Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীতাকুন্ডে প্রথম চাষেই ভুট্টার বাম্পার ফলন

| প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড থেকে : ভুট্টা চাষের কথা কখনোই ভাবেননি কৃষক রফিকুল আলম। কারণ, ভুট্টা চাষের কোন অভিজ্ঞতাই তার ছিলো না। তাছাড়া তার এলাকায় আগে কেউই ভুট্টা চাষ করেননি। ফলে এ ফসল চাষ করে আদৌ সফল হওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে অনেক সংশয় ছিলো। কিন্তু তার সব ভুল ভেঙে দেন কৃষি কর্মকর্তা মিত্রা বিশ্বাস। তিনি তাকে ভুট্টা চাষ করতে শুধু উৎসাহিতই করেননি, কিভাবে ভুট্টা চাষ করতে হয় সে পরামর্শ দেওয়া থেকে শুরু করে কৃষি বিভাগ থেকে বীজ, সারসহ বিভিন্ন সহযোগিতা দিয়ে উদ্ভুদ্ধ করেন। ফলে প্রথমবার পরীক্ষামূলক ভুট্টা চাষ করেই সফল হয়ে যান এ কৃষক। কৃষক রফিকুল আলমের বাড়ি সীতাকুÐের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ঘোরামারা গ্রামে। বাড়ির পাশেই ভুট্টা চাষ করেছেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে রফিকুল আলমের ভুট্টা চাষের খবর জেনে সরেজমিনে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তার সুদীর্ঘ ক্ষেতে শুধু ভুট্টা আর ভুট্টা। প্রায় ৮ ফুট লম্বা প্রতিটি ভুট্টা গাছেই ফলন হয়েছে। একেকটি গাছে ২থেকে ৪টি পর্যন্ত ভুট্টা দেখা গেছে। সবুজ গাছে হালকা হলদে ভুট্টাগুলো প্রকৃতিকে যেন এক অপরুপ সুন্দর রঙে সাজিয়ে দিয়েছে। ক্ষেতেই কথা হয় সফল এ ভুট্টা চাষীর সাথে। কৃষক রফিকুল আলম প্রতিবেদককে বলেন, চাষাবাদের সাথে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত থাকলেও কখনো ভুট্টা চাষ করব এটা ভাবিনি। কারণ, ভুট্টা চাষের কোন ধারণাই আমার ছিলো না। কিন্তু গত বছরের ডিসেম্বর মাসে একদিন হটাৎ-ই ফোন করেন ঘোড়ামারা বøকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিত্রা বিশ্বাস। তিনি আমাকে ভুট্টা চাষের জন্য প্রস্তাব দেন এবং বলেন, আমার জমিতে একটি ভুট্টার প্রদর্শনী কেন্দ্র করলে কৃষি অফিস সার্বিক সহযোগিতা করবে। সংশয় থাকলেও তার কথায় সাহস পেয়ে রাজি হয়ে যাই। পরে কৃষি অফিস থেকে ৪কেজি বীজ, ৬২ কেজি সার ও পরিচর্যার জন্য এক হাজার টাকা পাঠানো হয়। ২০ ডিসেম্বর আমার ৫০ শতক আয়তনের জমিতে প্রদর্শনীর জন্য সুপার সাইন ২৭৬০ প্রজাতির ভুট্টা বপন করেছি। তারপর কৃষি কর্মকর্তা মিত্রা বিশ্বাস ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ মত নিয়মিত পরিচর্যা করতে থাকি। মাঝে পোকার উপদ্রবও হয়েছিলো। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে ক্ষেত এখন পোকার উপদ্রব মুক্ত হয়েছে। তিনি বলেন, নিজে পরিচর্যা করার পাশাপাশি মাঝে মাঝে মজুর দিয়েও কাজ করাই। নিবিড় পরিচর্যায় গাছগুলো বড় হতে থাকে। বর্তমানে প্রতিটি গাছেই ভুট্টার ফলন আছে। কৃষক রফিকুল আলম আরো বলেন, এখন ফলন তোলার সময় হয়ে এসেছে। আগামী ২০/২৫ দিনের মধ্যেই ভুট্টা তোলা যাবে বলে ধারনা করছি। তিনি বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে বীজ, সার ও অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়ার পরও আমার নিজ থেকে আরো ২০ হাজার টাকার মত খরচ হয়েছে। তবে যা ফলন হয়েছে তাতে লাভের ব্যাপারে আমি আশাবাদী। তিনি বলেন, আগে এ এলাকায় রাঙামাটি, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ভুট্টা এনে বিক্রি করত ব্যবসায়ীরা। আমাদের এ ভুট্টা প্রথমে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে চাহিদা পূরণ করা হবে। পরে অতিরিক্ত থাকলে অন্যত্র রপ্তানি করব। বাজারে প্রতিটি ভুট্টা খুচরা মূল্যে ১৫/১৬ টাকায় বিক্রি হয়। এ মূল্যে বিক্রি হলে কৃষকরা অবশ্যই লাভবান হবেন বলে তিনি মনে করেন।
একই এলাকা অর্থাৎ ঘোড়ামারার অপর এক কৃষক নুরুল আবচারও এবার ভুট্টা চাষ করেছেন। বাম্পার ফলন হয়েছে তার জমিতেও। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষক নুরুল আবচার বলেন, কৃষি বিভাগ ভুট্টা চাষে পরামর্শ ও সহযোগিতা দেবে জেনে আমিও ১৪ শতক জমিতে ভুট্টার চাষ করেছি। এ জমিতে দেড় কেজির মত বীজ বপন করা হয়েছে। এছাড়া সার, কীটনাশক, শ্রমিক মজুরিসহ অন্যান্য মিলিয়ে আমার ৭/৮ হাজার টাকার মত খরচ পড়েছে। তিনিও প্রথম দিকে ফলন কেমন হবে তা নিয়ে সংশয়ে থাকলেও পরে প্রতিটি গাছে ভুট্টা দেখে। এখন তার মনে হচ্ছে সব কষ্টই সার্থক হয়েছে।
তবে কৃষক রফিকুল আলম এবং নুরুল আবচার দু’জনই দাবী করেন আবাহাওয়া, প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকূলে থাকলেও ভুট্টাচাষের পর্যাপ্ত পানি ঐ এলাকায় নেই। ফলে বাইরে থেকে পানি এনে ক্ষেতে দিতে গিয়ে খরচ কিছুটা বেড়ে গেছে। কিন্তু মধ্যখানে কিছু বৃষ্টি হওয়ায় তাদের পানি সংকট কমেছে। নইলে পানির জন্য আরো অনেক কষ্ট করতে হতো। তারা দাবী করেন ঘোড়ামারা এলাকায় ক্ষেতে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হলে ভুট্টাচাষীরা যেমন উপকৃত হবে তেমনি উপকৃত হবেন অন্য চাষীরাও। তাদের দাবী যে মিথ্যা নয় তা স্বীকার করেন ঘোড়ামারা বøকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিত্রা বিশ্বাস ও সোনাইছড়ি বøকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন কৃষি কমিটির সদস্য সচিব হাবীবুর রহমান। মিত্রা বিশ্বাস বলেন, সরকারী প্রদর্শনীর জন্য কৃষক রফিকুল আলম, জসীম উদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ আলমের জমিতে ভুট্টার চাষ করেছেন। এছাড়া তাদের দেখাদেখি আরো কৃষক ভুট্টাচাষ করেছেন। আমরা সবাইকেই পরামর্শ ও কৃষি উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করেছি। আমাদের পরামর্শ মেনে চাষ করায় সব জমিতে বাম্পার ফলন হয়েছে। যা ফলণ হয়েছে তা তোলা হলে হেক্টর প্রতি ৭/৮ টন হবে বলে তিনি ধারণা করছেন। তিনি বলেন, ভুট্টার কোন অংশই ফেলার নয়। ভুট্টা যেমন খাবার হিসেবে বিক্রি হয় তেমনি এর থেকে পাওয়া বিভিন্ন অংশ, গো-খাদ্য, মুরগির খাদ্য, জ্বালানিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। ফলে যারা ভুট্টার চাষ করছেন সবাই লাভবান হবেন। এদিকে এ দুই কৃষক ছাড়াও সীতাকুÐের বারৈয়াঢালা, সৈয়দপুর, রহমতনগর, বাড়বকুÐ ও ঘোড়ামরায় এবার আরো ১৬ জন কৃষক সাড়ে ৭ একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন জানিয়ে সীতাকুÐের উপ-সহকারী কৃষি ও উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র নাথ প্রতিবেদককে বলেন, কৃষকদের চেষ্টা ও আমাদের আন্তরিকতায় প্রথম চাষেই বাজিমাত করেছেন কৃষকরা। তাদের এ ফলন দেখে আগামী দিনে আরো বহু কৃষক ভুট্টা চাষে এগিয়ে আসবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ