Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভবন নির্মাণ বন্ধ থাকায় ছাপড়া ঘরে পাঠদান

বিদ্যুতের তার সরানোর দায়িত্ব কার!

| প্রকাশের সময় : ২২ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নিকলী (কিশোরগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার খয়রত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরনো ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯৮১সালে। এলাকা বিদ্যুতায়িত হয় ১৯৯২ সালে। সেই সময় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নিজেদের মতো লাইন টেনে এলাকায় বিদ্যুৎ দেয়। এদিকে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় সম্প্রতি বিদ্যালয় ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেই জায়গায় বিদ্যালয়ের নতুন একটি দোতলা ভবন নির্মাণ হচ্ছে। কিন্তু ভবনের উপরে বিদ্যুতের তার থাকায় বিদ্যালয়ের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। বিদ্যুতের তার সরানোর জন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা দাবি করছে। কিন্তু বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি বলছে, এ টাকা দেওয়ার সামর্থ তাদের নেই। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিরই বরং উচিত অপরিকল্পিতভাবে বিদ্যুতের লাইন টানানোর জন্য ভুল স্বীকার করে তা সরিয়ে নেওয়া। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর বলছে, বিদ্যুতের তার সরানোর দায়িত্ব পল্লী বিদ্যুতের, তারা শুধু ভবন নির্মাণ দায়িত্বে নিয়োজিত। বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা। নতুন ভবন নির্মাণের কারণে গত চার মাস ধরে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা কার্যক্রম চলছে একটি ছাপড়া ঘরে চলছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ছুটি দিয়ে দিতে হয় স্কুল। গত কয়েকদিন আগে কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে স্কুলের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা স্কুল থেকে এক কিলোমিটার দূরের উরদিঘী দাখিল মাদ্রাসার এক কক্ষে গাদাগাদি করে দিতে হয়েছে। বৃষ্টি হলে ছাপড়া ঘরে কোনো ক্লাশ নিতে পারেননা শিক্ষকেরা। ছাত্র-ছাত্রীরা বলছে, দ্রæত নির্মাণ করে দেওয়া হোক তাদেও স্কুল। কিন্তু বিদ্যুতের তারের কারণে বিদ্যালয় ভবনের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা হতাশায় ভুগছেন। তবে পরিচালনা কমিটি ও অভিভাবকরা ন্যায্যতার ভিত্তিতে এ অচলাবস্থার অবসান চাইছেন।
এলাকাবাসী বলছেন, যখন গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়, তখন বিদ্যুতের লোকজন কারও সঙ্গে পরামর্শ না করে নিজেদের মতো করে লাইন টানে। ভবিষ্যতে এ বিদ্যালয়টির যে উন্নয়ন হতে পারে, তা তারা বিবেচনায় নেয়নি। কাজেই এর দায় তাদের নিতে হবে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তাদের ভুলের খেসারত একটি স্কুলের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের ভবনের নিচের অংশের কাজ দ্রæত শেষ হলেও উপরের অংশের কাজ তারের জন্য প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ঠিকাদারের পক্ষ থেকে এ তার সরিয়ে দিতে বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও এর কোনো সমাধান হচ্ছে না। কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মনির উদ্দিনের সাফ কথা তার ও খুঁটি সরানোর খরচ দেওয়া হলেই কেবল এগুলো সরবে। তিনি বলেন, অতীতে কীভাবে লাইন টানানো হয়েছে আমি জানি না। তবে বর্তমান আমরা ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে এসব চিন্তা করেই লাইন টানি। তিনি এ সময় এলজিইডি , শিক্ষা অফিস বা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে এ টাকা পরিশোধ করার অহŸান জানান।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, সমস্যাটি নিয়ে যখন পল্লী বিদ্যুতের কাছে তিনি যান। তখন বলা হয়েছিল একটি আবেদন করলেই তারা ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু পরে ৭৯ হাজার ৫৩৭টাকার একটি বাজেট ধরিয়ে বলা হয় এ টাকা পরিশোধ করা হলেই খুঁটি ও তার বিদ্যালয়ের উপর থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এর দায় আমরা নেব কেন? যে প্রতিষ্ঠান নিজেদের মতো বিদ্যালয়ের উপর দিয়ে বিপজ্জনকভাবে লাইন টেনেছে- এ দায় তাদের। তাদের উচিত এগুলো সরিয়ে নিয়ে ভুল সংশোধন করা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, তিন মাস ধরে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা কষ্ট করছে। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পল্লী বিদ্যুতের এ ধরনের ব্যবসায়ীক মনোভাব দেখানো ঠিক হচ্ছে না। করিমগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুব জামান বলেন, আমরা বিষয়টির সমাধান দিতে পল্লী বিদ্যুতের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রয়োজনে লিখিতভাবে এর প্রতিকার চাওয়া হবে। করিমগঞ্জ উপজেলা উপ সহকারী প্রকৌশলী আবদুল মালেক সিদ্দিকী বলেন, কাজটি মূলত শিক্ষা অধিদপ্তরের এলজিইডি তা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে। প্রায় কোটি টাকার ভবনটির কাজ শুরু হলেও বিদ্যুতের তারের জন্য কাজটি এগোচ্ছে না। আর বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের সঙ্গে বিদ্যুতের তার সরানোর কোনো বরাদ্দ নেই। কাজেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কথা ভেবে পল্লী বিদ্যুতের উচিত বিদ্যুতের তারগুলো বিদ্যালয়ের উপর থেকে সরিয়ে নেওয়া।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ