রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
টি এম কামাল, কাজিপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে : যমুনা নদীর বুকে জায়গাটার নাম চরগিরিশ, নদীর পার থেকে চরের শেষ সীমা পর্যন্ত পুরো চর হাতখানেক লম্বা গাছে ঢাকা। যেন পুরো জায়গাটা সবুজ গালিচায় ছাওয়া। এরই মধ্যে কিছু কিছু জায়গা আবার একেবারে ন্যাড়া। সেখানে নারী-পুরুষ আর শিশুদের জটলা। ওরা হাতে টেনে গাছগুলো উপড়ে আনছে। গাছগুলোর শেকড়ে ঝুলছে থোকা থোকা বাদাম। বাদামগুলো আলাদা করে দিলেই গাছগুলো হয়ে যাবে ওদের, তাই গাছ উপড়ানো নিয়ে চলছে জোর প্রতিযোগিতা। জমির মালিক আব্দুল কাদের। তিনি এক সঙ্গীকে নিয়ে এসেছেন বাদাম তোলা তদারকি করতে। তিনি জানান, কাজে ব্যস্ত লোকগুলোর সবাই পশ্চিম পারের বাসিন্দা, বাদাম তোলার কাজটা তাদের জন্য আনন্দের। এবার যাওয়া যাক সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলায় একেবারে যমুনার তীরে। জায়গাটার নাম নাটুয়ারপাড়া। সেখানে কয়েকটি বাদামভিত্তিক কারখানায় এখন শুধু ব্যস্ততা। কয়েক শ’ নারী শ্রমিক বাদামের খোসা ছাড়ানোর কাজ করছেন। তারাও খুশি, পরিতৃপ্ত। নাটুয়ারপাড়ায় মরিচ ও বাদামভিত্তিক শিল্পেও নারীশ্রমিক ব্যস্ত। এখান থেকে ভাজা বাদাম, খোসা ছাড়ানো বাদাম ও মরিচ রোজ যাচ্ছে সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও জামালপুর সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। যে যমুনা নদী বছরের পর বছর পাড় ভেঙে বেড়ায় নদী শিকস্তি লোকজনকে করেছে নিঃস্ব, আবার তারই বুকে জাগা চর ওই লোকগুলোর জন্য খুলে দিয়েছে সম্ভাবনার নতুন দ্বার। আর সমৃদ্ধি আসছে চরের বিস্তীর্ণ জমিতে বাদাম চাষের মাধ্যমে। চর এলাকার হাজার হাজার বিঘা জমিতে কেবল উন্নতমানের বাদামই উৎপন্ন হচ্ছে না, বিঘাপ্রতি যে পরিমাণ বাদাম উৎপন্ন হচ্ছে, তা দেশের অনেক অঞ্চলের চেয়ে বেশি। এ কারণে কাজিপুর উপজেলা ইতিমধ্যেই দেশের অন্যতম প্রধান বাদাম উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান, বাদাম চাষে দরকার পলিমিশ্রিত বেলেমাটি। ফেব্রæয়ারি থেকে মে পর্যন্ত বাদাম চাষের মৌসুম। সামান্য বর্ষাতেই কাজিপুরের চর এলাকার সব জমি যমুনার পানিতে তলিয়ে যায়। আর বড় বন্যা হলে তো কথাই নেই। প্রতিবছর উপজেলার চর এলাকার জমিতে জমে প্রচুর পলি ও বালি। আর তা-ই বাদাম চাষের জন্য অন্যন্ত উপযোগী। কাজিপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ৯টি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকাই যমুনার চর। খাসরাজবাড়ী, নাটুয়ারপাড়া, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ, মনসুরনগর, মাইজবাড়ী, কাজিপুর সদর ও শুভগাছা নামের এ ৯টি ইউনিয়নের মানুষের প্রধান আয়ের উৎস এখন বাদাম। কৃষি অফিস জানায়, এ ৯টি ইউনিয়নের ৭৮০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ হয়। প্রতিবছর এ জমি থেকে প্রায় ৫০ হাজার মণ বাদাম উৎপন্ন হয়, যার আর্থিক মূল্য প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। ১০ থেকে ১৫ বছর আগেও কাজিপুরের চরবাসী বাদাম চাষে এতটা আগ্রহী ছিলেন না। তখন চরে অন্যান্য ফসলের সঙ্গে অপ্রধান ফসল হিসেবে বাদাম চাষ হতো। বর্তমানে বর্ষায় যে অনুপাতে পলি ও বালি জমা হয়, তাতে অন্যান্য ফসল উৎপাদনে জমি হয়ে উঠছে অনুপযোগী। তবে একই কারণে ওই জমিগুলোই হয়ে উঠছে বাদাম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এখন এক বিঘা জমিতে ধান বা অন্য ফসল চাষ করলে যে আয় হয়, তারই প্রায় সমান আয় হয় বাদাম চাষ করে। এলাকার কৃষকেরা জানান, চরের প্রায় সব জমিই এক ফসলি। আগে এসব জমিতে ধান, ডাল, তেলবীজ, পাট ও কিছু বাদাম উৎপাদন হতো। ১৯৮৮ সালের বন্যার পর চরের জমিগুলোয় পলি কমে বেলেমাটির পরিমাণ বাড়তে থাকে। এ বেলেমাটির কারণে জমি হয়ে ওঠে বাদাম চাষের জন্য দারুণ উপযোগী। বাদাম চাষে খরচ বাদে বিঘাপ্রতি সাড়ে থেকে ৫ হাজার টাকা আসছে। নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের ঘোড়াগাছা গ্রামের কৃষক আব্দুল কালাম আজাদ, ফুলজোড় গ্রামের হাসেম আলীসহ বেশ কয়েকজন জানান, জমিতে হালকা চাষ দিয়ে বাদামবীজ ছিটিয়ে দিলেই হলো। তারপর কয়েক মাস বাদে জমি থেকে বাদামগাছ তুলে শেকড়ের সঙ্গে থোকায় থোকায় লেগে থাকা বাদামগুলো আলাদা করে নিলেই পাওয়া যায় ফসল। মাঝখানে জমিতে যেমন সার দিতে হয় না, তেমনি প্রয়োজন হয় না কোনো পরিচর্যার। বাদামের জন্য নাটুয়ারপাড়া, তেকানী, কুমারিয়াবাড়ী, রঘুনাথপুর, জর্জিরা বাজারে গড়ে উঠেছে ব্যবসাকেন্দ্র। এসব জায়গা থেকে বাদাম নৌযান, ঘোড়ারগাড়ী, ট্্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এতে অনেকের জন্যই সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থানের। নাটুয়ারপাড়া বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর দাবি, তাদের এলাকা এখন বাদাম বেচাকেনার সবচেয়ে বড় ব্যবসাকেন্দ্র। বেচাকেনা সারা বছর চললেও মৌসুমকে ঘিরে মে-জুলাই পর্যন্ত বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।