পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্রাম, প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের ভয়ের কিছু নেই, মশা নিধনই প্রতিরোধের উপায় -স্বাস্থ্যমন্ত্রী
হাসান সোহেল : মশার নগরী ঢাকায় এক সময় এডিস মশার কামড়ে নাগরিকেরা ডেঙ্গু জ্বর আতঙ্কে ভুগেছে। ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতা এখনো কাটেনি। এরই মধ্যে একই মশার কামড়ে নতুন রোগ ‘চিকনগুনিয়া জ্বর’ আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। মশার কামড়ে রাজধানী ঢাকায় এ রোগের পাদুর্ভাব বেড়ে গেছে। হাসপাতালগুলোতে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। যেসব এলাকায় মশার উপদ্রব বেশি সেই এলাকার মানুষের মধ্যে এ রোগ বেশি দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, নতুন এ রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। বরং মশা নিধনই এ রোগের পার্দুভাব থেকে মানুষকে বাঁচাতে পারে। রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক মাহমুদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রফেসর ডা. সানিয়া তহমিনা এবং রাগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষক ডা. মোস্তাফিজ ইনকিলাবকে বলেন, আপাতত এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। মশার কামড় থেকে সুরক্ষাই চিকুনগুনিয়া থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায়। অবশ্য স্বাস্থ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম চিকনগুনিয়া জ্বরের জন্য আতঙ্কিত না হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
ভাইরাস জনিত জ্বর চিকুনগুনিয়ার ভয়াবহতা বাড়ছে। আক্রান্ত মশার মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে এ রোগ ছড়াচ্ছে। ডেঙ্গু ও জিকা ভাইরাসের মতোই এডিস প্রজাতির মশার মাধ্যমেই এ রোগটি মানুষের শরীরে ছড়ায়। এ মাসের শুরু থেকেই রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাসপাতাগুলোতে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। তবে এই রোগে মৃত্যুর হার একেবারেই নেই জানালেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চিকুনগুনিয়া এক দীর্ঘ ভোগান্তির নাম। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এর কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। চিকিৎসা মূলত উপসর্গ ভিত্তিক। আক্রান্ত ব্যক্তিকে বিশ্রাম নিতে হবে। একই সঙ্গে প্রচুর পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। প্রয়োজনে জ্বর ও ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল ট্যাবলেট এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ খেতে হবে। তবে গিটের ব্যথার জন্য গিটের ওপর ঠান্ডা পানির শেক ও হালকা ব্যয়াম উপকারী হতে পারে। এছাড়া প্রাথমিক উপসর্গ ভালো হওয়ার পর যদি গিটের ব্যথা ভালো না হয়, তাহলে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। কোন কারণে রোগীর অবস্থার অবনতি হলে দ্রæত নিকটস্থ সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করতে বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ব্যক্তিগত সচেতনতাই চিকুনগুনিয়া ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রধান উপায় বলে উল্লেখ করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রফেসর ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, মশার কামড় থেকে সুরক্ষাই চিকুনগুনিয়া থেকে বাঁচার সবচেয়ে ভালো উপায়। রাতের বেলায় মশারি টানিয়ে ঘুমানো, জানালায় নেট ব্যবহার করা, প্রয়োজন ছাড়া দরজা-জানালা খোলা না রাখা, শরীরে মশা প্রতিরোধক ক্রিম ব্যবহার করা, এগুলোর মাধ্যমেই এই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, চিকুনগুনিয়া মরণঘাতী কোনো রোগ নয়। এ নিয়ে অহেতুক ভীত বা আতংকিত না হয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। নিজ বাড়িঘর এবং আশে পাশে যেন কোনো ভাবে পানি জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখার জন্যে মন্ত্রী প্রত্যেক নাগরিকের প্রতি আহŸান জানিয়ে বলেন, সাধারণত জমে থাকা পানির মধ্যেই চিকনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিশ মশা জন্মায়। জমে থাকা পানি অপসারণের মাধ্যমে এই রোগ দুটি থেকে নিজেদের রক্ষা করা সম্ভব। তিনি বলেন, চিকনগুনিয়া ও ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাগের কোনো আশংকা নাই। সরকার এক্ষেত্রে বরাবরের মতোই প্রস্তÍত। একই সঙ্গে মশা নিধনই এই রোগ প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় বলে উল্লেখ করেন।
সূত্র মতে, সাধারণত জুন-জুলাইয়ে বর্ষা মৌসুমে চিকুনগুনিয়ার প্রার্দুভাব দেখা দেয়। তবে চলতি বছরের শুরুতেই এবার প্রথমে এ রোগ দেখা দেয়। তখন ভয়াবহতা খুব একটা না ছড়ালেও চলতি মাসের শুরু থেকেই রাজধানীবাসী ফের চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। আর এবার প্রায় একই পরিবারের একাধিক সদস্য এই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষক ডা. মোস্তাফিজ ইনকিলাবকে বলেন, শহড় এবং উপ-শহড়গুলোতেই চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশি। ঢাকার বাইরে থেকে এখনো খুব একটা এ রোগের রিপোর্ট আসছে না। তবে এর আগে দোহার এবং রাজশাহীতে এই রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছিল। প্রতিদিনই আইইডিসিআরে চিকুনগুনিয়ার রিপোর্ট আসছে। তবে সঠিক পরিসংখ্যান জানাতে পারেননি ডা. মোস্তাফিজ।
রোগীদের প্রতিষেধক নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, রোগী প্রথম দশদিন কেবলই প্যারাসিটামল খাবে, আর কিছু না। কারণ প্যারাসিটামল ছাড়া অন্যসব ব্যথার ওষুধে শরীরের নানাবিধ ক্ষতি করে। তবে ১ সপ্তাহের বেশি সাধারণত জ্বর থাকে না। চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যু হয় না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাধারণত ভোগান্তিটাই বেশি হয় চিকুনগুনিয়ায়।’
রাজধানীতে বসবাসকারী দৈনিক মানবজমিনের সিনিয়র রিপোর্টার কাফি কামাল চিকুনগুনিয়াতে ভুগছেন অনেকদিন হলো। কাফি কামাল জানান, চিকুনগুনিয়াতে তার ১০৪ ডিগ্রি বা তার ওপরে জ্বর হয়। একই সঙ্গে শরীরের প্রত্যেক জয়েন্ট (গিঁট) ও মাংসপেশীতে অসহনীয় ব্যাথা, ব্যথার কারণে হাত পায়ের আঙুল ও জয়েন্ট ফুলে যায়। অসহ্য ব্যথার কারণে হাঁটতে খুব কষ্ট হয়, যার কারণে চলতে হয় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এছাড়া এতো ভয়াবহ এই জ্বর যে, প্রতিটি দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত পড়েছে। সারা গায়ে ছিল লাল র্যাশ। আর এসব র্যাশ প্রথমদিকে খুব চুলকায়। জ্বর সেরে যাওয়ার ২২ দিন হলেও এখনো তার শরীর ব্যাথা হচ্ছে। কাফি কামাল বলেন, প্রথম চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয় তার শ্যালিকা। এরপর তিনি। বর্তমানে তার স্ত্রী এ রোগে ভুগছেন। আরেক ভুক্তভোগী নুসরাত জাহান গত নভেম্বর থেকে চলতি মে মাস পর্যন্ত চিকুনগুনিয়াতে ভুগেছেন জানিয়ে বলেন, যত থেরাপিই দেওয়া হোক, এই ভয়াবহ ব্যথা অনেক মাস পর্যন্ত ভোগায়। হাত পা এত ফুলেছিল যে, আমার হাঁটাচলাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমি তো ভেবেছিলাম হুইল চেয়ার ছাড়া বোধহয় আর গতি নেই! চিকিৎসকরা জানান, এ রোগে অনেক সময় ব্যথায় শরীর বেঁকে যায় বলে স্থানীয়ভাবে এটাকে ‘ল্যাংড়া জ্বর’ বলেও অভিহিত করা হয়। এছাড়া মাথাব্যথা, গায়ের কোনও কোনও অংশে র্যাশ ওঠা চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ।
রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক মাহমুদুর রহমান বলেন, আপাতত এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। জ্বর ও মাথা ব্যথার চিকিৎসাতেই এ রোগ সেরে ওঠে। তবে মশার কামড় থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে। প্রফেসর ড. মাহমুদুর রহমান এ রোগের লক্ষণ হিসেবে বলেন, এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মাথাব্যথা, সর্দি, বমিবমিভাব, হাত ও পায়ের গিটে এবং আঙ্গুলের গিটে ব্যথা হতে পারে। এ ভাইরাস মশা থেকে মানুষের শরীরে আসে। আবার আক্রান্ত মানুষকে কামড় দিলে মশাও আক্রান্ত হয় এবং বাহক হিসেবে আবার মানবদেহে প্রবেশ করে। শুধু নারী এডিস মশার কামড়েই এই রোগ হতে পারে। সাধারণত মশায় কামড়ানোর ৫ দিন পর থেকে শরীরে লক্ষণগুলো ফুটে ওঠে বলে তিনি জানান। তিনি জানান, এবারই প্রথম দেখা যাচ্ছে এ জ্বর ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠছে। এজন্য জ্বর নিয়ন্ত্রণের জন্য সাধারণ প্যারাসিটামল ও গা মুছে দিতে হবে। বেশিদিন জ্বর থাকার কথা নয়। সাধারণত চার থেকে পাঁচদিন পর্যন্ত জ্বর থাকে। তারপর নেমে যাওয়ার কথা। তা না হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নিতে হবে।
জানা যায়, ২০০৫ সালে ভারতে চিকুনগুনিয়া ভয়াবহ রূপ নিলে আইইডিসিআর বাংলাদেশে জরিপ চালায়। তখন এ রোগে আক্রান্ত কোনও বাংলাদেশি পাওয়া যায়নি। পরে ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছিল। পরে ২০১১ সালে দোহার উপজেলায় এই রোগ দেখা যায়। তবে বিচ্ছিন্ন দু’একজন রোগী ছাড়া এ রোগে বড় ধরনের কোন বিস্তার লক্ষ্য করা যায়নি বাংলাদেশে। এ রোগটি প্রথম ১৯৫২ সালে আফ্রিকাতে দেখা যায়। পরবর্তীতে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন- ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, মায়ানমার এবং ইন্দ্রোনেমিয়াতে এর বিস্তার দেখা যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রফেসর ডা. সানিয়া তহমিনা বলেন, আমরা চিকুনগুনিয়ার চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়ে গাইডলাইন তৈরি করে বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠিয়েছি। তারা গাইডলাইন দেখে আমাদের ফিডব্যাক দেবেন। পরবর্তীতে সেই চিকিৎসা গাইডলাইন দেশের সব হাসপাতালের পরিচালক এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হবে। এদিকে আজ চিকুনগুনিয়া রোগ সম্পর্কে অবহিত করতে আইইডিসিআর এক জরুরী সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে। এছাড়া গতকাল সচিবালয়ে চিকুনগুনিয়া রোগ বিস্তার রোধে করণীয় সংক্রান্ত এক আলোচনা হয়। সভায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব সিরাজুল হক খান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রাণলয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।