Inqilab Logo

রোববার, ০৯ জুন ২০২৪, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চৌদ্দগ্রামে প্রাথমিক বৃত্তিতে কোটা জালিয়াতি মেধাবী শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত

| প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সংবাদদাতা : কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা শিক্ষা অফিসার ফাতেমা নাসরিনের বিরুদ্ধে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণের মাধ্যমে পৌরসভার ওয়ার্ড কোটা জালিয়াতি করে অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে অন্তত ৩০টি বৃত্তি অন্য ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত হয়েছে। এনিয়ে ভূক্তভোগী শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। প্রাথমিকের কোমলমতি শিশুদের মেধার স্বীকৃতি নিয়ে এ ছিনিমিনিকে নজিরবিহীন উল্লেখ করে অভিযোগটির তদন্তসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
জানা গেছে, ২০১৬ শিক্ষাবর্ষে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সম্প্রতি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। এ পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সারা দেশে সর্বমোট ৩৩ হাজার ট্যালেন্টপুল এবং সাড়ে ৪৯ হাজার সাধারণ বৃত্তি ঘোষণা করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। উপজেলার আওতাধীন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি নির্ধারণ করা হয়। মেধাক্রম অনুযায়ী সকল বৃত্তির ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ের হার সমান। ট্যালেন্টপুল বৃত্তি বিতরনের পর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ৩ জন ছাত্র এবং ৩ জন ছাত্রী অর্থাৎ মোট ৬ জন শিক্ষার্থী সাধারণ কোটায় বৃত্তি পাবে। পৌরসভার ক্ষেত্রে প্রতিটি ওয়ার্ড এক একটি ইউনিয়নের সমান অর্থাৎ ৬টি করে বৃত্তি পাবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সমাপনী পরীক্ষার ডিআর জালিয়তির মাধ্যমে শিক্ষা অফিসার ফাতেমা নাসরিন ১নং ওয়ার্ডে স্কুল দেখিয়েছেন ৫টি। অর্থাৎ সোনাকাটিয়া, নবগ্রাম ছাড়াও নাটাপাড়া, রামরায়গ্রাম এবং প্রি-ক্যাডেট স্কুল তিনটি কেডিআর এ ১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভূক্ত উল্লেখ করেছেন। পরিপত্র মোতাবক ১নং ওয়ার্ডের সোনাকাটিয়া ও নবগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোট ৬টি সাধারণ বৃত্তি থাকার কথা থাকলেও বৃত্তির গেজেট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এ দু’টি ওয়ার্ডে যোগ্যতম শিক্ষার্থী থাকা সত্তে¡ও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি দেয়া হয়েছে মাত্র ৪টি। জালিয়াতির মাধ্যমে ১নং ওয়ার্ডে আরো ৩টি স্কুল অন্তর্ভূক্ত করায় এ ওয়ার্ডের বৃত্তি চলে যায় একই পৌরসভার ৯ ওয়ার্ডের নাটাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১টি এবং ৭নং ওয়ার্ডের প্রি ক্যাডেট স্কুলে ১টি। পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডে স্কুল রয়েছে ২টি। সেগুলো হলো, নাটাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। একই কায়দায় পরীক্ষার ডিআরএ নাটাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ওয়ার্ড কোডের জায়গায় ৯নং ওয়ার্ডের পরিবর্তে ১নং ওয়ার্ড লিখায় ৯নং ওয়ার্ডে বিদ্যালয় থাকে মাত্র ১টি। এ কারণে নোয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ৯নং ওয়ার্ডের একমাত্র বিদ্যালয় হিসেবে ওয়ার্ড কোটার ৬টি বৃত্তিই পেয়ে যায় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
অপরদিকে ৭নং ওয়ার্ডের চৌদ্দগ্রাম প্রি-ক্যাডেট স্কুলের ওয়ার্ড নং ১ দেখানোর কারনে বিদ্যালয়টি তার ওয়ার্ডে প্রতিযোগীতা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় এবং ১নং ওয়ার্ডের একটি বৃত্তি প্রি ক্যাডেট স্কুলে চলে যায়। আবার ৭নং ওয়ার্ডের জয়ন্তীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে ৩নং ওয়ার্ডের শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে যুক্ত করায় জয়ন্তীনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় অর্থাৎ ৭নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড কোটার ৩টি বৃত্তি অন্যত্র চলে যায়। জালিয়াত চক্রের এ কৌশলে ৭নং ওয়ার্ডের কোমলমতি মেধাবী শিশুরা তাদের নির্ধারিত ওয়ার্ড কোটার ৩টি বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হয়। চৌদ্দগ্রাম পৌর এলাকার ৩নং ওয়ার্ডে স্কুল রয়েছে ২টি। জালিয়াত চক্রটি ওই ওয়ার্ডের শ্রীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির ডিআর শীটে ওয়ার্ড নম্বর ৩ নং লিখে জালিয়াতির মাধ্যমে ৭ নং লিখায় ৩ নং ওয়ার্ডে স্কুল থাকে মাত্র ১টি। ফলশ্রæতিতে ৩ নং ওয়ার্ড কোটার ৬ টি বৃত্তিই চলে যায় এ ওয়ার্ডের দুর্বল পারফরমেন্সের প্রতিষ্ঠান কাজী সিরাজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিকট। ৮ নং ওয়ার্ডের স্কুল ৩ টি হচ্ছে, গোমারবাড়ি সরকারি প্রাথামক বিদ্যালয়, রামরায়গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং আদর্শ কিন্ডার গার্টেন। রামরায়গ্রাম স্কুল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭টি, গোমার বাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পেয়েছে ২টি এবং আদর্শ কিন্ডার গার্টেন থেকে পেয়েছে ১টি। ডিআরএ ওয়ার্ড জালিয়তি করে রামরায়গ্রাম স্কুলকে ১নং ওয়ার্ডে দেখানোর কারনে ৭টি জিপিএ-৫ থাকা সত্তে¡ও ওয়ার্ড কোটার কোন বৃত্তি পায়নি। রামরায়গ্রাম স্কুল বাদপড়ায় ৮ নং ওয়ার্ড কোটার ৬ টি বৃত্তির মধ্যে ১ টি পায় আদর্শ কিন্ডার গার্টেন এবং ৫ টি পায় গোমারবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফলাফল পর্যালেচনায় দেখা গেছে, রামরায়গ্রাম স্কুলটি তার নিজ ওয়ার্ডে অর্থাৎ ৮ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিযোগীতা করার সুযোগ পেলে ওয়ার্ড কোটার কমপক্ষে ৪টি বৃত্তি পেত।
ওয়ার্ড জালিয়াতির কবলে ক্ষতিগ্রস্থ স্কুলগুলোর শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট সকলেই এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন। এ ব্যাপারে পৌরসভার জয়ন্তীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব সোলাইমান কোম্পানী বলেন, ‘আমাদের স্কুলটি ৭নং ওয়ার্ডে অবস্থিত। স্কুলটি প্রতি বছরই বৃত্তিতে ভালো ফলাফল অর্জন করে। কিন্তু এবার বৃত্তির গেজেটে দেখি স্কুলটিকে ৩ নং ওয়ার্ডে দেখানো হয়েছে। ফলে আমার স্কুল থেকে তিনটি বৃত্তি দেখানো হয়েছে, যা রহস্যজনক। এ অনিয়মের সাথে যারা জড়িত তিনি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন’।
৭নং ওয়ার্ডে অবস্থিত চৌদ্দগ্রাম প্রি-ক্যাডেট স্কুলের সভাপতি সাহাব উদ্দিন জানান, বৃত্তির ফলাফলে কিভাবে একটি স্কুলের ফলাফল পরিবর্তন করা যায়? গেজেটে আমার স্কুলকে ১ নং ওয়ার্ডে দেখানো হয়েছে। ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা নাসরিনের বক্তব্য জানতে বুধবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ