Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সেনানিবাস এলাকায় ৪৩ অপরাধের জরিমানা বৃদ্ধি

মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদন

| প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম



স্টাফ রিপোর্টার : সেনানিবাস এলাকায় ৪৩টি অপরাধের জন্য আর্থিক জরিমানা বাড়ানো হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সেনানিবাস আইন, ২০১৬-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এতে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়া দেশের যে কোনো সেনানিবাস এলাকায় সড়কে মলমূত্র ত্যাগ, মাতলামি, ভিক্ষাবৃত্তি, জুয়া খেলার অপরাধে ২০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
গতকাল সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। ৯৩ বছর পর আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে। ১৯২৪ সালের সেনানিবাস আইনটি এত দিন পর্যন্ত বহাল ছিল।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সংবাদ ব্রিফিংয়ে সভার সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ সময় তিনি কয়েকটি ক্ষেত্রে জরিমানার কথা উল্লেখ করেন। এর মধ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দালান নির্মাণকাজ শেষ না করলে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
এছাড়া সেনানিবাস এলাকার রাস্তায় ট্রাফিক নির্দেশ অমান্য করলে জরিমানা ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে খসড়ায় সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা করার বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সেনানিবাস এলাকায় নিবন্ধন ছাড়া বেসরকারি বাজার বা কসাইখানা করলে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে কমপক্ষে তিন হাজার এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। এখন এটা আছে ৫০ টাকা। এভাবে সেনানিবাস এলাকায় অপরাধ সংঘটনের জন্য বিভিন্ন হারে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের আরো জানান, এ আইন নব্বই বছর আগের অর্থাৎ ১৯২৪ সালের। ৯০ বছর আগে যে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে সেই ফি এবং জরিমানা পরিবর্তন করা হয়েছে। এটা পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। মৌলিক ধারাগুলোতে শাস্তির বিধান পরিবর্তন করা হয়েছে। কিছু বিধান বাদ দিয়ে নতুন কিছু বিধানযুক্ত করা হয়েছে।
আগের আইনের ২৯২টি ধারা থেকে কিছু বাদ দিয়ে এবং নতুন কিছু সংযোজন করে মোট ২১৮টি ধারা রাখা হয়েছে এই খসড়ায়। বিভিন্ন অপরাধের জন্য জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে ২০ হাজার গুণ পর্যন্ত। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকা এক ধরনের পৌর ব্যবস্থাপনার মত। অর্থাৎ পৌরসভা যেভাবে তাদের এলাকা ম্যানেজ করে, এটাও সেভাবে ম্যানেজ করবে। বোর্ডের কার্যক্রম কেমন হবে তা এই আইনে বলা আছে। ৯০ বছর আগে যেসব জরিমানা নির্ধারণ করা ছিল সেগুলোর পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। ৪৩টি বিষয়ে আর্থিক জরিমানার বিধান বাড়ানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘৯০ বছর আগে এ আইনের ৯১ ধারায় যেখানে ফি ছিল ১ টাকা, সেখানে বৃদ্ধি করা হয়েছে ১০ হাজার টাকা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,সেনানিবাস এলাকায় আতশবাজি বা আগ্নেয়াস্ত্র ফাটালে ৫০ টাকা জরিমানার বিধান সংশোধন করে সর্বনিম্ন তিন হাজার এবং সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে।
শফিউল আলম বলেন, এর আগে দালানকোঠা নিরাপত্তা বিধানের ক্ষমতা নির্দিষ্ট শাস্তি ছিল না। এটি নতুন করে এ আইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, সর্বনিম্ন তিন হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা।
এছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাংলাদেশ এবং সান ম্যারিনো মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য একটি চুক্তি এর খসড়ার অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয় বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, সান ম্যারিনো একটি উন্নত দেশ। তারা ১৯৮২ সালে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। তাদের সঙ্গে ২০০৮ সাল থেকে আমাদের সম্পর্ক স্থাপনের কাজ শুরু হয়। চলতি বছরে এসে চূড়ান্ত হয়।
সান ম্যারিনোর সাথে বাংলাদেশে কূটনৈতিক সম্পর্ক
এদিকে গতকাল সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ইউরোপের ছোট দেশ সান ম্যারিনোর সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের একটি চুক্তির খসড়া অনুসমর্থন দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, এ দেশটি (সান ম্যারিনো) খুব বেশি পরিচিত নয়। এটা ইটালির মধ্যে একটা ছোট দ্বীপের মতো দেশ। কিন্তু এটা অনেক পুরনো দেশ। এটা ২ হাজার বছরের কাছাকাছি বয়সের একটা দেশ। এটা ১৯৯২ সালে জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,  দেশটির আকার ৬১ দশমিক ২ বর্গকিলোমিটার মাত্র। এটা জনসংখ্যা ৩০ হাজার। এদেশের মাথাপিছু আয় ৫৫ হাজার ৪৪৯ মার্কিন ডলার। ইউরোপের কোনো কোনো দেশের চেয়ে বেশি। এদেশের ৪০ শতাংশ শিল্প, ৬০ শতাংশ হচ্ছে সেবা খাত। এদের ১ শতাংশের মতো কৃষি থেকে আসে। এটা খুবই উন্নত একটা দেশ। জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে এই দেশের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক হতে পারে। কিন্তু তাদের সংবিধানে একটি প্রভিশন আছে, যে  দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে, ফরমালি (আনুষ্ঠানিকভাবে) করতে হবে, বাই-ল্যাটারাল (দ্বিপাক্ষিক) করতে হবে।
শফিউল আলম বলেন, আমাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য তাদের (সান ম্যারিনো) চুক্তি আমাদের দিয়েছে। এখন আমাদের মন্ত্রিসভা সেটাকে অনুসমর্থন দিল। এখন দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন হবে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন হলে বড় সুবিধাটা হল- যখন ভোটাভুটির বিষয় হয়, ভোটের সঙ্গে ছোট দেশগুলো আমাদের ভাল সমর্থন দেয়। এজন্য আমাদের সাপোর্টার হিসেবে কাজে লাগবে। সান ম্যারিনোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে চুক্তির প্রক্রিয়া ২০০৮ সাল থেকে শুরু হয়ে তা ২০১৭ সালে অনুমোদন পেল। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কূটনৈতিক সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশের বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা। তিনি বলেন, ইউরোপের সার্ভিস সেক্টরে এদের প্রভাব অনেক বেশি। এদের ইন্ডাস্ট্রিও ভাল। আমরা লাভবান হওয়াটাই খুব স্বাভাবিক। আমাদের শিল্পের আমদানি রফতানি দুটোই হতে পারে।
নেপ মহাপরিচালক ফজলুর রহমানের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভার শোক
বৈঠকের শুরুতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির (নেপ) মহাপরিচালক মো. ফজলুর রহমানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভা আমাদের একজন সহকর্মী মো. ফজলুর রহমানের মৃত্য্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। ফজলুর রহমান জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির মহাপরিচালক (যুগ্ম-সচিব) ছিলেন। তিনি গত ১৩ মে খাগড়াছড়ি যাওয়ার পথে চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিঊন)। মন্ত্রিসভা তার ইন্তেকালে শোক প্রকাশ করেছে। শোকসস্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মন্ত্রিসভা

১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ