌর শহরে মানব বন্ধন করে পল্লী বিদ্যুতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। পল্লী বিদ্যুৎ থেকে আগামী ২ মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভ্রাট চলবে বলে শহরে মাইকিং করা হয়েছে। ধর্মপ্রান মুসলমানদের মনে আগামী রমজান মাসে নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ দাবি করেছেন।
এব্যাপারে পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মঠবাড়িয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের ডিজিএম মো: গোলাম সরওয়ার মোর্শেদের সাথে ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।