Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পুরান ঢাকায় বেপরোয়া উঠতি বয়সী সন্ত্রাসী

ডাকাত শহীদ, কচি, সহিদ কমিশনার, কালা আমীর, বিল্লøাল ডাকাতের সহযোগীরা তৎপর : চলছে চাঁদাবাজি দখলদারিত্ব ও মাদক ব্যবসা

| প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : পুরান ঢাকায় কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের সহযোগিরা তৎপর। প্রকাশ্যে চলছে চাঁদাবাজি; দখলদারিত্ব ও মাদক ব্যবসা। এক সময়ের কুখ্যাত সন্ত্রাসীরা উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে পরোক্ষভাবে তাদের রাজত্ব বহাল রেখেছে। হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের মধ্যে রয়েছে বিদেশে পলাতক কচি, সহিদ কমিশনার, কালা আমীর, সানাউল্লাহ ও বিল্লাল ডাকাত। র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত ডাকাত শহীদের গ্রæপও সক্রিয় হয়েছে। ভুক্তভোগিরা জানান, এক সময় যারা সরাসরি ডাকাত শহীদের সহযোগী ছিল তারাই উঠতি বয়সী একাধিক সন্ত্রাসী গ্রæপ গঠন করে মাঠে নামিয়েছে। এই উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীরাই চাঁদাবাজি ও প্রকাশ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুরান ঢাকার শ্যামপুর থেকে সুত্রাপুর পর্যন্ত এখনও শীর্ষ সন্ত্রাসী কচি গ্রæপের নিয়ন্ত্রণে। কচির সেকেন্ড ইন কমান্ড মুহিত উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীদের একাধিক গ্রæপ পরিচালনা করে। এর মধ্যে চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের জন্যে এবং মাদক ব্যবসার জন্য পৃথক গ্রæপ আছে। আরসিন গেট এলাকার এক ভুক্তভোগি ব্যবসায়ী নাম গোপন করে জানান, কচি গ্রæপ এতোটাই ভয়ঙ্কর যে তারা একবার টার্গেট করলে মোটা অংকের চাঁদা না দিয়ে কোনো উপায় থাকে না। পুরাতন ব্যবসায়ীদের তো বটেই, নতুন করে কেউ এই এলাকায় ব্যবসা করতে এলেও কচি গ্রæপকে চাঁদা দিতে হয়। অভিযোগ রয়েছে, কচি গ্রæপের সাথে হাত মিলিয়ে শ্যামপুর ও জুরাইন এলাকায় চাঁদাবাজির রাজত্ব কায়েম করেছেন স্থানীয় এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর। জুরাইন বাজারের কয়েকশ’ দোকান থেকে ওই কাউন্সিলরের সহযোগিরা প্রকাশ্যে চাঁদা তোলে। দু’সপ্তাহ আগে আলমবাগের এক স্কুলে স্মার্ট কার্ড বিতরণকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনায় এক মহিলা পুলিশকে লাঞ্চিত করে পার পেয়ে যান ওই কাউন্সিলর। তবে পুলিশ তার তিন সহযোগিকে গ্রেফতার করে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,  শ্যামপুর থানা এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণেও রয়েছে কচি গ্রæপের সন্ত্রাসীরা। উঠতি বয়সী সন্ত্রাসীদের কয়েকটি গ্রæপ শ্যামপুর এলাকা মাদকে সয়লাব করে ফেলেছে। ভুক্তভোগিরা জানান, শ্যামপুর থানার অলি-গলিতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হয়। এই মাদক ব্যবসার সাথে আবার সহিদ কমিশনারের লোকজনও জড়িত। তারা অনেকটা প্রকাশ্যেই মাদক ব্যবসা করে। অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান মন্ডল হত্যায় ১০ বছর সাজা খাটার পর উচ্চ আদালত থেকে খালাস পাওয়া সহিদ কমিশনার সেন্টু ও শাহাদত হত্যা মামলারও আসামী। আলোচিত দুটি হত্যা মামলা উচ্চ আদালতে এখনও বিচারাধীন। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগসহ আরও ডজনখানেক মামলা রয়েছে। ২০১৪ সালের ফেব্রæয়ারী মাসে গেন্ডারিয়ার ৩৩/বি/১, সতীশ সরকার রোডের নিজ বাসা থেকে চারটি অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন সহিদ কমিশনার। ভুক্তভোগিরা জানায়, সাধারণ মানুষের কাছে সহিদ কমিশনার এখনও মূর্তিমান আতঙ্ক। তার সহযোগিরা খুবই বেপরোয়া। সহিদের অতীতের কার্যকলাপকে পুঁজি করে তার সহযোগিরা মানুষকে ভয় দেখায়, জিম্মি করে চাঁদাবাজি করে। গেন্ডারিয়ার এক ব্যবসায়ী জানান, নিজের অতীত ইতিহাসকে আড়াল করার জন্য সহিদ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নাম ব্যবহার করে পোস্টারে ছেয়ে ফেলেছে পুরো এলাকা। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এতে বিব্রত হলেও কেউ ভয়ে মুখ খোলে না।
শ্যামপুরের মীরহাজিরবাগ এলাকার এক ব্যবসায়ী জানান, স্থানীয় এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সহযোগিরা তৎপর মীরহাজিরবাগ এলাকায়। চাঁদাবাজি, দখলদারিত্বের কারণে তাদের কাছে মানুষ জিম্মি। ক্ষমতাসীন দলের ওই কাউন্সিলরের দাপটের কাছে মানুষ অসহায়। অন্যদিকে, কদমতলী থানার শনিরআখড়া, কমিশনার রোড, কালা মিয়া সরদার রোড, ইটালী মার্কেট, মোহাম্মদবাগ, ওয়াসা পুকুর এলাকার মানুষ বিল্লাল ডাকাত বাহিনীর কাছে জিম্মি। এক সময়ের কুখ্যাত ডাকাত বিল্লালের সন্ত্রাসী বাহিনী চাঁদাবাজি ছাড়াও প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা করে। বিল্লালের ভাই ইমরান মাদক ব্যবসা দেখাশোনা করে। বিল্লাল ছাড়াও শ্যামপুর শিল্পাঞ্চলের আতঙ্ক কালা আমীর বাহিনী। ভুক্তভোগিদের মতে, ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী কালা আমীরের নাম শুনলে এখনও শ্যামপুর-কদমতলীর মানুষ আঁতকে ওঠে। চাঁদাবাজির জন্য কালা আমীরের রয়েছে উঠতি বয়সীদের নিয়ে গড়া একাধিক গ্রæপ। এরা কথায় কথায় মানুষকে ভয় দেখাতে বা লাঞ্চিত করতে দ্বিধা করে না। ভুক্তভোগিরা জানান, এলাকায় বাড়ী বানালে, ভাড়া নিলে এমনকি নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ নিলেও কালা আমীরের বাহিনীকে চাঁদা দিতে হয়।
অপরদিকে, পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, ইসলামপুর, সদরঘাট, বংশাল, কোতয়ালী, চাঁদনীচকসহ আশপাশের এলাকায় এখনও আতঙ্ক ডাকাত শহীদ গ্রæপের সন্ত্রাসীরা। সূত্র জানায়, ডাকাত শহীদের সহযোগীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পুলিশের তালিকাভুক্ত। কিন্তু তারা কেউই ধরা পড়ে না। এদের মধ্যে অনিল বাবুসহ কয়েকজন আবার প্রতিনিয়ত ভারতে আসা যাওয়ার মধ্যে থাকে। ভুক্তভোগিরা জানান, র‌্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে ডাকাত শহীদ নিহত হলেও তার সহযোগীরা আগের মতোই ডাকাত শহীদের নাম ভেঙ্গে চলে।সূত্র জানায়, ডাকাত শহীদ গ্রæপের সন্ত্রাসীদের ছিনতাইয়ের ধরন দেখে বোঝা যায় এরা শহীদ গ্রæপের। এরা যা করার প্রকাশ্যে করবে। শত শত মানুষের সামনে করবে। এজন্য এরা দলে বিভক্ত হয়ে আগে থেকেই পরিকল্পনা করে। দিনের প্রথমভাগে এরা ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটায়। বিশেষ করে সাত সকালে মানুষ যখন অফিস বা দুরের কোনো যাত্রাপথে রওনা করে তখন এরা ওই সব যাত্রীর পথরোধ করে অস্ত্রের মুখে ছিনতাই করে। সূত্র জানায়, কুখ্যাত সন্ত্রাসী ডাকাত শহীদের এক সময়ের সহযোগীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রতিনিয়ত ভারত আসা যাওয়া করেন। চোরচাচলানীর সাথে জড়িত এসব আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের মধ্যে অনিল বাবুর নাম অনেকেরই জানা। এক সময় তিনি ডাকাত শহীদের হয়ে সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ করতেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উঠতি বয়সী সন্ত্রাসী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ