Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুন্দরবন ১ দশকে কমেছে ৩৩৪ বাঘ

| প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) উপজেলা সংবাদদাতা: সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ ফরেষ্ট সুন্দরবনের অতন্দ্র প্রহরী রয়েল বেঙ্গল টাইগার আজ নানা সংকটে বিলুপ্ত হতে চলেছে। চোরা শিকারীদের অপতৎপরতা, প্রাকৃতিক দূর্যোগ, লবনাক্ততা বৃদ্ধি, আবাসস্থল নষ্ট, খাদ্য সংকটসহ আন্তর্জাতিক ষঢ়যন্ত্রে মনুষ্যসৃষ্ট নানা প্রতিকূলতায় গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের সুন্দরবন থেকে আশংকাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে বাঘের সংখ্যা। শুমারী অনুযায়ী গত মাত্র ১ দশকের ব্যবধানে বাঘ কমেছে ৩৩৪ টি। ২০০৪ সালের শুমারিতে যেখানে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০ টি ২০১৫ সালের শুমারিতে তার সংখ্যা নেমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১০৬ টিতে। তবে বনবিভাগ টাইগার কনজারভেশন এ্যাক্টিভিটি প্রকল্পের আওতায় বাঘের সংখ্যা ও তার জীবন যাপন জানতে স¤প্রতি ২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয়বারের মত ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনা কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। বাঘের সঠিক সংখ্যা পেতে তারা এবার দেশী-বিদেশী গবেষকদের পাশাপাশি সর্বোচ্চ প্রযুক্তির ব্যবহার করেছে। যার ফলাফল জানতে অপেক্ষা করতে হবে চলতি বছরের আগষ্ট পর্যন্ত এমনটাই জানিয়েছে বনবিভাগ। বাঘ রক্ষায় সরকার বিভিন্ন সময় নানামুখি ব্যাপক পদক্ষেপ নিলেও বহুবিধ সংকটে কার্যত তা বাঘ বিলুপ্তিতে বিশেষ কোন প্রভাব পড়েনি। তবে কেন বাঘের এই কমে যাওয়া ? কারা মারছে, কেন মারছে আর যাচ্ছেই বা কোথায়? এমন প্রশ্ন থেকে সরকারি বা আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন গোষ্ঠী বা সংস্থা বিভিন্ন সময় ব্যাপক অনুসন্ধানও চালিয়েছে। এনিয়ে সর্বশেষ পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোল বাংলাদেশ সরকারের কাছে তাদের এক প্রতিবেদনও পাঠিয়েছিল। যাতে উঠে এসেছে বাঘ নিধনে জানা অজানা চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। বিশ্লেষকদের আশংকা, এমনটি চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে ম্যনগ্রোভ সুন্দরবনের বিশ্ব ঐতিহ্য ডোরাকাটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তবে সর্বশেষ আশার কথা, সুন্দরবনের নীলকমল, কটকা, কচিখালি ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে বাঘের বাচ্চা দেখা যাচ্ছে। ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। বিশেষজ্ঞদের অভিমত,বন ও জলদস্যুদের হাতে পরোক্ষভাবে সুন্দরবনের নিয়ন্ত্রন চলে যাওয়ায় এ পর্যন্ত তাদের হাতে শতাধিক বাঘ শিকার হয়েছে। খাদ্য ও আবাসস্থল সংকটে বহু বাঘ পাড়ি জমিয়েছে সুন্দরবনের ভারতের অংশে। স্থানীয়রা অবশ্য বাঘের সংখ্যা আশংঙকাজনকহারে হ্রাস পাওয়ার পেছনে ৮টি কারণ চিহ্নিত করেছে। যার মধ্যে রয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ (ঝড়,বন্যা,জলোচ্ছ¡াস), লবনাক্ততা বৃদ্ধি, খাদ্য সংকট, আবাসস্থল ধ্বংস ও বিশেষ করে চোরা শিকারিদের অপতৎপরতা। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে যে, ৮ কারণে বাঘের মৃত্যু হতে পারে তা হল, বয়স্ক বাঘের স্বাভাবিক মৃত্যু,পুরুষ বাঘ কতৃক বাচ্চা খেয়ে ফেলা, পর্যাপ্ত খাদ্যাভাব, লোনা পানি গ্রহনে লিভার সিরোসিস রোগে আক্রান্ত,প্রাকৃতিক দূর্যোগ, ব্যাবস্থপনাজনিত সমস্যা বিদেশী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বনবিভাগের দায়িত্বহীনতা, বাঘের প্রতি উদাসহীন দৃষ্টিভঙ্গি এবং শিকারীদের অপতৎপরতার কারনে সুন্দরবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে বাঘ। প্রতি বছর শীত মওসুম এলে সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী লোকালয়ে বাঘের আনাগোনা দেখা গেলেও গত কয়েক বছরে লোকালয়ে বাঘের অনুপ্রবেশ বা আক্রমণ দেখা যায়নি। সেখানকার মানুষের ধারণা, সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা একেবারে কমে গেছে সে জন্য বর্তমানে আর বাঘের দেখা মিলছেনা। যার প্রমাণ, ১৫’ সালের ক্যামেরা ট্রাপিং পদ্ধতিতে পরিচালিত শুমারিতে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখা ১০৬ টিতে নেমে এসেছে। সূত্র জানায়, সুন্দরবন থেকে পাচার হওয়া ৩ টি বাঘের শাবক ২০১২ সালের ১১ জুন ঢাকার শ্যমলী থেকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী র্যাব। পরে শাবকগুলোকে ডুলহাজরা সাপারী পার্কে অবমুক্ত করা হয়। সর্বশেষ ১৫’ সালের শুমারীর তথ্যানুযায়ী বাঘের সংখ্যা আশংকাজনকহারে হ্রাস পেয়েছে। সর্বশেষ জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে সংশ্লিষ্টরা বলেন, ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ইতোমধ্যে নানা পদক্ষেপ হাতে নেয়া হয়েছে। বাঘের প্রজনন বাড়াতে আরো ১৮ টি নতুন অভয়ারণ্য করা হচ্ছে। জানা যায়, বাঘ প্রতি সপ্তাহে অন্তত একবার শিকার করে থাকে। তবে শিকারের ওজন ৩০/৪০ কেজির কম হলে আবারো বের হতে হয় তাদের। প্রতিদিন এদের গড় ৭ কেজি খাদ্যের প্রয়োজন হয়। সে জন্য প্রতিটি বাঘের খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে বছরে ৩ হাজার ৬৫০ কেজি মাংসের প্রয়োজন। যার ওজন ৭৩ টি চিত্রা হরিণের সমান। প্রায় সব প্রজাতির বাঘ প্রজননক্ষম হয় আড়াই থেকে ৩ বছর বয়সে। বাঘিণীর বাচ্চা ধারণের সময়সীমা ১০৮ দিন। একটি বাঘিণী এক সাথে ২ থেকে ৬ টি পর্যন্ত বাচ্চা প্রসব করে থাকে। বাঘের জীবনকাল ১৪ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশ সীমানায় অবস্থিত ১০ হাজার বর্গ কিঃমিঃ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত সুন্দরবনের উপর থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সুন্দরবন ব্যবস্থাপনার জন্য ইতোমধ্যে সরকার ৫ হাজার ৬শ’ ৭৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকার একটি সহায়তা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। যার ১ হাজার ২শ’ ৬৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা জিওবি এবং প্রকল্প সাহায্য থেকে ৪ হাজার ৪ শ’ ১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা অর্থায়ন হবে। যা বাস্তবায়ন হবে ২০১৫ সালের মে থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যে বলে টিটিপিতে উলে¬খ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় থাকছে, বেজ লাইন সার্ভে ও মনিটরিং,অফিস ভবন/প্যাট্রোল পোষ্ট সংষ্কার, পন্টুন ও গ্যাংওয়ে মেরামোত, কমিউনিটিভিত্তিক সংরক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা, ৬০ হাজার কিঃমিঃ বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ,আন্তর্জাতিক সেবা, দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণ ও ষ্টাডি ট্যুর, যানবাহন ও যন্ত্রপাতি ক্রয়, প্রশিক্ষণ, ওয়ার্কশপ, সেমিনার ও মিটিং আয়োজন করা। ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রায় দু’বছর অতিবাহিত হতে চলেছে। সর্বশেষ ১৫’সালের জরীপে গত ১ দশকে সুন্দর বনের বাঘ কমেছে ৩৪০টি। এর মাত্র ১ বছরের ব্যাবধানে বনবিভাগের দ্বিতীয় দফার ক্যামেরা ট্রাফিংয়ে বাঘের সংখ্যা বাড়বে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে অপেক্ষা করতে হবে চলতি বছরের আগষ্ট পর্যন্ত, এমনটাই জানিয়েছেন বন বিভাগ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ