Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

হাটহাজারীতে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মাছ কাটুয়া পেশা

| প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আসলাম পারভেজ, হাটহাজারী : সংসার-পরিবার পরিচালনার জন্য মানুষ যে কোনো কিছুকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। কেউ চাকরি কেউ কৃষি কাজ কেউ বা ব্যবসা কেউ বা শ্রম বিক্রিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। প্রত্যক ধর্মে বৈধভাবে কোনো কাজ করে অর্থ উপার্জনের কথা বলা আছে। এরকম একটি ছোট পেশা মাছ কাটুয়া। নগরে-শহরে গ্রামে বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে মাছ বাজার ও বাজারের আশেপাশে দেখা যায় কিছু লোককে মাছ কাটতে। স্থানভেদে বেশ কয়েকজন লোক দা ও ছুরি মাছ কাটার ধারালো জিনিসপত্র সরঞ্জাম নিয়ে বসে থাকেন। মাছ ক্রেতা দেখলে তারা কিংবা তাদের সাথে লোকজন ক্রেতার পিছনে গিয়ে মাছ কাটাবেন কিনা জিজ্ঞাসা করেন। কিংবা মাছ বিক্রেতারা পরিচিত ক্রেতাকে দেখিয়ে দেন। মাছ কাটুয়ারাদের একসময় বিশেষ করে অতীত সময় এনালগ দিনে বাজার থেকে মাছ-মাংস ক্রয় করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হত। ঘরের মহিলা কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে পুরুষেরা বাজার থেকে ক্রয় করা মাছ পরিষ্কার করে টুকরো বা পিস করতেন। রান্নার উপযোগী করার জন্য একইভাবে মাংসও টুকরো ও পিছ করতেন। গ্রামে কোনো পরিবার বাজার থেকে মাছ-মাংস আনলে প্রতিবেশীরা কাটতে সাহয্য করতেন স্বেচ্ছায় গিয়ে। এমনকি মাছ-মাংস কাটার দা-ছুরিও নিয়ে যেতেন অন্যকে সহযোগিতা করতে কোনো বিনিময় ছাড়া। বিয়ে-সাদী ও খানা মেজবানীর অনুষ্ঠান হলে তো কথাই ছিল না। সমাজের সর্দার পাড়ার মুরব্বিদের আদেশ, নির্দেশ ও পরামর্শক্রমে অপেক্ষাকৃত পারদর্শী লোকজনকে মাছ-মাংস কাটার দায়িত্ব দেয়া হত। যার জন্য কাজ করতেন তিনি তাদের জন্য চা, পান-সুপারি ও তামাক খাওয়ার ব্যবস্থা করতেন। ক্রমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে লোকজন পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণ চালানোর জন্য সংগ্রামমুখর হয়ে ওঠেছেন। ইচ্ছা থাকলেও ক্ষেত্র বিশেষ অন্যর কাজে সহযোগিতা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাছাড়া মানুষজন কর্মের তাগিদে লোকজন দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। অথবা কেউ কেউ সন্তানদের লেখাপড়া করে উন্নত জীবন পরিচালনা করতে বাসা-বাড়িতে গিয়ে ওঠেছেন। বাসা-বাড়িতে গ্রামের মতো কোনো খোলামেলা জায়গা নেই। নির্দিষ্ট একটি গÐির মধ্যে তাদের বসবাস করতে হয়। সেখানে গ্রামের অনেক কিছুর সুযোগ থাকে না। এমনকি আবর্জনা ফেলার তেমন ব্যবস্থাও ক্ষেত্র বিশেষে থাকে না। আবার অনেকে স্বল্প আয় করে বলে পরিবার পরিজন নিয়ে বাসা বাড়িতে থাকতে পারেন না। তাদের একাকী বাসাতে থাকতে হয়। সাড়া দিনের ব্যস্ততা শেষে বাসায় এসে মাছ-মাংস এনে কাটা-ছিড়া করা কষ্ট সাধ্য হয়ে পড়ে। ময়লা আবর্জনা ফেলানোর কিংবা মাছ-মাংস কাটার সময় না থাকায় আবার বাসায় অবস্থানকারীদের পরিশ্রম কম করতে প্রায় সময় বাজার থেকে মাছ-মাংস ক্রয় করে বাড়ি কিংবা বাসায় নিয়ে যেতে হয়। বিয়ে-শাদির অনুষ্ঠান হলে তো কথাই নেই। রান্নার কাজের জন্য বাবুর্চি দেওয়া হলেও তারা মাছ-মাংস কাটতে চান না। তাদেরকে মাছ-মাংসের টুকরা করে না দিলে তারা রান্না করতে অনেক সময় অপারাগতা প্রকাশ করেন। মানুষের এই প্রয়োজন দেখে ও চাহিদা হওয়ার কারণে হাট বাজারে মাছ গোশত কাটুয়াদের প্রয়োজনীয়তাও দেখা দিয়েছে। আবার অনেক সময় বৌ-ঝিরা লেখাপড়ার দিকে সচেতনতার কারণে মনোপযোগী হয়ে পড়ায় অনেকে পারিবারিক ও গৃহস্থলি কাজে মনোযোগী হতে পারছেন না। ফলে অনেক পরিবারে অনেক বৌ-ঝিরা নিয়ম মাফিক মাছ-মাংসের টুকরা বা পিছ করে কেটে নিতে বাধ্য হয়। ফলে প্রতি বছর অভ্যাস থাকায় কোরবানির ঈদের সময় মাংস কাটতে গিয়ে হাত কেটে ফেলার কথাও শুনা যায়। ইদানিং দেখা যায় মুরগীর দোকানে বিদ্যুৎতের সাহয্যও জবাই করা মুরগীর পালক পরিষ্কার করার দৃশ্য। পালক পরিষ্কার করে কাটুয়াদের টুকরা ও প্রয়োজনমাফিক পিস করা হয়। মানুষের চাহিদার কারণে মাছ ও মাংস কাটুয়া পেশা ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। এতে করে বাসা বাড়িতে নিয়ে মাছ-মাংস কাটার ঝামেলা যেমন কমছে তেমনি উচ্ছিষ্ট ও আবর্জনার ফেলার কষ্ট লাগব হয়েছে। অপর দিকে চাহিদার কারণে এই পেশার দিকে মানুষ বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠেছে। এতে করে লোকজনের বৈধ পথে আয়ের মানসিকতা সৃষ্টি হচ্ছে। অনেকে এই পেশায় জড়িত হয়ে আয় রোজগার করে সংসার ও পরিবার পরিজন ভালো ভাবে চলছে বেকার সমস্যা সমাধান হচ্ছে। মাছ মাংসের বৈর্জ্য এক সাথে করে রাখতে পারলে জৈব সার তৈরীর পথ সৃষ্টি হবে। এতে করে রাসায়নিক সারের ব্যবহার ক্রমে মানুষ জৈব সারের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি ফেলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। বাসা বাড়ির ময়লা আবর্জনা ফেলার জামেলা থেকে মানুষ মুক্ত হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ