পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিজানুর রহমান তোতা : ফারাক্কার ধাক্কা আর সহ্য করাতে পারছে না গঙ্গানির্ভর সব নদ-নদী। বছরের পর বছর ধরে ধাক্কা খেয়ে এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছে। নদ-নদীর কাহিল অবস্থার কারণে মারমুখী ও বিপজ্জনক হচ্ছে সার্বিক পরিবেশ। পরিবেশবিগণ বলেছেন, আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে দ্রæত। পরিবর্তন ঘটছে ষঢ়ঋতুর। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন আরো হুমকির মুখে। দেশের বৃহত্তম গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের (জিকে প্রজেক্ট) অস্তিত্ব বিপন্ন। মাইলের পর মাইল ক্যানেল পানিশূন্য। খাঁ খাঁ করছে, দেখলে যে কারোর চোখ দিয়ে পানি আসবে। মংলা সমুদ্রবন্দর ও নওয়াপাড়া নদী বন্দর মারাত্মক সংকটে। যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়াসহ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি, উদ্ভিদ, প্রাণীকুল, জলজ, বনজ ও মৎস্য সম্পদের অপুরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। লবনাক্ততা গ্রাস করায় ক্রমেই উপকুলীয় বিস্তীর্ণ এলাকা হচ্ছে বিরাণভূমি। মরুকরণ প্রক্রিয়া হচ্ছে মারাত্মক। নদীর প্রবাহ বন্ধ হওয়ায় পলি জমে ভারট হয়ে জলবায়ুর পরিবর্তন ছাড়াও ভূমি গঠনের পরিবর্তন ঘটছে। বাড়ছে ক্রমাগতভাবে সমুদ্রে পানির উচ্চতা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, নদ-নদীতে পানি প্রবাহ না থাকায় পলি জমে ভরাট হচ্ছে। প্রতিমুহূর্তে খেসারত দিতে হচ্ছে নানাভাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীকে। ভূপৃষ্ঠের পানি স্বল্পতায় মাটিরতলার পানি সম্পদ হচ্ছে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এসব কিছুই মরণ বাঁধ ফারাক্কার ধাক্কায় ঘটছে। কৃষি ও নদী বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র এই তথ্য চরম উদ্বেগ করে বলেছে, নদী বাঁচানোর কোন পরিকল্পনা নেই। সুত্র জানায়, ভারত ১৯৭৫ সালে ফারাক্কা ব্যারেজ চালু করে মাত্র ৪০ দিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে। পরবর্তীতে ওই বাঁধ স্থায়ী হয়। দিনে দিনে তা পরিণত হয় মরণ বাঁধে। ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে ভারত পানি প্রত্যাহার করে ভাগীরথী নদীর প্রবাহ বৃদ্ধি করে কলকতা বন্দরকে রক্ষা করে। আন্তর্জাতিক নদীর পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার নীতি ও আইন বিরুদ্ধ। অনেক দেন দরবারের পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেব গৌড়ার মধ্যে দীর্ঘ প্রত্যাশিত ঐতিহাসিক গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তারপরেও দেশ ন্যায়্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে।
ধীরে ধীরে এখন পদ্মা ও পদ্মার শাখা নদগুলো মৃতপ্রায় অবস্থায়। নদীদেহের অন্যতম হৃদপিন্ড পদ্মা এখন স্পন্দনহীন প্রায়। পদ্মার বুকে শুরু হয়েছে হাহাকার। পদ্মার শাখা-প্রশাখার উৎসমুখ গড়াইয়ে পানি গড়িয়ে আসছে না পদ্মা থেকে। যার কারণে ক্রমাগতভাবে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে নদী বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদরা জানিয়েছেন। পদ্মাপাড়ের বাসিন্দা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার আজগর আলী ও বরকত উল্লাহ দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ‘এভাবে বিশাল পদ্মা শুকিয়ে যাবে কখনোই কল্পনাও করিনি। এর জন্য ভারতই দায়ী। অথচ কোন প্রতিবাদ করতে পারি না আমরা। পদ্মাপাড়ের বালুর স্তুপ দেখিয়ে তারা জানালেন পদ্মার বুক থেকে বালু উত্তোলন করে এখন অনেকে ব্যবসা করে। নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ায় বর্ষা হলেই নদপাড়ের মানুষকে ডুবিয়ে দেয়। আর শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য পড়ে হাহাকার’।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, মানুষের জীবন, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, সভ্যতা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের সাথে বলিষ্ঠ ও নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে নদ-নদীর। রক্তের শিরা-উপশিরার মতো বাংলাদেশের নদী ধাবমান। নদীই জীবন। নদী বাঁচলে মানুষ বাঁচবে। মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার পানি প্রাপ্তি। নদ-নদী বাঁচানো, জীবন-জীবিকার সমস্যার সমাধান এবং সামগ্রিক উন্নয়নে নদ-নদী বাঁচানোর বিকল্প নেই। কিন্তু সেটি সম্ভব হচ্ছে না ফারাক্কা ও মিনি ফারাক্কার কারণে। দেশের ৩৭ শতাংশ এলাকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য নির্ভরশীল পদ্মা ও গড়াইএর শাখা নদী মাথাভাঙ্গা, গড়াই, ইছামতি, ভৈরব, আপার ভৈরব, কুমার, মধুমতি, ফটকি, বেতাই, চিত্রা, কপোতাক্ষ, নবগঙ্গা ও অভিন্ন নদী ইছামতি ও কোদলাসহ অর্ধ শতাধিক নদ-নদীর অবস্থা শোচনীয়। শুকিয়ে মুমূর্ষ খালে পরিণত হয়েছে। কোথাও স্রোতহীন, কোথাও পানিশূন্য অবস্থা। নদ-নদীর পানি বঙ্গোপসাগরে পড়ার স্বাভাবিক ধারা হয়েছে অস্বাভাবিক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নদী ভাঙনে উদ্বাস্তু হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানীদের মতে, নদ-নদীর প্রবাহ বিঘœতা ও সমুদ্রের পানির উচ্চতা জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটায়। জলবায়ু ও ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তনে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতিবছর উপকুলীয় অঞ্চলে জানমালের ক্ষতি হচ্ছে।
পৃথিবীর অনন্য সম্পদ সুন্দরবনের বনভূমি বিপদের আশংকা কাটছে না। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলসহ বিশাল এলাকার অপুরণীয় ক্ষতি হচ্ছে অভিন্ন নদী শাসনে। বাস্তব অবস্থাটা হচ্ছে, স্রোতহীন নদীর পানি একরকম চুইয়ে পড়ার মতো অবস্থার কারণে সামগ্রিক ক্ষতি হচ্ছে। বেশ আগে থেকেই বঙ্গোপসাগরের সাথে যুক্ত সুন্দরবনের নদ-নদীর পানির প্রবল তোড় নেই। ভাটি অঞ্চলের নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশের জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে দ্রুত একথাটি সবাই স্বীকার করলেও ফারাক্কার মরণ বাঁধের কারণে যে এটি ঘটছে তা ভারতের চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয়ার মতো ভুমিকা রাখার ক্ষেত্রে বরাবরই অনুপস্থিত থাকছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।