Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

হুমকিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট

ছোট যমুনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন

| প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোঃ আবু শহীদ, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) থেকে : দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে কোনো ভাবেই থামছেনা শাখা যমুনা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলন। সরকারিভাবে কোনো অনুমোদন না থাকলেও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট যমুনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছেই। আর অবৈধভাবে গড়ে তোলা এসব ঘাটের বালু বহনকারী ট্রাক্টরগুলো অনবরত চলাচল করায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ গ্রামীন রাস্তা-ঘাট ধ্বংস হবার কারণে হুমকির মুখে পড়ছে ওই এলাকার মানুষ। উপজেলা ভ‚মি অফিস সূত্রে জানা যায়, শিবনগর ইউনিয়ের ছোট যমুনা নদীর তীরবর্তী বেলতলী ও গোপালপুর নামক দুটি স্থান বালু মহালের জন্য নির্দিষ্ট করে ইজারা প্রদান করা হয়েছে। বালুমহল ইজারার শর্তানুযায়ী ইজারাকৃত নির্দিষ্ট ঘাট ব্যতিত অন্য যেকোন স্থানে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ অবৈধ। কিন্তু উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেলতলী ও গোপালপুর ঘাট ইজারা নিয়ে ইজারাদার মোঃ আতিয়ার রহমান মিন্টু উপজেলার দৌলতপুরও খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শাখা যমুনা নদীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। আর প্রশাসনের নিরবতায় এভাবে গ্রামীণ রাস্তাঘাট ধ্বংস করে যত্রতত্র বালু উত্তোলনের ফলে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। অপরদিকে নদী শাসনের জন্য দেয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ধ্বংস করলেও এসব বালু খোঁকোদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়ায় হতবাক ওই এলাকায় বসবাসরত সাধরণ মানুষ। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের লোক সরেজমিনে যাওয়ার আগে কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হলেও প্রশাসনের লোক চলে আসার সাথে সাথে আবারো শুরু হয় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এর মহোৎসব। সরেজমিনে দেখা যায়, খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের শাখা যমুনা নদীর উপর স্থাপিত খয়েরবাড়ী-মোহদীপুর ব্রীজের পিলারের কাছ থেকে বালু মহালের বেলতলী-তালতলার ইজারাদারদের সহযোগীতায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হকের খাজা এন্টার প্রাইজ নামের ১টি গাড়িতে বালু লোড করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। একটু সামনেই দেখা যায় দৌলতপুর ইউনিয়ন এর হড়হড়িয়াপাড়া নামক স্থানে রীতিমত ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে বাঁধের পাশে স্তুপ করে,সেখান থেকে দেদারছে বিভিন্ন এলাকায় বালু পাঠানো হচ্ছে। দৌলতপুর ইউনিয়নের জানিপুর বাঁধ সংলগ্ন যমুনা নদীর তীর ঘেঁষে একটি বিশাল এলাকায় গর্ত করে বেলতলী ঘাটের ইজারাদার মোঃ আতিয়ার রহমান মিন্টু বালু উত্তোলন করায় হুমকির মুখে পড়েছে বাঁধটি। এমনি করে এই ইজারাদাররা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পয়েন্ট বানিয়ে অবৈধ পন্থায় বালু উত্তোলন করে গ্রামীন রাস্তা ঘাটের ক্ষতি করলেও কোন প্রকার দেখভাল নেই প্রশাসনের। এদিকে নদী থেকে যত্রতত্র বালু উত্তোলনের ফলে একদিকে যেমন কৃষকের কৃষি জমি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে,অপরদিকে গ্রামীন রাস্তার মধ্যদিয়ে অনবরত বালু বোঝাই ট্রাক্টর চলাচল করায় রাস্তাঘাট ভেঙ্গে পড়ছে। আর এমনি করে জনদুর্ভোগ বাড়লেও থামছেনা এসব অবৈধ ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম এমনটিই অভিযোগ স্থানীয় জমি মালিক ও সাধরণ মানুষের। দৌলতপুর হড়হড়িয়াপাড় ঘাটে মেশিন লাগিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ এর ছোট ভাই মতিয়ার রহমান বলেন চেয়ারম্যানের নির্দেশে ও বেলতলী-গোপালপুর ঘাটের ইজারাদার মোঃ আতিয়ার রহমান মিন্টুর সাথে বাৎসরিক ৮০হাজার টাকা চুক্তিতে বালু উত্তোলন করছি। একইভাবে বাৎসরিক ৮০হাজার টাকা চুক্তিতে বালু উত্তোলন করছেন,খয়েরবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি এনামুল হক,বারাইপাড়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেন ও মোজাম্মেল হাজি। বালুবহনকারী মুনমুন এন্টার প্রাইজ ট্রাক্টরের ড্রাইভার দিপু চন্দ্র ও খাজা এন্টার প্রাইজের ড্রাইভার রাশেদুল ইসলাম এর সাথে কথা বললে তারা বালু বিক্রয়ের একটি রশিদ দেখিয়ে বলেন,ঘাট ইজারাদার মোঃ আতিয়ার রহমান মিন্টু তাদেরকে এই ঘাটে গাড়ি লাগিয়ে বালু উত্তোলন করতে বলেছেন। তারা আরও বলেন, ইজারাদার তাদেরকে ওই রশিদ ছাড়া গাড়ি বহন করতে নিষেধ করেছেন। এদিকে বালু বহনকারী ট্রাক্টর মালিকদের অভিযোগ বেলতলী ঘাটের ইজারাদারদের চুক্তির টাকা দিতে দেরী হলে কিংবা চুক্তি মোতাবেক টাকা কম দিলেই তারা তাদের লোকজন দিয়ে গাড়ি আটকিয়ে উপজেলা প্রশাসনের নিকট অবৈধ বালু উত্তোলনকারী হিসেবে সোপর্দ করে। দৌলতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজের সাথে মুঠোফোনে কথা তিনি তার ভাইয়ের বালু উত্তোলনের কথা স্বীকার করে বলেন, এলজিএসপির সরকারি কাজের প্রয়োজনে আমি তাকে বালু তুলতে বলেছি। বেলতলী ঘাট ইজারাদার আতিয়ার রহমান মিন্টুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,টাকা দিয়ে ঘাট ইজারা নিয়েছি,কিভাবে কোথায় ঘাট চালাতে হয় আমরা জানি। অবৈধ ঘাটের চুক্তির বিষয়ে বলেন,কেউ টাকা দিতে চায় না, নামেই চুক্তি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এহেতেশাম রেজা বলেন,ইজারাকৃত স্থান ছাড়া বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ অবৈধ। বালু মহলের ইজারাদার ইজারাকৃত স্থান ব্যতিরেখে অন্য কোন স্থানে বালু উত্তোলন করতে পারবেনা। তিনি আরও জানান,ইজারাকৃত ঘাট ছাড়া কেউ বালু উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেযা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ