Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বিএনপির ভিশন : ক্ষমতাসীন দলের বিষোদগারের মিশন

উপ-সম্পাদকীয়

| প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কামরুল হাসান দর্পণ : প্রত্যেক রাজনৈতিক দলেরই একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে। বিশেষ করে যেসব রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যাওয়ার সক্ষমতা রাখে, ক্ষমতায় গেলে সে কীভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, তার একটি ভিশন ও মিশন থাকে। বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার মতো সক্ষমতা রাখে এমন দুটি দল রয়েছে। একটি বিএনপি, আরেকটি আওয়ামী লীগ। সাধারণত জাতীয় নির্বাচন বা ক্ষমতায় যাওয়ার নির্বাচন ঘনিয়ে এলে ক্ষমতাকামী দলগুলো জনসাধারণের সামনে তার করণীয়সহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে, যাকে নির্বাচনী ইশতেহার বলা হয়। এতে উন্নয়নমূলক নানা প্রতিশ্রুতি থাকে।  যে দলের প্রতিশ্রুতি জনগণের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মনে হয়, তাকেই ভোট দিয়ে তারা ক্ষমতায় আনে। বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন আগামী দেড় বছরের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলগুলো বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে। কম-বেশি প্রস্তুতি শুরু করেছে। দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপিও এ লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে। তার কার্যক্রমের বড় একটি নজির হচ্ছে, ক্ষমতায় গেলে সে কীভাবে দেশ পরিচালনা করবে, তার একটি ভিশন জাতির সামনে ইতোমধ্যে উপস্থাপন করেছে। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘ভিশন ২০৩০’। ৩৭টি বিষয় নিয়ে ২৫৬টি দফা এই ভিশনে তুলে ধরা হয়েছে। অর্থনীতি, রাজনীতি, পররাষ্ট্র নীতিসহ রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যান্য বিষয় এতে যুক্ত হয়েছে। গত ১০ মে দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া জাতির সামনে এই ভিশন তুলে ধরেন। বেশ কিছু দিন আগে থেকেই এই ভিশন নিয়ে দেশব্যাপী আলাপ-আলোচনা শুরু হয়। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তো একের পর এক বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে এ ভিশনকে এক প্রকার হোয়াইট ওয়াশ করার চেষ্টা করছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যে এক ধরনের ¯েøজিং পরিলক্ষিত হয়। এ ভিশন একেবারে ‘বোগাস’ এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। ভিশন ২০৩০ ঘোষণার পর, তাদের প্রতিক্রিয়া তো আরও তীব্র হয়ে উঠে। তারা যেন বিষয়টি সহ্যই করতে পারছেন না। দলটির সাধারণ সম্পাদক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন ২০৩০ একটি ফাঁকা প্রতিশ্রুতির ফাঁপানো রঙিন বেলুন। এই বেলুন অচিরেই চুপসে যাবে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত পৌঁছানোর পথ বিএনপির জন্য খোলা নেই। তিনি বলেন, এতে কোনো নতুনত্ব নেই। আওয়ামী লীগের ধারণা চুরি করে বিএনপি ভিশন ২০৩০ দিয়েছে। অন্যের মেধাস্বত্ব চুরি করা একটি নৈতিক অপরাধ। এটা একধরনের রাজনৈতিক অসততা। এ প্রতিক্রিয়া থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, ক্ষমতাসীন দল বিএনপির এ ভিশনকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না। তাদের কাছে অসহ্য মনে হচ্ছে।
দুই.
একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ভোটের রাজনীতিতে ভোটারদের মন জয় করার জন্য বিভিন্ন কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করতেই পারে। এতে দোষের কিছু নেই। বরং এটাই উচিত। ভোটাররা যদি মনে করে দলটির প্রতিশ্রুতি বা ভিশনের বিষয়গুলো তাদের জন্য কল্যাণকর হবে, তবে তাদের ভোট দেবে। পছন্দ না হলে ভোট দেবে না, ক্ষমতায়ও বসাবে না। এটা স্বাভাবিক একটা প্রক্রিয়া। অন্য দলও এ ধরনের ভিশন-মিশন বা প্রতিশ্রুতি দিতে পারে। ক্ষমতাসীন দলতো তার দেয়া ভিশন নিয়েই ক্ষমতায় আছে। তার ভিশন পছন্দ হয়েছে বলেই তাকে জনগণ ক্ষমতায় বসিয়েছে। আগামী নির্বাচন সামনের রেখে, তার মূল প্রতিদ্ব›দ্বীও ভিশন বা প্রতিশ্রুতি দেবে, এটাই স্বাভাবিক। একটা দলের যদি ভিশনই না থাকে, তবে তাকে জনগণ ভোট দেবে কেন? এছাড়া তার ভিশন যে জনগণের পছন্দ হবেই, এটা মনে করারও কোনো যুক্তি নেই। তাহলে ক্ষমতাসীন দল কেন বিএনপির এই ভিশন নিয়ে উতলা হয়ে উঠেছে? তার ভিশনে প্রতিশ্রুত বিষয়কে কেন হাস্যকর, ফাঁপানো বেলুন বা তাদের নকল বলে উড়িয়ে দিতে চাচ্ছে? তাদের এ প্রতিক্রিয়া থেকে সাধারণ মানুষ যদি মনে করে, ক্ষমতাসীন দলের জন্য তা মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে, তাহলে অযৌক্তিক বলা হবে না।  ক্ষমতাসীন দলের তীব্র প্রতিক্রিয়া এবং অসহ্য হওয়া থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বিএনপির ভিশন ২০৩০ একটা বিরাট কিছু এবং এতে এমন কিছু রয়েছে, যা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তো বলেই ফেলেছেন, তাদের (ক্ষমতাসীন দল) মধ্যে একটা অসহনীয় অবস্থা। কেন তাদের মধ্যে জ্বালা বা গাত্রদাহ তা আমরা বুঝতে পারছি না। তিনি এ কথাও বলেছেন, বিএনপি একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমাদের ভিশন, পরিকল্পনা থাকতেই পারে। কিন্তু তারা একে ধাপ্পাবাজি ও ভাঁওতাবাজি বলছেন। এসব বলে তারা নিজেদেরকে নিজেরাই বোকা বানিয়েছেন। ক্ষমতাসীন দল বলেছে,  আওয়ামী লীগের ধারণা থেকেই বিএনপি ভিশন ২০৩০ দিয়েছে। তাদের এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, আওয়ামী লীগ যে ভিশন দিয়েছিল, দেশের মানুষ তা গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে তারা পথ প্রদর্শক। তার অর্থ এই নয়, এ পথে আর কেউ হাঁটতে পারবে না বা ভিশনারি হতে পারবে না। এটা এক ধরনের কুপমন্ডুকতা। এমন মনোভাব পোষণ করা কোনোভাবেই শুভবুদ্ধির পরিচায়ক নয়, দেশের জন্যও মঙ্গলজনক নয়। দেশের মঙ্গলের জন্য সরকার ও বিরোধী দলের মতের যদি মিল থাকে, তবে দেশে রাজনৈতিক বিভেদ, মারামারি, হানাহানি, হিংসা, প্রতিহিংসা, সামাজিক বিভেদ-এসব কিছুই থাকবে না। বিএনপির ভিশনের সাথে যদি ক্ষমতাসীন দলের ভিশনের মিল থেকেই থাকে, তাহলে সমস্যা কোথায়? বরং ক্ষমতাসীন দলের বিএনপির এই ভিশনকে স্বাগত জানানো উচিত। বলা উচিত, আমাদের ভিশনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করায় অভিনন্দন। এতে রাজনৈতিক যে সহনশীলতা ও সহবস্থানের অভাবের কথা এতদিন ধরে বলা হচ্ছে, তা অনেকটাই ঘুচে যাবে। তাছাড়া আমাদের দেশের উন্নয়নের অন্তরায় হিসেবে যেসব সমস্যা বিরাজমান, তা সবার জানা এবং একই ধরনের। রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বাড়ানো, উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত করার যে প্রতিবন্ধকতা-এগুলো নতুন নয়। এসব সমস্যা দূর করার জন্য সরকার পদক্ষেপ নেবে বা যারা ক্ষমতায় যাবে তারা পদক্ষেপ নেবে, এটাই স্বাভাবিক। দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে এগুলো মৌলিক সমস্যা হয়ে রয়েছে। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন, এগুলোর উন্নয়নই করতে হবে। এসব উন্নয়নমূলক কাজের বাইরে গিয়ে আর কী কাজ করা যেতে পারে? সব দলের ভিশন-মিশনই তো এসব সমস্যার সমাধান করা এবং দেশকে এগিয়ে নেয়া। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, বিএনপির ভিশন ২০৩০ সম্পর্কে সরকারের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে, বিএনপি কেন এসব উন্নয়নমূলক কর্মসূচি দেবে? এসব কর্মসূচি দেয়ার একমাত্র এখতিয়ার আওয়ামী লীগের। অন্য কেউ দিতে পারবে না। এ ধরনের মনোভাব পোষণ করা কতটা শোভনীয় তা ভেবে দেখা দরকার।
তিন.
কিছু সমালোচনা ছাড়া বিএনপির ভিশন ২০৩০ কে দলনিরপেক্ষ সুধীসমাজ ইতিবাচক হিসেবে গণ্য করেছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বিএনপির এই ভিশন সুধী সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে ভিশনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মত দেয়া শুরু করেছেন। আরও কি কি বিষয় অন্তর্ভূক্ত থাকা উচিত ছিল, কীভাবে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে-এ ধরনের মতামত তারা ব্যক্ত করছেন। বিএনপির ভিশনের সাফল্য এখানেই। দলটির মহাসচিব সহ অন্যান্য নেতারাও সুধীজনের আলোচনা-সমালোচনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, আমরা একটা ভিশনের মডেল দিয়েছি। এটাই যে চূড়ান্ত বা অপরিবতর্নীয়, তা নয়। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মতামত এই ভিশনের সাথে যুক্ত হতে পারে। মতামত গ্রহণের এ দ্বার উন্মুক্ত রয়েছে। বিএনপির নেতাদের এ বক্তব্য সময়োপযোগী এবং গণতান্ত্রিক। তারা সকলের মতামত গ্রহণ করতে প্রস্তুত। জাতীয় নির্বাচনের আগে এসব মতামতের ভিত্তিতে আরও পরিশিলীত ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে ইশতেহার প্রস্তুত করা হবে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, বিএনপির এ ভিশন কার্যকর করতে হলে তাকে ক্ষমতায় যেতে হবে। তা নাহলে সবকিছুই বিফল হবে। এ কথা বলা যায়, ক্ষমতায় যাওয়ার প্রাক প্রস্তুতি হিসেবে এ ভিশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ক্ষমতায় গিয়ে বিএনপি কী করতে চায়, তার একটি আগাম পরিকল্পনা জনগণ জানতে পারছে। এতে বিএনপিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করা যায় কিনা, এ সিদ্ধান্ত নিতে জনগণের সুবিধা হবে। ভিশন ২০৩০ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নকল বলে যতই দাবী করা হোক, জনগণ যদি এটা মনে করে, নকল হোক তাতে কি, বিএনপিকে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে একবার সুযোগ দিয়ে দেখা যাক না, পারে কিনা। আমাদের দেশের রাজনীতিতে ক্ষমতার পট পরিবর্তনে জনগণের মধ্যে এ ধরনের মনোভাব দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, কোনো দলকেই তারা একবারের বেশি দুইবার ক্ষমতায় বসায়নি। ৫ জানুয়ারির মতো ভোটারহীন নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের এ মনোভাবকে জোর করে হয়তো দমানো গেছে, তবে এটা ভাবার কারণ নেই, এ মনোভাব থেকে তারা সরে গেছে। কারণ বাংলাদেশের জনগণ প্রধান দুই দলকেই পালাক্রমে ক্ষমতায় দেখতে চায়। আগামী নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে হয়, তবে তাদের এ মনোভাবের ধারা অনুযায়ী বিএনপিরই ক্ষমতাসীন হওয়ার কথা। বলার অপেক্ষা রাখে না, ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের পর রাজনীতির পুরো খোলনলচ বদলে গেছে বা বদলে ফেলা হয়েছে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা এখন অনেকেই করছেন না। আবার এ কথাও সত্য, রাজনীতিতে শেষ বলে কথা নেই। যে কোনো সময় তাতে পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। এই পরিবর্তনের আশা করেই বিএনপি হয়তো তার কর্মকৌশল নির্ধারণ করে এগুচ্ছে। দলটি যদি তার কর্মপদ্ধতি দিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটারদের কনভিন্স করতে সক্ষম হয় বা গণজোয়ার সৃষ্টি করতে পারে, তবে তার ক্ষমতায় যাওয়ার আশা উজ্জ্বল হয়ে উঠতে পারে। এক্ষেত্রে ভিশন ২০৩০ তাদের অন্যতম একটি হাতিয়ার হতে পারে। এর মাধ্যমে দেশব্যাপী যে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে এবং পক্ষে-বিপক্ষে ও বস্তুনিষ্ঠ যেসব বক্তব্য-বিবৃতি আসছে, সেগুলো আমলে নিয়ে দলটির কর্মসূচি নির্ধারণ করা উচিত। ভিশন ২০৩০ ঘোষণার পর বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যেও বেশ উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের সামনে একটি লক্ষ্য দেয়া হয়েছে। দলটির নেতাকর্মীরা যদি ভিশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ উপলব্ধি করে সামনে এগিয়ে যেতে পারে, তবে এ থেকে ইতিবাচক ফলাফল বের হয়ে আসা অসম্ভব কিছু নয়। যেহেতু সরকারের বৈরী নীতির কারণে দলটি প্রকাশ্যে কোনো জনসভা বা মিছিল করতে পারছে না, তাই দলটির নেতা-কর্মীদের ভিশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ নিয়ে জনসাধারণের ঘরে ঘরে যেতে হবে। এ কাজটি করতে পারলে একদিকে যেমন দলটির জনসম্পৃক্ততা বাড়বে, তেমনি তার পক্ষে ব্যাপক জনমতও সৃষ্টি হবে। আশার কথা, বিএনপি এ ভিশনকে কেন্দ্র করে জনমত সৃষ্টিতে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। সভা, সেমিনার করে দেশের বিশিষ্টজনদের সাথে মতবিনিময় করছে। ভিশন ২০৩ পুস্তক আকারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ নানা পেশার মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারো যুক্তিসঙ্গত মতামত থাকলে তা গ্রহণও করা হবে। এটি একটি ভাল উদ্যোগ। এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে, দেশ-বিদেশে দলটির ভাবমর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। তবে এর পাশাপাশি দলটিকে মাঠের রাজনীতিতেও সক্রিয় হতে হবে। কর্মসূচি দিয়ে ঘরে বসে থাকলে হবে না। শীর্ষ নেতাদের মাঠে নামতে হবে। কারণ ইতোমধ্যে দলটির গায়ে এ বদনাম লেগেছে যে, কর্মসূচি দিয়ে নেতারা মাঠে নামেন না। সরকারি দলের পক্ষ থেকেও এ ধরনের কথা বলা হয়ে থাকে। এ বদনাম ঘোচাতে দলটিকে নিয়মতান্ত্রিক মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হতে হবে।
চার.
বিএনপির ভিশন ২০৩০ যে ক্ষমতাসীন দলের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা তাদের তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা থেকে বোঝা যাচ্ছে। এটাও বোঝা যাচ্ছে, এই ভিশনকে কলুষিত করার জন্য তারা একটা মিশন নিয়ে নেমেছে। প্রায় প্রতিদিনই দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন সভা-সেমিনারে বিষোদগার করে চলেছে। নানা অপবাদ দিচ্ছে। এ ভিশন হাস্যকর, কিছুদিনের মধ্যে চুপসে যাবে, জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে, তাদের এসব কথা থেকেই এক ধরনের নার্ভাসনেস ফুটে উঠেছে। রাজনীতির কৌশল হিসেবে প্রধান প্রতিপক্ষের যে কোনো বিষয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ ও নেতিবাচক সমালোচনা করা ক্ষমতাসীন দলের জন্য স্বাভাবিক। তাদের সাথে দলীয় ঘরানার বুদ্ধিজীবীরাও ইনিয়ে-বিনিয়ে নানা নেতিবাচক কথা বলবে, এটাও অস্বাভাবিক নয়। ক্ষমতাসীন দলের এ ধরনের অসহিষ্ণু ও তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, বিএনপির ভিশন ২০৩০ যে আগামীর রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং তা জনমত গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে, তাতে সন্দেহ নেই। বিষয়টি ভালভাবে উপলব্ধি করে বিএনপির উচিত হবে, এ ভিশনকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করানোর সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা। এটি যদি এমন হয়, শুধু ভিশন দেয়া দরকার, তাই দেয়া হয়েছে, তবে তা দলটির জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠবে। ভিশনকে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া ও বোধগম্য করে তুলতে দলটির নেতা-কর্মীদের অব্যাহতভাবে কাজ করে যেতে হবে। জেলা, উপজেলা, পাড়া-মহল্লায় এ নিয়ে সভা-সেমিনার করতে হবে। মানুষকে এর মর্ম উপলব্ধি করাতে হবে। বিএনপিকে মনে রাখতে হবে, তার ভিশন ক্ষমতাসীন দলের জন্য মর্মপীড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজেই রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে, তাকে এই ভিশনকে যে কোনো উপায়ে এগিয়ে নিতে হবে।
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ