রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
গাবতলীতে স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক
আল আমিন মন্ডল, গাবতলী (বগুড়া) থেকে : বগুড়া জেলা’সহ গাবতলী কৃষি নির্ভর উপজেলা। বৈরী আবহাওয়া ও বাজার বৈষম্যের ফলে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় ধান ও সবজি’সহ স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষক। জানা যায়, গাবতলী উপজেলার কৃষকরা লাভজনক ফসল হিসাবে ধান, পাট, আলু, বেগুন, সরিষা, ভুট্টা, শিম, টমেটো, বাঁধা-ফুল কপি ও সবজি’সহ স্ট্রবেরি চাষ করে আসচ্ছিল। কিন্তু উৎপাদিত পন্যের দাম কমে যাওয়ায় ও বাজার বৈষম্যে সৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে কৃষক তাদের ক্ষতি কাটিয়া উঠতে ধান চাষের পাশাপাশি পুরোদমে সবজি চাষ শুরু করেছে। এবছরে উপজেলায় কিছুসংখ্যক জমিতে বøাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ধান ক্ষেতের বেশ ক্ষতি হয়েছে। এ মৌসুমে কৃষকরা হাট-বাজারে প্রতিমন ধান ৮শ’ টাকায় বিক্রি করলেও শ্রমিক সঙ্কট হওয়ায় জনপ্রতি ১জন শ্রমিকের মজুরী দিতে হয়েছে ৭শ’ ৫০টাকা। ফলে মনে হয়েছে ১মন ধানে যেন ১জন শ্রমিক জুটেছে কৃষকের কপালে। ফলে ধানের উৎপাদিত খরচ যোগাতে কৃষকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। গাবতলী কৃষি অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ মৌসুমে উপজেলাতে ইরি বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছিল ১৮হাজার ১শ’ ৫০হেক্টর জমিতে। এছাড়াও অতিরিক্ত আরো ঐতিহ্যবাহী ইছামতি নদীতে জেগে উঠা জমিতে প্রায় ১শ’ হেক্টর বেশী জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৯০হাজার মেট্রিক টন (ধান)। এদিকে গত ১থেকে ২বছর পূর্বে গাবতলী কাগইলের তেলকুপি, চককাগইল, দড়িপাড়া, একবাড়িয়া ও কৈঢোপ গ্রামে বাণিজ্যিক ভাবে স্ট্রবেরি চাষ করা হয়েছিল। এক সময় ছিল যখন স্ট্রবেরি চাষ করে প্রায় ৫শতাধিক কৃষক স্বাবলম্বী হয়েছে। আর এখন বৈরী আবহাওয়া, মাটির গুনগত মান হ্রাস, শ্রমিক সংকট ও বাজার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় কৃষকরা স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। তেলকুপি গ্রামের স্ট্রবেরি চাষি রেজাউল, খালেক, রফিকুল, রাশেদুল, মানিক জানান, এক সময় তেলকুপি গ্রাম স্ট্রবেরি গ্রাম নামে পরিচিত ছিল। স্ট্রবেরি লাভজনক ফসল হলেও বৈরী আবহাওয়া ও বাজারে স্ট্রবেরি ফল এবং চারাগাছের দাম কমে যাওয়ায় আমরা স্ট্রবেরি চাষ করছি না। সে সময়ে আমরা স্ট্রবেরি ও চারা বিক্রি করে দারিদ্রতাকে জয় করেছিলাম। এমনকি আমাদের কলাকৌশল দেখে দুর-দুরন্ত থেকে এসে বহু কৃষক স্ট্রবেরি চারা নিয়ে গিয়ে চাষ করেছে। সেদিন যেন ফুরিয়ে গেছে এখন আর স্ট্রবেরি চাষ করা হচ্ছে না। কৃষক রুহুল আমিন, মোস্তফা, ভোলা, রাজ্জাক, আজিজ ও বিশ্বনাথ জানান, বাজারে প্রতিকেজী স্ট্রবেরি ৮শ থেকে ১হাজার টাকা বিক্রি করা হলেও এখন ৫০ থেকে ৮০টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও এ উপজেলার কৃষকদের প্রধান সমস্যা প্রাকৃতিক দুযোগ ও বৈরী আবহাওয়া। তবে সবজি উপজেলা হলেও এখানে নেই সবজি ও ফসল সংরক্ষণের জন্য কোন মিনি হিমাগার। ফলে স্বল্প সময়ে উৎপাদিত পন্য বাজারে বিক্রি না করতে পারলে ফসল নষ্ট হয়ে লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। ঘনঘন লোডশেডিং ফলে সময়মত ধানগাছে সেচ দিতে না পারায় সেচ সংকটে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ক্রটিপূর্ন বাজার ব্যবস্থাপনার ফলে কৃষক তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যর্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমনকি কৃষক সময়মত ভাল বীজ না পাওয়ায় ফলন ভাল হচ্ছে না। ফলে আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহনের ক্ষেত্রে উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন আর্দশ চাষিরা। প্রয়োজন রয়েছে উপজেলা পর্যায়ে সবজি ও বীজ সংরক্ষণের জন্য হিমাগার। কৃষকদের দাবী মৌসুমীভিক্তিক উন্নতজাতের বীজ, বাজার বৈষম্যে দূরীকরণ, পন্যের বিপনন ও বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। এছাড়াও আবহাওয়া ও প্রাকৃতিক দুযোগ কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের স্বল্প মেয়াদকালিন ধান চাষে উদ্বদ্ধকরণ করতে হবে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, কৃষকদের নানা সমস্যা তবে মৌসুমী ভিক্তিক বৈরী আবহাওয়া ও শ্রমিক সংকট রয়েছে। ভাল বীজ সরবরাহ ও বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার থাকলে কৃষক লাভবান হবে। এছাড়াও উপজেলা পর্যায়ে কৃষি ও কৃষকদের জন্য সার্বক্ষনিক তথ্য সেবা প্রদানের জন্য ‘কৃষি তথ্য সেন্টার’ অথবা ‘কৃষি তথ্য কেন্দ্র’ চালু করা যেতে পারে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাহাদত হোসেন জানান, কৃষক ধান চাষের পাশাপাশি সবজি চাষে ঝুকে পড়েছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোছাঃ আকতার জাহান জানান, বাজারে স্ট্রবেরি ফলের দাম কমে যাওয়ায় ও বৈরী আবহাওয়া কারনে কৃষক স্ট্রবেরি চাষ কম করছে। এছাড়াও ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়াতে হবে। এ জন্য জমিতে বেশী করে জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি জমির মাটি পরিবর্তন করে মাটি উর্বরতা শক্তি বাড়ানো সম্ভব। গাবতলী সবজি এলাকা হওয়ায় কৃষকদের ধান চাষের পাশাপাশি সবজি চাষে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা ও প্রযুক্তি’সহ কৃষি তথ্য প্রদান করা হচ্ছে এমনটায় জানিয়েছেন গাবতলী উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আঃ জাঃ মুঃ আহসান শহীদ সরকার। তিনি আরো জানান, বৈরী আবহাওয়ার ফলে স্ট্রবেরি চাষ কমে গেলেও বেড়েছে সবজি’সহ আউশ ধান চাষ। গাবতলী উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সোহরাব হোসেন জানান, স্ট্রবেরি চাষের সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবদ্ধতা সৃষ্টি হলে ফল পচে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে। তবে গাবতলীতে সবজি ও ধানের ভাল ফলন হয়েছে। আগামীদিনে উৎপাদন আরো বাড়বে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।